ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনমনের আশঙ্কা

হাইকমিশনারদের প্রত্যাহার করছে পাক-ভারত!

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৫ নভেম্বর ২০১৬

হাইকমিশনারদের প্রত্যাহার করছে পাক-ভারত!

পাকিস্তান ও ভারত সাম্প্রতিক কূটনৈতিক দুর্যোগককে কেন্দ্র করে তাদের সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনারদের আপাতত প্রত্যাহার করে নিতে পারে। দুদেশের রাজধানীতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে নিয়োজিত কোন কোন কর্মকর্তার গোপন তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার বলেছেন। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনলাইনের। সম্পর্কে নতুন করে এ বিপর্যয়ের কারণে দুপ্রতিবেশী দেশ তাদের কূটনৈতিক অফিসের মর্যাদা হ্রাসও করতে পারে। অধিকৃত কাশ্মীরে এক ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে সেপ্টেম্বরে হামলার পর সম্পর্ক এর মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। ভারতীয় পুলিশ গত সপ্তাহে নয়াদিল্লীতে পাকিস্তান দূতাবাসের এক কর্মকর্তাকে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলে এ বিবাদের সূত্রপাত হয়। কর্মকর্তা মাহমুদ আখতারকে পরে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়। মাহমুদ আখতার পাকিস্তানী দূতাবাসে ভিসা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত। তারপরও ভারত আখতারের কাছ থেকে দিল্লী পুলিশের জোর করে আদায় করা একটি বিবৃতি ব্যবহার করে পাকিস্তান দূতাবাসের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে। ভারতীয় মিডিয়ায় এ ধরনের কমপক্ষে ৬ কর্মকর্তার পরিচিতি ফাঁস করা হলে তাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পাকিস্তান নয়াদিল্লী থেকে তাদের প্রত্যাহার করে নেয়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসে নিয়োজিত ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যে, তারা ভারতের রিসার্চ এ্যান্ড এনালিসিস উইং (র) ও ইনটেলিজেন্স ব্যুরোয়ের (আইবি) এজেন্ট। একথা ফাঁস হওয়ার পর কথিত ঐ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প ছিল না নয়াদিল্লীর কাছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে জ্ঞাত এক কর্মকর্তা এ উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ন্যায়সঙ্গত ভাবেই ভারতকে দায়ী করেছেন। পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কর্মকর্তা এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেছেন যে, নয়াদিল্লীতে দূতাবাসে নিয়োজিত ওই কর্মকর্তাদের পরিচিতি প্রকাশ করে ভারত এক সমঝোতা শর্ত ভঙ্গ করেছে। কর্মকর্তা বলেন, দুপক্ষেরই কথা যে, কোন কোন কর্মকর্তা গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করে থাকেন এবং তারা তাই করেছেন স্বাগতিক দেশের সম্পূর্ণ জ্ঞাত অনুসারেই। তিনি বলেন, ভারত যা করেছে তা ভাবা যায় না। এ বিরোধের তাৎক্ষণিক এ প্রতিক্রিয়ায় হতে পারে যে, দুদেশ সাময়িকভাবে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেবে। তিনি বলেন, আরও একটি প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং তা হচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত দুদেশে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক স্টাফের সংখ্যা নামিয়ে আনা। ইতোমধ্যে, পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া তার সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেছেন যে, ভারতীয় দূতাবাসের ৮ কর্মকর্তা র ও আইবিয়ের এজেন্ট। এ কর্মকর্তারা হচ্ছেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা ও র-এর স্টেশন প্রধান রাজেশ কুমার অগ্নিহোত্রি। প্রথম বাণিজ্য সচিব অনুরাগ সিং, এ্যাটাশে ভিসা অমরদীপ সিং ভাট্টি, স্টাফ মেম্বার ধর্মেন্দ্র সোধি, স্টাফ বিজয় কুমার বর্মা, স্টাফ মাধবান নন্দ কুমার, প্রথম তথ্য সচিব ও তথ্য, আইবিয়ের স্টেশন প্রধান বলবীর সিং ও এ্যাসিস্টেন্ট পারসোনাল ওয়েলফেয়ার অফিসার জয়বালান সেনথিল। জাকারিয়া বলেন, এ কর্মকর্তারা কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের ছদ্মাবরণে পাকিস্তানে সন্ত্রাস নাশকতামূলক কর্মকা- সমন্বয়ে জড়িত থেকেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। মুখপাত্র বলেন, ভারত দুদেশের মধ্যেকার সম্পর্কে কূটনৈতিক আদর্শ ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। ভারত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ৬ পাকিস্তানী দূতাবাস কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তিনি ভারতের পদক্ষেপকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে অভিহিত করে বলেন, ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে তাদের নৃশংসতা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অংশ হিসেবে তারা এ কাজ করেছে। ইতোমধ্যে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বৃহস্পতিবার ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন। তিনি নিয়ন্ত্রণ রেখায় অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন।
×