ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেলিব্রেটি পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৫ নভেম্বর ২০১৬

সেলিব্রেটি পুলিশ

স্মিতা টান্ডি। কোন সেলিব্রেটি, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী বা বড় সরকারী আমলাও নন। তবুও ফেসবুকে তার ফলোয়ারের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। আর এই বিরাট সংখ্যায় ফ্যান ফলোয়ার হয়েছে দু’বছরের কম সময়ের মধ্যেই। স্মিতা টান্ডি ছত্তিশগড় পুলিশের এক নারী কনস্টেবল। ভারতের সবচেয়ে বড় ইস্পাত কারখানা যে শহরে, সেই ভিলাইতে কর্মরত তিনি। এই বিপুল ফ্যান ফলোয়ারকে তিনি কাজে লাগান দুস্থ মানুষকে সাহায্য করতে। যেমন শুক্রবার সকালেই তিনি একটি পোস্ট করেছেন; বিলাসপুর শহরের রাস্তায় যদি কাউকে ঠা-ার মধ্যে লেপ-তোষক ছাড়া শুয়ে থাকতে দেখেন কেউ, তাহলে তিনি যেন মোবাইলে খবর দেন। দ্রুত পৌঁছে দেয়া হবে লেপ-কম্বল। এছাড়াও গরিব রোগীদের চিকিৎসা, কোন শিশু হারিয়ে গেলে তার খোঁজ করা-সবই টান্ডি করেন ফেসবুকের মাধ্যমে। স্মিতা টান্ডি বলেন, আমার পোস্টগুলো দেখেই সম্ভবত এত মানুষ আমাকে ফলো করে থাকেন। আমি টাকা খরচ করে লাইক বা ফলোয়ার বাড়াইনি। মাত্র দুবছরেরও কম সময়ে ফেসবুকের মাধ্যমে টান্ডি সাধারণ মানুষকে সাহায্য করছেন। ২০১৩ সালে তার এই উদ্যোগ শুরু হয়। পুলিশের চাকরিতে ঢুকে যখন তিনি প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, সেই সময় তার বাবা মারা যান। তিনি বলেন, টাকার অভাবে ভাল চিকিৎসা করাতে পারিনি বাবাকে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে কারও অর্থের প্রয়োজন পড়লে আমরা সবাই মিলে তা যোগাড় করে দিতাম। এখন আমি ফেসবুক ব্যবহার করে সেই কাজটাই করি। বহু মানুষের কাছে খুব দ্রুত প্রয়োজনটা জানাতে পারি। তবে প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমরা যাচাই করে নিই। টান্ডি যে জেলায় কর্মরত সেখানকার পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট অমরেশ কুমার মিশ্র বলেন, আমি বুধবারই মাত্র জানতে পেরেছি যে ওর এত ফলোয়ার। সেটা তো ওর ব্যক্তিগত উদ্যোগ, এর সঙ্গে পুলিশের চাকরির কোন যোগ নেই। তবে ও যে সামাজিক মাধ্যমে খুব সক্রিয় আর টেকনিক্যাল স্কিল আছে খুব ভাল, সেটা জানতাম। এরকম কাউকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য খুঁজছিলাম। কিন্তু স্মিতা নিজেই এগিয়ে এসেছে। মাস তিনেক আগে দূর্গ পুলিশ কয়েকটি নারী সুরক্ষা দল গড়েছে। সাধারণ পোশাকে, সাধারণ গাড়িতে ওই নারী পুলিশকর্মী দলগুলো শহরে ঘুরে বেড়ায়। কোন নারী বিপদে পড়লে বা ইভটিজিংয়ের শিকার হলে পৌঁছে যায় দলটি। আর নারী সুরক্ষা দলের কাছে খবর পৌঁছানোর মাধ্যম হলো ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ বা টুইটার। পুলিশ সুপার মিশ্র আরও বলেন, এখনতো যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ফেসবুক। সামাজিক মাধ্যমে ভিলাই শহরের নারীরা কে কোন বিপদের কথা জানাচ্ছেন, তার ওপরে নজর রাখাটাই কনস্টেবল টান্ডির দায়িত্ব। ওর সঙ্গে আর একজন মাত্র সহকারী আছে। ওই খবর দেয় নারী সুরক্ষা দলের কর্মীদের যাতে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া যায়। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে বিশেষত ভিলাই শহরে ইভটিজিং একরকম বন্ধই হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। স্মিতা টান্ডি বলেন, আমার ফলোয়ারদের মধ্যে কেউ কেউ অসভ্যতাও যে করে না তা না। তবে খুব বেশি খারাপ কথা লিখলে তবেই আমি নজর দিই। আর তারপরে ওই লোককে ঠিক একটাই কড়া মেসেজ পাঠাই। তাতেই অসভ্যতা করা বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ এই সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস পেয়ে যে তিনি অভিভূত, সেটাও ফেসবুকে লিখতে ভোলেননি। বিবিসি অবলম্বনে।
×