ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর তৃতীয় স্প্যান মাওয়া পৌঁছবে দু’একদিনের মধ্যে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৫ নভেম্বর ২০১৬

পদ্মা সেতুর তৃতীয় স্প্যান মাওয়া পৌঁছবে দু’একদিনের মধ্যে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর তৃতীয় স্প্যান মাওয়ার পথে। ২/১ দিনের মধ্যেই চীনার বিশাল চালান মাওয়ায় পৌঁছার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার মংলা থেকে সুপার স্ট্রাকচারের তৃতীয় চালানটি রওনা হয়েছে। এর আগে পদ্মা সেতুর আরও দুই স্প্যান সুপার স্ট্রাকচার মাওয়ায় পৌঁছে। এগুলো মাওয়ার কুমারভোগে বিশেষ ওয়ার্কসপে ফিটিং এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। তাই এখন তৃতীয় চালানটি আসছে। এভাবেই চীনে তৈরি সুপার স্ট্রাকচার পর্যায়ক্রমে মাওয়ায় পৌঁছবে। এদিকে ফিটিং করা স্প্যান ক্রেনে করে পিলারের উপর স্থাপন করতে উচ্চক্ষমতার ভাসমান ক্রেন এখন বঙ্গপোসাগরের কাছাকাছি। চার হাজার টন ধারণক্ষমতার ভাসমান এই ক্রেনবাহী মাদার সার্ভেলটি ভারতীয় মহাসাগরে রয়েছে। এটি বৈরী আবহাওয়ার কারণে মালেশিয়ার কাছে সমুদ্রে প্রায় চারদিন নোঙ্গর করেছিল। এটি নবেম্বরের মাঝামাঝি কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌঁছার কথা রয়েছে। গত ১২ অক্টোবর চীনের জোহাও থেকে মাদার ভার্সেলে করে রওনা হয়েছে। প্রতিটি স্প্যান (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) সরাসরি পিলারে বাসাতে হবে। এক একটি স্প্যানের ওজন প্রায় ২ হাজার ৯শ’ টন। আর চীন থেকে আসা ভাসমান ক্রেনের ধারণক্ষমতা চার হাজার টন। এদিকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্টে) কাজ চলছে পুরোদমে। এ পর্যন্ত ১২টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। সেতুটি জাজিরা প্রান্তে চলছে ভয়াডাক্টের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এদিকে পদ্মায় মূল পাইল স্থাপন নিয়েও কর্মব্যবস্থা রয়েছে। নতুন হ্যামার এবং নতুন হ্যামারে ক্রেন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। পদ্মার ৩৮ নম্বর পিলারে এখন পাইল স্থাপনের কাজ চলছে। ৩৭ নম্বর পিলার ইতোমধ্যেই প্রস্তুত রয়েছে। এখন ৩৮ নম্বর পিলার তৈরি সম্পন্ন হলেই হয় তো আগামী ডিসেম্বরে বা জানুয়ারিতে প্রথম সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) স্থাপন করা হবে। আর প্রথম স্প্যানটি ফিটিং চূড়ান্ত প্রায়। দ্বিতীয় স্প্যানটির ফিটিং প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের জনকণ্ঠকে শুক্রবার জানান, এই দ্বিতীয় স্প্যানটি স্থাপন হবে মাওয়া প্রান্তে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে। এই দুটি পিলারেই ৩টি করে পাইল স্থাপন হয়েছে গত বর্ষার আগেই। তীব্র স্রোতের কারণে মাওয়া প্রান্ত থেকে পাইল স্থাপন কাজ সরিয়ে নেয়া হয়েছিল জাজারি প্রান্তে। মাওয়া প্রান্তে এখন স্রোত কম। তাই এখন শুষ্ক মৌসুমে আবার এখানে কাজ ব্যাপকভাবে শুরু হবে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে নিয়োজিত ভারি নৌযানগুলো এই প্রান্তে আনতে সমস্যা হচ্ছে নাব্য সঙ্কটের কারণে। তাই মাঝের চরে এখন ড্রেজিং চলছে। শুধু মাওয়ায় আনা ছাড়াও ভারি ভারি নানা যন্ত্রপাতি আনা নেয়ার জন্য পদ্মা সেতুর এপার ওপারে নৌপথ সচল জরুরী। তাই ড্রেজিং করে নাব্য সঙ্কট নিরসন করা হচ্ছে দ্রুত। এদিকে বর্ষা মৌসুমে বন্ধ থাকার পর মাওয়া প্রান্তে আবার নদী শাসনের কাজ শুরু হচ্ছে। রবি বা সোমবার কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। সেই অনুযায়ী ড্রেজিং লাইন টানা হয়েছে। উচ্চ ক্ষমতার একটি ড্রেজারও মাওয়া প্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) সারফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, গত মাওয়া প্রান্তে ভাঙ্গনের ঝুঁকি কমে গেছে। মৌসুমে উজানে নদীর তলদেশে গর্ত তৈরি হয়েছিল সেখানে প্লাস্টিক বস্তা ফেলার পর ৮/১০ ফুট পলি পরেছে। তাই এখন ড্রেজিং করে সেখানে পাঁচ লেয়ারে ৮শ’ কেজির (২৫ মন) বস্তা ফেলা হবে। স্রোত তীব্র হলেও এই ভারি বস্তাগুলো সরাতে পারবে না। তাই স্রোত ভাটি দিয়ে যাবে। পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আর আঘাত করবে না। সেইভাবেই সার্ভে চলছে। সার্ভে শেষ হলেও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অনুমতি দেবে এবং রবি বা সোমবার নাগাদ কাজ শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ড্রেজিং করে নদীটির তলদেশটি ফ্লপ করা হবে। মাওয়া প্রান্তে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী শাসন হবে। এদিকে মাওয়া প্রান্তে বিপুলসংখ্যক ব্লক তৈরি করে রাখ হলেও এখনই ব্যবহার হচ্ছে না। নদীর তলদেশের নদী শাসনের কাজ করার পরই এগুলো ব্যববহার হবে। আর ব্লক রাখার জায়গা না থাকায় আর নতুন ব্লকও তৈরি করা হচ্ছে না আপতত। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ ব্লক প্রয়োজন হবে এখানে। ইতোমধ্যেই ৩২ লাখ ব্লক তৈরি করে রাখা হয়েছে। ব্লক রাখা জায়গা না থাকা এবং ব্লকগুলো এখনই ব্যবহার করতে না পরায় ব্লক তৈরির মেশিনগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীর সেøাপে তিন লোয়ারে ১২৫ কেজির বস্তা ফেল হবে। বস্তার ওপর ব্লক ও পাথর ফেলা হবে। এগুলো সেটেল হওয়ার পরই বিপুল পরিমাণ ব্লক ব্যবহার করা সম্ভব হবে। পদ্মা নদীর রয়েছে নানা বৈচিত্রতা। তাই এসব কিছু মোকাবেলা করেই নদীকে যথাযথ শাসন করা এবং পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
×