ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চালান যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে

কক্সবাজারের গহীন এলাকায় অস্ত্র তৈরির কারখানা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৫ নভেম্বর ২০১৬

কক্সবাজারের গহীন এলাকায় অস্ত্র তৈরির কারখানা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কক্সবাজারের পাহাড়ী এলাকার গহীন অরণ্যে রয়েছে দেশীয় অস্ত্র তৈরির কারখানা। ফলে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছে অস্ত্রের চালান। এসব দেশীয় অস্ত্রের চালান আসছে কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে। গহীন অরণ্যে গড়ে তোলা কারখানায় তৈরি হচ্ছে দেশীয় অস্ত্র। এর মধ্যে বেশির ভাগই এক থেকে দেড় ফুট লম্বা এলজি কিংবা ওয়ান শুটারগান। বিভিন্ন সময় র‌্যাবের অভিযানে এসব অস্ত্র গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার ছাড়াও অবৈধ ব্যবহারকারী ও সরবরাহকারী এমনকি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতার আনলেও পালিয়ে থাকারাই এ পথে চলে আসে পালাক্রমে। কক্সবাজারে অস্ত্র তৈরি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে। এসব অস্ত্র তৈরি হচ্ছে উখিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, মগনামা ও চকরিয়া এলাকার গহীন অরণ্যে। গহীন অরণ্যকে ঘিরে এসব অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠার পেছনে মূল কারণ হলো সন্ত্রাসীদের অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আঁচ করতে না পারা। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের টিম উখিয়া থানাধীন চুয়াংখালী এলাকার গহীন পাহাড়ী জঙ্গলে অভিযান পরিচালনা করে। গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে পরিচালিত প্রায় ৩ ঘণ্টার অভিযানে অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে ৬টি এসবিবিএল, ১টি ওয়ান শুটারগান, ৩টি পিস্তলের অংশবিশেষ, ৪ রাউন্ড কার্তুজ এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র তৈরির মেশিনের মধ্যে ছিল একটি ড্রিল মেশিন, ২টি হাতুড়ি, একনালা বন্দুক তৈরির পাইপের অংশ ১০টি, এয়ার মেশিন ১টি, স্লাইরেন্স ১টি, হেস্কোব্লেড ৮টি, করাত ১টি, রেত ২টি, স্ক্রু ড্রাইভার ২টি, প্লাস ২টি এবং গ্রিভ স্পেনার ১টি। গ্রেফতার করা হয় অস্ত্র তৈরির মেকানিক আবুল হাশিমকে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হাশিম জানিয়েছে সে অবৈধ অস্ত্র তৈরির সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে জড়িত। র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে ৪ নবেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের অভিযানে সর্বমোট ১২৪টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একে-২২, এসএমজি ১টি, বিদেশী পিস্তল ২৫টি, দেশী পিস্তল ৩টি, বিদেশী রিভলবার ২টি, এসবিবিএল ৩৪টি, ডিবিবিএল ১টি, শটগান ১টি, ওয়ান শুটারগান ৪৭টি এবং কাটা রাইফেল ১টি। এছাড়াও ৩১টি ম্যাগাজিন, ৩ হাজার ৬১৬ রাউন্ড গুলি বা কার্তুজ, ৬১ রাউন্ড খালি খোসা, ১৫টি ককটেল এবং ১৯টি রকেট ফ্লেয়ার উদ্ধার করেছে। কক্সবাজারে র‌্যাবের বিভিন্ন অভিযান ও অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান প্রসঙ্গে সিনিয়র এএসপি মোঃ সোহেল মাহমুদ শুক্রবার জনকণ্ঠকে জানান, মূলত কক্সবাজারের উখিয়া, মহেশখালী ও মগনামা এলাকায় দেশীয় অস্ত্র তৈরির কারখানা রয়েছে। কিছুদিন পর পর এসব কারখানা গর্জে উঠে অতি গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার পর কিছুদিন তারা গা ঢাকা দেয়। তবে গহীন অরণ্যের কারণে দেশীয় অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে কক্সবাজার এলাকায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার কক্সবাজারের পেকুয়া এলাকার মগনামাস্থ আফজুলীয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের মুরগীর খামারের পার্শ্বে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাত সোয়া দুইটার দিকে সিনিয়র এএসপি মোঃ সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে মোহাম্মদ হাসেমকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেহ তল্লাশি করে একটি ওয়ান শুটারগান, একটি কার্তুজ ও দশমিক ১২ বোরের পিস্তলের গুলি উদ্ধার করা হয়। সে ওই এলাকার ওসমান গনির ছেলে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তার মুরগীর খাবার মজুদ কক্ষ থেকে ১টি এসবিবিএল, ২টি ওয়ান শুটারগান এবং দশমিক ১২ বোরের পিস্তলের ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় ৩টি মামলা রয়েছে। এদিকে গত ১৮ অক্টোবর চকরিয়া থানাধীন বরইতলী ইউনিয়নের মছনিয়াকাটাস্থ পেকুয়া মগনামা সড়কে প্রহরচাদা ব্রিজ এলাকায় রাত দেড়টার দিকে মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিনের কাছ থেকে ১টি এসবিবিএল, ১টি ওয়ান শুটারগান এবং ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। সে মছনিয়াকাটা এলাকার মৃত কালু মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় অস্ত্র আইনে আরও ২টি মামলা রয়েছে। র‌্যাবের আরেক অভিযানে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে মহেশখালী থানার শীর্র্ষ সন্ত্রাসী ফজল কাদের প্রকাশ ফজইল্যা ডাকাতের কাছ থেকে ১টি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়। পড়ে তার থাকা অবস্থা থেকে ৭টি এসবিবিএল, ৩টি ওয়ান শুটারগান এবং ২১ রাউন্ড কার্তুজ র‌্যাব সেভেনের হাতে তুলে দেয়। সে স্থানীয় মুহুরী ঘোনা এলাকার মৃত হাজী হোসাইনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মহেশখালী ও চকরিয়া থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অন্যান্য ধারায় সর্বমোট ১১টি মামলা রয়েছে। কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানাধীন টইটং ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার দক্ষিণ সোনাইছড়ি গ্রামের ধনিয়াকাটা বটতলা বাজার এলাকায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে নুরুস শফিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা স্কুল ব্যাগে ৫টি ওয়ান শুটারগান এবং ৮ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজারের মহেশখালীর কেরুনতলী এলাকায় একটি মৎস্য খামারের অভ্যন্তরে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ ও বিক্রির সন্ধান পায় র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ শাহজাহানের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪টি এসবিবিএল, ৩টি ওয়ান শুটারগান, ১৫ রাউন্ড শটগান ও ৩ হাজার ৪০০ রাউন্ড এয়ারগানের গুলি। শাহজাহানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মহেশখালী এলাকায় হত্যা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, অস্ত্র, অপহরণ মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত শাহজাহান কুখ্যাত এনাম বহিনীর সদস্য এমন তথ্য উঠে এসেছে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে।
×