ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির কমিটিতে শূন্যপদ পূরণের চাপ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৫ নভেম্বর ২০১৬

বিএনপির কমিটিতে শূন্যপদ পূরণের চাপ বাড়ছে

শরীফুল ইসলাম ॥ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জাতীয় কাউন্সিল করে দ্রুত কমিটি দেয়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্য পদ পূরণের জন্য দলের ভেতর চাপ বাড়ছে। বিষয়টি দলীয় হাইকমান্ড গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ায় শীঘ্রই শূন্য পদ পূরণ হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির ৩টি পদসহ বিএনপির ৫৯১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন অন্তত ৫০ পদ শূন্য রয়েছে। শীঘ্রই এই পদগুলো পূরণ করা হচ্ছে। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে ৪ মাস পর ৬ আগস্ট ৫৯১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার সময় স্থায়ী কমিটির ২টি পদসহ কটি পদ খালি রাখা হয়। নতুন কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পদ বঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় নেতারা ক্ষুব্ধ হন। কমিটি ঘোষণার পরপরই এ কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদত্যাগ করেন। এর পর ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ‘ইকোনো কামাল’ হিসেবে পরিচিত জিকিউ গ্রুপের মালিক মাগুরার কাজী সালিমুল হক কামাল। নির্বাহী কমিটিতে কোন পদ না পেয়ে ১১ আগস্ট রংপুর জেলার সহসভাপতি ও বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য পরিতোষ চক্রবর্তী দল থেকে পদত্যাগ করেন। আরও ক’দিন পর পদত্যাগ করেন স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা। এবারের জাতীয় কাউন্সিলে এক নেতার এক পদ বিধান চালু করায় জেলা বা অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ পদ ধরে রাখতে ক’জন নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ মারা যাওয়ায় স্থায়ী কমিটিতে আরও একটি পদ শূন্য হয়। এসব শূন্য পদ পূরণসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন করে আরও ক’জন নেতাকে স্থান দেয়া হচ্ছে। এসব পদ পেতে লবিং করছে দলের অর্ধশতাধিক নেতা। তারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং লন্ডন প্রবাসী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানামুখী চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমেও লবিং করছেন। প্রসঙ্গত, নতুন কমিটি ঘোষণার পর স্থায়ী কমিটিতে নিজের নাম না দেখে বিএনপির কয়েক সিনিয়র নেতা ক্ষুব্ধ হন। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করে তার ক্ষোভের কথা জানান। অন্য ৩ ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন পরোক্ষভাবে তাদের ক্ষোভের কথা জানান। এর বাইরেও আরও কয়েক সিনিয়র নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে না পেরে অসন্তুষ্ট হন। বিক্ষুব্ধদের মধ্যে স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে আব্দুল্লাহ আল নোমান ও মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় হয়েছেন। তাদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ সিনিয়র নেতাদের মধ্য থেকে আরও একজনকে নিয়ে স্থায়ী কমিটির শূন্য ৩টি পদ পূরণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, শীঘ্রই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে। তবে শূন্য পদে যোগ্য নেতাদেরই স্থান দেয়া হবে। কারণ, শূন্য পদ পাওয়ার মতো যোগ্য নেতা বিএনপিতে অনেক আছেন। তবে কারা শূন্য পদে স্থান পাবেন এবং কবে তা ঘোষণা করা হবে তা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জানেন। আমরা তাকে দায়িত্ব দিয়েছি তাই তিনিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রয়োজন মনে করলে বিএনপি চেয়ারপার্সন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও পদ বাড়াতে পারবেন এবং সেখানেও কাউকে কাউকে নিয়োগ করতে পারবেন। ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাঁকজমক জাতীয় কাউন্সিল করে সঙ্গে সঙ্গে ৮১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে। এতে সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়। আর বিএনপি ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিল করে এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে না পারায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবিলম্বে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদ পূরণ করতে হাইকমান্ডের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি হাইকমান্ডও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শূন্য পদ পূরণ করতে তৎপর হয়। ইতোমধ্যেই সকল শূন্য পদ পূরণ করতে নেতাদের একটি তালিকা ঠিক করা হয়েছে। শীঘ্রই তা ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, শূন্য পদগুলো পূরণের ক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পায়নি এমন নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। আর মূল কমিটির বাইরে অন্তত ২ডজন উপকমিটি করা হচ্ছে। এসব উপকমিটিতে স্থান পাবে দুই শতাধিক নেতা। এরা কেন্দ্রীয় নেতার মর্যাদা পাবেন। যাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপকমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে তাদের একটি খসড়া তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকা নিয়ে লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গেও কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ১৯মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এক নেতার এক পদ বিধান চালু করায় নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় ৩০ জনকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পদ ছেড়ে দিতে হয়েছে। আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় কমিটির পদ ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। জেলা কমিটির শীর্ষ পদ পাওয়ার আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতেও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা পদত্যাগ করতে পারেন বলে জানা গেছে। এদিকে পদবঞ্চিত কিছু নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের ঠিকানায় চিঠি পোস্ট করে বিগত দিনের আন্দোলনে তাদের অবদানের কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ পুলিশের হাতে নির্যাতনের ছবি এবং বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়া সংক্রান্ত ডকুমেন্টও পাঠিয়েছেন। আর এসব ডকুমেন্ট দেখে সিনিয়র নেতারাও তাদের প্রতি ধারণা পেয়েছেন। তাই তাদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়ার বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ডও আন্তরিক রয়েছেন। এ ছাড়া পদ না পাওয়ায় কয়েকজন সংস্কারপন্থী নেতাকেও এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
×