ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাবিতে মেলা

হরেক রকম প্রজাপতি- ওড়াউড়িতে মুগ্ধ দর্শনার্থী

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৫ নভেম্বর ২০১৬

হরেক রকম প্রজাপতি- ওড়াউড়িতে মুগ্ধ দর্শনার্থী

দীপঙ্কর দাস ॥ প্রজাপতিটা যখন তখন, ডানা মেলে, উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে, চলে রাঙা মেঘের মতন... প্রজাপতির এমন উড়ে বেড়ানো দেখতে দারুণ লাগে। শুক্রবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রজাপতিপ্রেমীরা ভিড় জমিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে। সকাল থেকেই হাজারো শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকরা ক্যাম্পাসে ছুটে আসে। মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। দিনটি প্রজাপতিময় করে তুলতে ৮০ প্রজাতির কয়েক হাজার প্রজাপতির সমাবেশ করা হয় মেলায়। জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে স্থাপন করা মশারি দিয়ে তৈরি প্রজাপতির ঘরে নানা রঙের প্রজাপতি দেখে শিশু মাঈশার হৈ চৈ, উল্লাস শুরু হয়। তার আনন্দ ছিল দেখার মতো। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র দিগন্ত জানায়, পত্রিকায় প্রজাপতি মেলার খবর পড়ে এ মেলায় আসার জন্য সে তার মাকে রাজি করিয়েছে। শুক্রবার সকালটি তার ভীষণ ভাল লাগছে। কত সুন্দর সুন্দর প্রজাপতির এখানে দেখা মিলেছে। ঢাকার মহাখালী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র নিসর্গ তার মার সঙ্গে এসেছে প্রজাপতি মেলায়। শুধু দেখেই তার মন ভরেনি, নিসর্গ প্রজাপতিগুলো বাসায় নিয়ে যেতে চায়। মেলায় ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম ইসহাক বলেন, অনেক দিন ক্যাম্পাসে আসা হয় না। ছুটির দিনে ক্যাম্পাসে প্রজাপতি মেলার খবর পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করিনি। ভালই লাগছে প্রজাপতির উড়াউড়ি ঘোরাঘুরি দেখতে। ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ সেøাগান ধারণ করে জাবিতে সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘প্রজাপতি মেলা-২০১৬’। শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধনকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে প্রজাপতি ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আছে। প্রজাপতির সৌন্দর্য মনকে আন্দোলিত করে। প্রজাপতির বাসযোগ্য পরিবেশে রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ এম ইসলাম, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার হাওলাদার, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন চত্বরে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি এবং মেলার উদ্যোক্তা অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সমগ্র এশিয়ায় এটিই একমাত্র প্রজাপতি মেলা। প্রকৃৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতি এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের যেসব ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে সেসব তুলে ধরে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এ আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে এবারের মেলার সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিল ‘প্রকৃতি ও জীবন’ ফাউন্ডেশন, আইইউসিএন, এনসিআই, ডব্লিউআরসি। শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা তুলে ধরার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কয়েকটি ক্যাটাগরিতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রজাপতি মেলায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা তুলে ধরে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এছাড়া প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এছাড়া ছিল ‘বাটারফ্লাই হাট’ জীবন্ত প্রজাপতির জীবন ও বংশবৃদ্ধি সম্পর্কে জানানোর জন্য এই হাটের আয়োজন করা হয়েছিল। মেলা শেষে সন্ধ্যায় জহির রায়হান মিলনায়তনে প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রজাপতির ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহ এবং প্রজাপতির বিষয়ে সচেতনতা তৈরি জন্য এবার মেলা থেকে ‘ইয়ং বাটারফ্লাই এ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন খান। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মনোয়ার হোসেনের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে জাবিতে প্রতি বছর অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ব্যতিক্রমী এই প্রজাপতি মেলা। প্রজাপতি নিয়ে কাজ করার সুবাদে অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন এখন ক্যাম্পাসে ‘প্রজাপতি স্যার’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। দৃষ্টিনন্দন এ পতঙ্গটির বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে অধ্যাপক মনোয়ার হোসেনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাশে তৈরি করা হয়েছে ‘প্রজাপতি পার্ক’। এ প্রজাপতি পার্কে কৃত্রিমভাবে প্রজাপতি প্রজনন ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে অবমুক্ত করা হয়। যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। মেলার আহ্বায়ক ড. মনোয়ার হোসেন জানান, ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রজাপতি নিয়ে প্রথম গবেষণার কাজ শুরু করি। দীর্ঘ ২১ বছর গবেষণা করে এ পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। প্রজাপতির নতুন নতুন প্রজাতির সন্ধান মিললেও দেশে প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। বনভূমি কমে যাওয়ায় প্রকৃতির এই অলঙ্কারটির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বাংলাদেশে প্রজাপতির সবক’টি প্রজাতির তালিকা তৈরির পাশাপাশি এদের সংরক্ষণে সরকারী-বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। তিনি বলেন, প্রজাপতির উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলো হলো প্লেন টাইগার, কমন ক্রো, প্লেম জুডি, ডিঙ্গি বুশব্রাউন, কমন ডাফার, এপফ্লাই, পি ব্লু, টাইনি গ্রাস ব্লু, ওয়েক ব্লু, কমন সেইলর, কমন রোজ, ব্লু মরমন, স্ট্রাইপড এ্যালবাট্রস, মটিলড ইমিগ্রান্ট, কমন গ্রাস ইয়েলো, স্ট্রাইপড পাইরট, মানকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি।
×