ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ জরুরী সভা

চীন জাপান ও সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৫ নভেম্বর ২০১৬

চীন জাপান ও সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ চীন, জাপান ও সৌদি আরবের সঙ্গে করা বিনিয়োগ-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এই তিন দেশের সঙ্গে করা বিনিয়োগ ও বাণিজ্য চুক্তিগুলোর বর্তমান অবস্থা, বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে আজ জরুরী সভা আহ্বান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ওই সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, গত কয়েক বছরে শুধু চীনের সঙ্গে প্রায় শতাধিক চুক্তি করা হয়েছে। এসব চুক্তির মধ্যে রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, কর্ণফুলী নদীর ওপর প্রস্তাবিত দ্বিতীয় রেল সেতু, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভায়া রামু ও রামু থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুনধুম পর্যন্ত প্রস্তাবিত ডুয়েল গেজের রেললাইন নির্মাণ এবং তৃতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি নেটওয়ার্কের সহায়তা প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এসব চুক্তির তেমন কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এ বাস্তবতায় এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ’১৪ সালের ২৫-২৮ মে জাপান সফরকালে এবং ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বেশকিছু চুক্তি স্বাক্ষর ও সমঝোতা স্মারক করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ’১৪ সালের ৬-১১ জুন গণচীন সফরকালে এবং চীনের রাষ্ট্রপতির এ বছর বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছর ৩-৬ জুন সৌদি আরবে দ্বিপাক্ষিক সফর করেন। এছাড়া তিনি গত ১৫-১৬ জুলাই আসেম সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য মালয়েশিয়া সফর করেন। ওই সময়ও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, চীন, জাপান, সৌদি আরব, ভারত ও কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চলছে। এ কারণে বিনিয়োগ-বাণিজ্য সংক্রান্ত যেসব চুক্তি করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ চীন সফরের সময়ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরালো করার লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি করা হয়। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী চীন প্রতি বছর বাংলাদেশকে ৩০০ মিলিয়ন চীনা মুদ্রা সহায়তা দেয়ার কথা, চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন এবং নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ, চট্টগ্রামে চাইনিজ ইকোনমিক এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট জোন নির্মাণে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য দুর্যোগকালে দ্বিতীয় দফায় ব্যবহৃত উদ্ধারকারী যন্ত্র ক্রয় ও ব্যবহারে সহায়তা ও কর্ণফুলী নদীতে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল নির্মাণে সমঝোতা স্মারক করা হয়। এছাড়া গত ১৪ অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ২৭টি নানা ধরনের চুক্তি এবং সমঝোতা হয়েছে। দুই দেশের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী ওই সময় চীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন খাতে ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। যদিও এর বেশিরভাগই অবকাঠামো খাতে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম এবং খুলনায় দুটি বড় তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, যার একেকটির ক্ষমতাই হবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে একটি টানেল তৈরির প্রকল্পেও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে চীন। এছাড়া একটি সার কারখানা, ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে চীনা অর্থ সাহায্যে। চীন বাংলাদেশের উপকূলে গভীর সমুদ্রে একটি বন্দর নির্মাণেও আগ্রহী ছিল। চীনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের ১৩টি চুক্তি হয়েছে। এই ১৩টি চুক্তিতে প্রায় এক হাজার তিন শ’ ষাট কোটি ডলার ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। দ্রুত আসবে জাপানের বিনিয়োগ ॥ সবকিছু ঠিক থাকলে জাপানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব হবে বাংলাদেশে। বিগ-বি ইনিশিয়েটিভের আওতায় বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে এ শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠবে। এক্ষেত্রে জাপানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের মধ্যে যাতে জাপানের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসতে পারে সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও মনিটরিং করার উদ্যোগ নিয়েছে। জাপানী শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য পাঁচটি ইপিজেডে ৪০টি শিল্প প্লট ও ২টি কারখানা ভবন সংরক্ষিত করা হয়েছে। এছাড়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে যেসব আলোচনা ও চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা বাস্তবায়নে ৩১ দফা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় জাপানের সঙ্গে ৭২০ কোটি ডলারের যে চুক্তি হয়েছে, তা বাস্তবায়নেও সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এছাড়া শেখ হাসিনার সফরে বাংলাদেশকে জাপান বড় ধরনের ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এ ঋণের অর্থে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে আছেÑ গঙ্গা ব্যারাজ, যমুনা নদীর নিচে টানেল, যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো শুধু রেলের জন্য আরেকটি সেতু, বহুমুখী ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস ও ঢাকার চারপাশে থাকা চার নদীর জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার মতো বৃহৎ অর্থায়নের প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোই বাছাই, সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও তদারকির জন্য যৌথ কাঠামো চাইছে জাপান। একই সঙ্গে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প ও রাজধানীতে মেট্রোরেল প্রকল্পেও অর্থায়ন করছে জাপান। বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব ॥ ভারত-চীন-জাপানের পর বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে এবার মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৪-৫ জুন সৌদি আরব সফর করেন। ওই সময় তার দুই দিনের সফরে বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উৎপাদনমুখী শিল্প ও অবকাঠামো খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দেশটি। আর এক্ষেত্রে সৌদি আরবের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বিদ্যুত-গ্যাস, ঢাকা-চট্টগ্রাম সুপার হাইওয়ে, মংলা ও পায়রা পোর্ট উন্নয়নসহ এরকম বড় বড় দশটি খাতে বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। সৌদি আরবের উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এলক্ষ্যে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সংগঠন জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল আগামী ৬ নবেম্বর ঢাকা সফরে আসছে।
×