ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাল তেল চিনি লবণের দাম কমছেই না ॥ বাজারে ফিরেছে ইলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ নভেম্বর ২০১৬

চাল তেল চিনি লবণের দাম কমছেই না ॥ বাজারে ফিরেছে ইলিশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেড়ে আর কমছে না অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। গত কয়েক মাস ধরে ভোক্তাকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, লবণ ও রসুনসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা কমলেও পাঁচ টাকা বেড়ে পুরান আলু বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকায়। ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বাজারে ফিরে এসেছে মাছের রাজা ইলিশ। তবে ব্রয়লার মুরগি ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রব্যমূল্য, পণ্য সরবরাহ এবং বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ব্যবসায়ীদের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমদানি করা ক্রুড লবণ দ্রুত দেশে এনে দাম কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মোটা চালের দাম কমছে না ॥ গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। বর্তমান প্রতিকেজি স্বর্ণা, চায়না ইরি এবং পায়জাম জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা। এক বছর আগে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৩২-৩৪ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে প্রায় ৬ টাকা বেড়েছে। মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরিব ও সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে। খোলা বাজারে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হলেও বাজারে এর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আর এক মাসের মধ্যে নতুন চাল ওঠা শুরু হবে। ওই সময় দাম কমতে পারে। ক্রেতা বেশি হওয়ার কারণে দেশে মোটা চালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এদিকে, বাজারে সরু মানের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫৬ টাকায়। মাঝারি মানের প্রতিকেজি চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে। কাপ্তান বাজারের মা ভা-ারের চাল বিক্রেতা মোঃ নুরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এক মাস ধরে বেড়ে আর চালের দাম কমছে না। মোকামে বেশি হওয়ার কারণে খুচরা পর্যায়েও চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। নতুন চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত বেশি দামে ক্রেতাকে পণ্যটি কিনতে হবে। চিনি বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে ॥ প্রতিকেজি খোলা চিনির বিক্রিমূল্য এখন ৬৭-৭০ টাকা। এই চিনির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে আবার ৭৫-৭৮ টাকায়। এক বছর আগে খোলা চিনি কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হয়েছে ৩৯-৪২ টাকা। অর্থাৎ ২৮-৩০ টাকা দাম বেড়েছে প্রতিকেজিতে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যটির দাম বাড়ায় স্বস্তি নেই ভোক্তার। ট্যারিফ কমিশন হিসেবে করে দেখেছে চিনির আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য খচর যোগ করলে কোনভাবেই দাম ৫৮ টাকার বেশি হতে পারে না। কিন্তু গুটিকয় ব্যবসায়ী ও মিল মালিকের কারসাজির কারণে পণ্যটির দাম বেড়ে আর কমছে না। অস্থির লবণের বাজার ॥ গত কোরবানির ঈদের আগে থেকে অস্থির আরেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য লবণের বাজার। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি প্যাকেট লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা। আয়োডিন যুক্ত খোলা লবণ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, টিসিবি। যদিও ঢাকায় খাওয়ার জন্য খোলা লবণের তেমন কোন চাহিদা নেই। তবে ট্যানারিসহ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে খোলা লবণের চাহিদা রয়েছে। এ কারণে গত কোরবানি ঈদের আগে ও পরে সরকার দু’দফায় আড়াই লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয় মিলমালিকদের। সেই লবণের পুরোটা এখনও দেশে এসে পৌঁছেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত লবণ আনার জন্য মিল মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই এসব লবণ দেশে আনা হবে। লবণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লাইটার জাহাজের সঙ্কটের কারণে মাদার ভেসেলের ভাড়া বেড়ে গেছে। এছাড়া সময়মতো লবণ আনার জন্য শিপমেন্ট সময় ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৪৫ দিন করার দাবি করেছে মিল মালিকরা। সরকার তাদের এই দাবিটি বিবেচনায় রেখেছে। একই সঙ্গে দেশে লবণের উৎপাদন পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছে সরকার। আবহাওয়াজনিত কারণে এ বছর লবণ উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে দ্রুত আরও এক লাখ টন লবণ আমদানি দেয়ার কথা বিচেনায় রাখা হয়েছে। চলতি নবেম্বর মাসের শেষ নাগাদ দেশে লবণ উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মিল মালিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে খোলা লবণ ২০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকায় লবণের দাম না কমার বিষয়টি সরকার পর্যালোচনা করছে। ইতোপূর্বে দু’দফায় আড়াই লাখ টন লবণ আমদানি করা হয়েছে। যার এক লাখ টন দেশে এসে পৌঁছেছে। আমদানিকারকদের দ্রুত লবণ দেশে আনার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া আরও এক লাখ টন লবণ আমদানির বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, লবণ খাওয়ার পাশাপাশি শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে। তাই আমদানির বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। ভোজ্যতেল ও ডালের দাম কমছে না ॥ বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেল ও ডালের দাম কমলেও দেশে তেমন কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দেশে তিন ধরনের আমদানিকৃত ভোজ্যতেল বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সয়াবিনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন বর্তমান বিক্রি হচ্ছে ৮৪-৮৬ টাকায়। এক বছর পূর্বে এই তেল ৭৫-৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬৫-৪৯৫ টাকা। এক বছর পূর্বে এই সমপরিমাণ তেল বিক্রি হয়েছে ৪৫০-৪৮০ টাকা। প্রতিলিটার খোলা পামওয়েল বর্তমান ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি হলেও এক বছর আগে ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে প্রতিলিটার পামওয়েল সুপার ৭২-৭৪ টাকায় বিক্রি হলেও এক বছর আগে ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হতো খুচরা বাজারে। দুর্বল বাজার মনিটরিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া জাত ও মানভেদে দেশে প্রতিকেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১৫০ টাকায়। এক বছর পূর্বে এসব ডাল সর্বোচ্চ ৯০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশে বর্তমান তুরস্ক, কানাডা, নেপাল থেকে আমদানিকৃত তিন ধরনের মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া মসলাজাতীয় পণ্য রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৯০ টাকায়। পণ্যটি এক বছর ধরে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে ইলিশ, শীতের সবজির দাম কমছে ॥ এদিকে, প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী, মেঘনা, পদ্মাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে আবারও ইলিশ শিকার শুরু করেছেন জেলেরা। শুক্রবার থেকে বাজারে আসতে শুরু করেছে ইলিশ, তবে পরিমাণে খুবই কম। এর ফলে তিন-চারদিনের মধ্যেই ইলিশের দাম আবারও কমে গিয়ে গরিব-মধ্যবিত্তের নাগালে আসবে বলে আশা বিক্রেতাদের। এছাড়া প্রকৃতিতে শীতের দেখা না মিললেও বাজারে আসছে শীতের সবজি। দামও আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে।
×