ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য মৎস্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৫ নভেম্বর ২০১৬

ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু বাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ। শুক্রবার ছুটির দিনে দেশের বেশিরভাগ জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ প্রতিবাদী নানা কর্মসূচী পালিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় মশাল মিছিল, সমাবেশ, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ দিনভর অন্তত ৫০টি সংগঠন পৃথক-পৃথকভাবে প্রতিবাদ জানায়। ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাম্প্রদায়িক হামলায় উসকানি, ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়া ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ দাবি করা হয়। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। পৃথক কর্মসূচী থেকে দাবি জানানো হয়েছে, হামলাকারী যে দলেরই হোক তাদের নামসহ রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করা হোক। সাম্প্রদায়িক হামলা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন দাবি তোলা হয়েছে কর্মসূচী থেকে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সমস্বরে উচ্চারিত হয়েছে, ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’। নাসিরনগরে যখন মন্ত্রী ছায়েদুল হক অবস্থান করছিলেন তখন বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফের একই এলাকার পাঁচটি হিন্দুবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় মৌলবাদী গোষ্ঠী। এছাড়া ঠাকুরগাঁও ও নেত্রকোনার কলমাকান্দায় মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় আরও বিক্ষুব্ধ হন প্রতিবাদকারীরা। ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। নেতৃবৃন্দ বলছেন, যে কোন মূল্যে মৌলবাদী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করতে হবে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্য নিয়ে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। কোন হামলাই বিচ্ছিন্ন নয়, পরিকল্পিত। এই প্রেক্ষাপটে সারাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি উঠেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও মন্দির ভাংচুরের প্রতিবাদে রাজবাড়ি, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, খুলনা, নেত্রকোনা, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, জয়পুরহাট, নড়াইল, মাদারীপুর, মাগুড়া, বাগেরহাট, ফেনী, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, জয়পুরহাট, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচী পালনের খবর পাওয়া গেছে। হামলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের উসকানি ছিল ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনার পেছনে সরকারী দলের নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য অন্যতম কারণ বলে মনে করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে দলটি। এদিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে আগামী ১৫-৩০ নবেম্বর দেশব্যাপী ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রচার ও প্রতিরোধ পক্ষ’ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সারাদেশে গ্রামাঞ্চলে ১ হাজার হাটসভা, শহরাঞ্চলে পথসভা/সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচী পালিত হবে। এছাড়া আগামী ৮ নবেম্বর সিপিবি-বাসদ জোটের উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হবে। একই দিন নাসিরনগরে সিপিবির উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এসব কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শনকারী সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সফরকারী সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না। আরও বক্তব্য রাখেন প্রতিনিধি দল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ কাফী রতন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, রফিকুজ্জামান লায়েক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সোহেল আহমেদ, জাতীয় পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেন রেজা, আবিদ হোসেন প্রমুখ। সেলিম বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এখন দেশের সামনে প্রধান বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, ঘর-বাড়ির ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। প্রশাসন সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সংগঠিত হয়ে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ার মাধ্যমে তাদের তা-ব চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এই তা-ব পাক-বাহিনীর বর্বরতাকে মনে করিয়ে দেয়। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবেলায় সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। উপরন্তু সরকারী দলের লোকজন উসকানি দিচ্ছে এবং হামলায় অংশ নিচ্ছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মোকাবেলায় সরকারের ওপর নির্ভর না করে জনগণকে তৃণমূল থেকে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুন্না বলেন, ধর্মীয় উসকানি, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সমাবেশ সংঘটিত হতে না দেয়ার পরিবর্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান, শাসকদলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মিছিলসহকারে সমাবেশে অংশ নিয়েছে এবং উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য দিয়েছে। সমাবেশ চলাকালে সমাবেশ স্থলের দুই-চারশ গজের মধ্যেই নাসিরনগরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগতরা হিন্দুদের বাড়ি আক্রমণ ও লুটপাট করা হয়। হামলা, লুটপাটের সময় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রীর নিস্পৃহতা, আক্রান্ত পরিবারগুলোর পাশে না দাঁড়ানো, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয়েছে বলে শাসানো ইত্যাদি আক্রান্তদের ক্ষুব্ধ করেছে। আক্রান্ত নারী, শিশুদের চোখে-মুখে এখন আতঙ্কের ছাপ। তারা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। রাতে ঘুমোতে পারছে না। সংবাদ সম্মেলন থেকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, কর্তব্য পালনে ব্যর্থ প্রশাসনকে অপসারণ করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা, আক্রান্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, রাষ্ট্রের দায়িত্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলো পুনর্নির্মাণ, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ এবং সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাতিল করার দাবি জানানো হয়। প্রগতিশীল লেখক সংঘ ॥ শান্তিনগরের পিবিএস মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংঘের কার্যকরী সভাপতি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাট্যকার রতন সিদ্দীকীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্মীয় উসকানি, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সমাবেশ সংগঠিত হতে না দেয়ার পরিবর্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও শাসকদলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মিছিলসহকারে সমাবেশে অংশ নেয়ার ঘটনাটি সকলকে বিস্মিত করেছে। এই বর্বর হামলা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সকলকে গ্রেফতার ও বিচার করতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের আগ্রাসনকে রুখে দিতে প্রগতিশীল লেখক-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তারা। দিনভর বিক্ষোভ-মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় ওই এলাকার সাংসদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। শুক্রবার রাজধানীতে এক কর্মসূচীতে মন্ত্রীর পদত্যাগের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেনের অপসারণ চেয়েছেন হিন্দু প্রধান বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। ওই ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের পর সড়ক অবরোধ করেন তারা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বলেন, ঘটনা ঘটার কয়েক দিন পরে মন্ত্রী ছায়েদুল হক এলাকায় গিয়েছেন। তিনি যাওয়ার পরেও সেখানে আবার হামলা হয়েছে। এতেই বোঝা যায় তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এই ঘটনায় তিনি মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ দাবি করলে উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সমস্বরে তার প্রতি সমর্থন জানান। তাপস বলেন, নাসিরনগরের ইউএনও চৌধুরী মোয়াজ্জেম ওইদিন সমাবেশের অনুমতি না দিলে এই হামলার ঘটনা ঘটত না। আমরা ইউএনওর অপসারণেরও দাবি জানাচ্ছি। ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ ওঠেছে। নাসিরনগরের ইউএনও মোয়াজ্জেম ও ওসি আবদুল কাদেরের উপস্থিতিতে একটি সমাবেশে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের পর ওই হামলা হয়। ওই ঘটনার পর সহস্রাধিক লোককে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে; গঠন করা হয়েছে তিনটি তদন্ত কমিটি। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে ফের একই এলাকায় পাঁচটি হিন্দুবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে মৌলবাদীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদ ও এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে মিলিত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ২০টি সংগঠনের নেতাকর্মী। সকাল ১১টায় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কদম ফোয়ারা হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে এসে বেলা ১২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় জুতা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের। ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র-যুব ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট, জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, প্রাণের ‘৭১, জাগো হিন্দু পরিষদের সহস্রাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীও বিক্ষোভে অংশ নেন। রমনা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (পেট্রোল) এস এম ইমানুল ইসলাম বলেন, বিক্ষোভকারীরা প্রেসক্লাবের সামনের একপাশের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে অন্য পাশ দিয়ে দ্বিমুখী যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারে নাসিরনগরে ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ চলছে। নিজ নিজ টাইম লাইনে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ দাবি করেছেন। শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ॥ নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির-বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে শাহবাগ মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একটি মিছিল দুপুরের আগে টিএসসি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে নাসিরনগরের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনে অংশ নেয়। পরে বেলা সোয়া ১২টার দিকে শাহবাগে এসে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। অবরোধের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড় হয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফেরার পথে ওই বিক্ষোভে আটকা পড়েন ক্ষমতাসীন দলের নেতা হানিফ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হানিফের গাড়ি থেকে একজন নেমে এসে গাড়িটি ছেড়ে দিতে বলছে বললে শিক্ষার্থীরা আপত্তি তোলে। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়ালে বিক্ষোভকারীরাও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় হানিফের গাড়িতে কয়েকজনকে লাথি মারতে দেখা যায়। কয়েকটি জুতাও এসে গাড়ির ওপর পড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। পরে হানিফ বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, নাসিরনগরে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছিল। সব গাড়িই আটকে গিয়েছিল। পরে আমি নেমে কথাবার্তা বলায় শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। শাহবাগে বিক্ষোভকারীদের সেøাগান ছিল ‘আমার ঘরে হামলা কেন/প্রশাসন জবাব চাই, আমার মন্দির ভাঙল কেন/ প্রশাসন জবাব চাই’। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাবে মানববন্ধন শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিল। সোয়া ১টার দিকে তারা চলে যাওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। মাহবুব-উল-আলম হানিফের গাড়ি আটকা পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ বলেন, অবরোধ চলাকালে উনার গাড়িও দাঁড়িয়েছিল। পরে উনি নেমে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে অংশ নেন। এদিকে সন্ধ্যায় শাহবাগে লেখক, শিক্ষক, আইনজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ মশাল মিছিলসহ বিক্ষোভ করে। দুর্বৃত্তের কালো হাত ভাঙতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবেÑ আবেদ খান ॥ সাংবাদিক আবেদ খান বলেছেন, যে অজুহাতে নাসিরনগরে ঘটনাটি ঘটেছে সে একই ঘটনা রামুতেও ঘটেছে। যেখানে সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে আমরা দেখেছি প্রত্যেকটি ঘটনার গল্প একই। প্রত্যেকটি ঘটনা বানানো। যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে তারাই এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নস্যাৎ করার ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তাদের খুঁজে খুঁজে শাস্তি দিতে হবে। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন আয়োজিত ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি এ কথাগুলো বলেন। যুব ইউনিয়নের সভাপতি যুবনেতা হাসান হাফিজুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক যুবনেতা হাফিজ আদনান রিয়াদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আজাদ হোসেন, ঢাকা মহানগরের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ। পরিকল্পিত ও বর্বরোচিত নির্যাতনের বিচার দাবি স্বজনের ॥ ঢাকায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরসহ কয়েকটি স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিত ও বর্বরোচিত হামলা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, বাড়িঘর লুটতরাজ এবং মন্দিরে ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকদের সংগঠন ‘স্বজন’-এর শতাধিক সাংবাদিক স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি অবিলম্বে সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে পরিকল্পিত এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং যে কোন মূল্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ নাসিরনগরের স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে সাংবাদিকবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরসমূহ পুনর্নির্মাণ ও পরিবারসমূহকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।
×