ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৪ নভেম্বর ২০১৬

কবিতা

মমি ও মর্মরিত ধ্বনি রাহমান ওয়াহিদ শিল্পী, তুমি দারুণ আঁকো, নিখুঁত পরিপক্বতায়। মুজিবের ধূমায়িত পাইপের দ্রোহী উদগীরণ নূর হোসেনের অবিস্মরণীয় খোলা বুক বিস্ফোরণ এমন কি মোনালিসা হাসির অবাক সিম্ফনিও তোমার রঙতুলিতে নিখুঁত হয়ে ওঠে, যেন তুমিই সদ্য জেগে ওঠা পিকাসো, অনন্য কাইয়ুম। সেই তোমার রঙতুলিটা এমন বিবর্ণ, ডিম শাদা কেন? আমার মুখের ফ্রিকোয়েন্ট বিবর্তনে বিব্রত কি তুমি? ধরতেই পারছো না চেহারাটার মমি ও মর্মরিত ধ্বনি। এখন যে আদলে দেখছো, শুয়োরের অনিন্দ্য মুখ তাকে আঁকতে গিয়েও আশ্চর্য খাবি খাচ্ছো তুমি। তারচেয়ে বরং রোমকূপ থেকে তিরতির বেরিয়ে আসছে যে ভালোবাসার ঘাম ঘাম শিশির ধোঁয়া তাকেই সযত্নে আঁকো হে সুপ্রিয় শিল্পী আমার। দেখেছো? তোমার তুলিটা এখন শিল্পিত রংধনু হয়ে ক্যানভাসের সীমানা ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে ভিন্ন এক অববাহিকায়, ফেনায়িত জলের দিকে। তুমি বরং ক্ষান্ত হও হে বরেণ্য। ভীষণ ক্লান্ত তুমি এখন। ** মূল্যবান বস্তু নাসরীন নঈম কৃপণরা গুপ্তধন লুকিয়ে রেখে আবার কখনো ভুলে যায়। বিছানার বালিশ ছিঁড়ে ফেঁড়ে প্রকৃতিকে তুলোময় করে-কিম্বা ঘরের রমণীকে চুলের মুঠি ধরে জনারণ্যে ঠেলে দেয়। ষাঁড়ের মত আক্রোশ আর আক্ষেপ বাড়তে থাকে বন্যার পানির মত- দমে দমে দোয়া ইউনূস পড়ে অশ্রুমতি মায়েরা। তাই মূল্যবান বস্তু এমন কারো হাতে দিতে নেই যে তার কোন মূল্যই বোঝে না। অনুভব না থাকলে বুকের ভেতরে শেকড়ের টান থাকে না। সব কিছু ভুলে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে আমার এখন একটাই ধ্যান- দেশপ্রেম। দেশ আমার জন্মভূমি। একটি পরিযায়ী পাখির মত। এই পাখিটার একটি পালক, মাদাপালক গেলবার আমার হৃদয়-উঠানে পড়েছিল- ওটাই এখন আমার সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু-বিশেষ। ** অরণ্যের অধিকার স্বপন নাথ প্লাজম সময় থেকে সিংবোঙ্গা জ¦লে, জ¦লে বিরসাইত পা-ুলিপি ঘরছাড়া বিরসা কাঁধে তার উত্তাপের ঝুলি দিকুদের ছায়া পড়েছে ওই গ্রামে, মেঘ ঘনিয়ে ঘোর নিয়ে আসে অন্ধকার; ধানক্ষেত, জল আর মুলুক নাচে তারপর মাকড়সার জাল নাচের মুদ্রায় খেয়ালি আঁধার, নিশ্বাসে লুপাট, সাপের মত লক লক করে দিকুদের লাঠিয়াল, দেবতার থালায় কেঁপে ওঠে যা কিছু আয়োজন, মন্দিরে বাজে পাখোয়াজ, আবার বিরসা সাজে, সুলুক গেছে দূরে নিভু নিভু জ¦লে সলতে; চিরল পাতার ফাঁকে লুকিয়ে থাকে বিরসাইত ধাম। ** তুমি মুহাম্মদ ফরিদ হাসান বিকেল থেকে রোদটুকু মুছে নিলে যা থাকে সেই বিষণ্ণতা নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে বহু বছর। যেখানে কিছুই ছিলো না সেখানে এখন হাটবাজার, মসজিদ, মানুষের আনাগোনা, চিৎকার-সেখানে এখন তোমার মতো অজস্র মেয়ে হেঁটে বেড়ায়। আমি মেঘ চাইতে যাইনি, পাতাকে বলিনি আরো সবুজ হও, গাঢ় সবুজ-আকাশকে বলিনি অতো নীল আমার বড় বিশ্রি লাগে-বলেছি তুমি মেঘ, পাতা আর আকাশ ভালোবাসো। ফুল থেকে ঘ্রাণ মুছে নিলে যা থাকে সেই শূন্যতা নিয়ে বিরান হয়েছি শতাব্দীর পর শতাব্দী, কুঁচকে গেছে দেহ, মুখে অগণন ভাঁজ-তবু এখানে, এই কোলাহলে দাঁড়িয়ে বলি-তুমি মেঘ, পাতা আর আকাশ ভালোবাসো।
×