ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া হায়দার

এ লে বে লে

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৪ নভেম্বর ২০১৬

এ লে বে লে

(পূর্ব প্রকাশের পর) ছেলে : এটা কিন্তু ঠিক হলো না। মেয়ে : হ্যাঁ ঠিক হলো না। নির্দেশক : ঠিক বেঠিক, এ্যাঁ! নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসো। ( তারা দাঁড়িয়েই থাকে) আই সে গো। কাঞ্চু : আবু সীনটা খুব মজার ছিলো রে। ছেলে ও মেয়ে তাদের আসনে ফিরে যায়। যাবার পথে নির্দেশকের রাগান্বিত চোখে তাকায়। একই সময়ে নির্দেশকও তার আসনে যেয়ে বসে। ছেলে : (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) চল যাই তাহলে। আর দেরি নয়। মেয়ে : কিন্তু বিয়েটা না সেরে গেলে... ছেলে : সে তো হবে ওখানে পালানোর পরে। মেয়ে : না হলে যে আমার কলঙ্ক হবে। ওখানের পাখিরা, ওখানের পশুরা, গাছপালা, আকাশ পাহাড় সমুদ্র সবাই যে আমার কলঙ্কগীতি গাইবে। আমি সইতে পারবো না। আমি কলঙ্কিনী হবো না। ছেলে : ওরাও প্রথমে পালিয়ে গিয়েছিলো... মেয়ে : না, ওরা প্রথমে কাজীর অফিসে... ছেলে : তার মানে তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে চাইছো না। মেয়ে : ওটুকু অবিশ্বাসের সুতো মেয়েদের হাতে রাখতে হয়। ছেলে : তোমার ওই সুতো-ফুতো আমি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবো। মেয়ে : (তাচ্ছিল্ল ভরা হাসিতে) অতো সহজ নয়। ছেলে : দেখতে চাও! এই দ্যাখো... (বলেই মেয়ের হাতব্যাগ হ্যাঁচকা টান দিয়ে তুলে নেয়।) নির্দেশক : (সঙ্গে সঙ্গে) স্টপ, স্টপ ইট।... এ সব কি করছো তোমরা? ছেলে : কেন আপনাকে তো বলেই ছি আমাদের নিজস্ব চরিত্রই আমরা করে যাবো। মেয়ে : এতো সুন্দর ইমপ্রো কখনো ভাবতে পেরেছিলেন? নির্দেশক : আমার নাটকের ঘটনায় সঙ্ঘাতের কারণ তোমাদের নিজস্ব প্রবলেম নয়, বুঝতে পেরেছো? মেয়ে : তাহলে আমাদের প্রবলেম মিটিয়ে তারপর না হয়... নির্দেশক : আমি নাটক বন্ধ করে দেবো। ছেলে : রাগ করছেন কেন? আপনি নিজের দিকটাই দেখতে চাইছেন, অন্যের সমস্যাও বিবেচনা করতে হয়। নির্দেশক : আগে আমারটা কেবল আমারটাই। তোমাদেরটা গোল্লায় যাক, আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কাঞ্চু : আবু (নির্দেশক তার দিকে তাকায়) শোন, ওদের অভিনয়ের কাজ ওদেরই করতে দে। নির্দেশক : কী? কাঞ্চু : হ্যাঁ ওদেরকেই তোর নাটক তৈরি করতে দে। না হলে... ওরা তোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে। (ছেলে ও মেয়েকে) তোমরা, তাই না? ছেলে : (বিভ্রান্ত হয়ে ) না,... মানে... ব্যাপারটা... কাঞ্চু : (মাথা ঝাঁকিয়ে) তাই হবে। তোমরা তাই হবে। তোমরা তাই হবে। নির্দেশক : কী? বিদ্রোহ? বিপ্লব? আমার বিরুদ্ধে? (হো হো করে হাসতে থাকে) ফুহ। কাঞ্চু : (নির্দেশককে ব্যঙ্গ করে Ñ) হ্যা হ্যা! ফুহ। মেয়ে : আপনার ঝগড়া যেন কি নিয়ে। নির্দেশক : ঝগড়া নয় সঙ্ঘাত। তোমাদের ভেতরে সিনেমা দেখা নিয়ে। ছেলে : সিনেমা! নির্দেশক : হ্যাঁ, ওই প্রসঙ্গেই তোমাদের সংলাপ, এ্যাকশন সব। ছেলে : সিনেমা নিয়ে ঝগড়া-ঝাঁটি বড়ো হাস্যকর। আপনি এমন তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে উত্তেজিত হবেন... কাঞ্চু : তুচ্ছ ব্যাপারটাই ও ভালো বোঝে, সিরিয়াস ব্যাপার স্যাপার... নির্দেশক : কাঞ্চু! মেয়ে : তারচেয়ে আমাদের নিজেদের ব্যাপার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ-তরুণী নারী-পুরুষের চিরন্তন সমস্যা। কাঞ্চু : আবু, ওদেরটাই জমে উঠছিলো রে। নির্দেশক : কিন্তু নাটক আমার। ওদের নয়। আমার নাটক নষ্ট করার অধিকার ওদের নেই। কাঞ্চু : তুই তো লিখিসই এখনো। আসলে তো লিখতেই জানিস না। নির্দেশক : তবু আমারই আইডিয়া। আমি ট্র্যাজেডি চাই। কাঞ্চু : সে আবার কি! নির্দেশক : শেষটা হবে করুণ, বেদনাদায়ক। বুকটা ব্যথার ভারে সুনসান করে উঠবে। গলার কাছে কি যেন একটা যন্ত্রণা দলা পাঁকিয়ে উঠবে। কান্না কান্না হয়ে যাবে কণ্ঠ। চোখের ভেতরে খড়কুটোর মতো কি যেন একটা খোঁচা দিতে থাকবে, অশ্রু গড়াতে যেয়ে মুক্তা হয়ে যাবে। ( কাঞ্চু হাততালি দিয়ে উঠে) কাঞ্চু! কাঞ্চু : তাহলে দ্যাখ ওরাই কি করে। নির্দেশক : (কাঞ্চুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে) বেশ (ছেলে ও মেয়েকে ) কিন্তু মনে রেখো আমি ট্র্যাজেডি চাই। ছেলে : তাইতো হবে। (মহিলাকে দেখিয়ে) ওই যে মেয়েটি সব ঘুছিয়ে আনলাম তারপর হলো না। মহিলা : সে দোষ আমার ছিলো না। মেয়ে : আামরও তাই (পুরুষকে দেখিয়ে) ওই যে ছেলেটি ওর বেলাতেও তাই হয়েছিলো। পুরুষ : আমাকে আবার জড়াচ্ছো কেন? মেয়ে : তোমাকে জড়ালাম? পুরুষ : জড়াচ্ছোই তো। নিশ্চয়ই তোমার উদ্দেশ্য ভালো নয়। মেয়ে : কি যা তা বলছো। মহিলা : যা তা আবার কী? নিশ্চয়ই আপনার অন্য মতলব আছে। ছেলে : আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করতে এসেছো কেন? তোমারও তাহলে অন্য মতলব আছে। মহিলা : আমার আবার কী? ছেলে : আমার এবারকার প্রেমেরও বারোটা বাজুকÑ আমি কি বুঝি না। পুরুষ : (মেয়েকে) তুমি ঠিক আমার সুখের সংসারে আগুন লাগাতে চাওÑ আমি কি বুঝি না। নির্দেশক : (বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায়) আপনারা আবার এর ভেতর নাক গলাচ্ছেন কেন? পুরুষ : আপনার নায়িকাই তো আমার রেফারেন্স দিলো। মহিলা : আপনার নায়কই তো আমার কথা বললো। নির্দেশক : (পুরুষ মহিলার দিকে এগিয়ে যায়।) তো কি হয়েছে। অডিয়েন্সের সঙ্গে ইন্টিমেসি করাটা ইনটিমেট থিয়েটারের জন্যে... পুরুষ : (ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়ায়) ইন্টিমেসি! আমাদের সঙ্গে? কি ভেবেছেন আপনি? নির্দেশক : আফটার অল, এটা তো নাটক ছাড়া কিছু নয়। পুরুষ : নাটক না ছাই! রসিকতার জায়গা পান না। নির্দেশক : কি বললেন? মহিলা : (উঠে দাঁড়ায়) আপনি চোখ রাঙাচ্ছেন কেন? নির্দেশক : (পুরুষ ও মহিলার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে) আমার নাটক সম্পর্কে এতো বড়ো কথাÑ ছাই, রসিকতা! কি বোঝেন নাটকের, এ্যাঁ? আপনাদের মতো অশিক্ষিত আনকালচার্ডদের জন্যে... নির্দেশকের সঙ্গে পুরুষ মহিলার বচসা শুরু হতেই ছেলে, মেয়ে, ওয়েটার ও মিউজিশিয়ান এগিয়ে আসে এবং বচসা উপভোগ করে। কাঞ্চু এগিয়ে নির্দেশক ও পুরুষ-মহিলার কাছে চলে আসে। নির্দেশককে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু নির্দেশক তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কাঞ্চু ক্ষুণœ মনে নিজের আসনে ফিরে যায়। পুরুষ : কি! দর্শকদের অপমান! অসহ্য! নির্দেশক : ভাবে আমার দর্শক, দর্শক বলেই ছেড়ে দেবো ভেবেছেন। মহিলা : অভদ্র, চাষা। চলো, দরকার নেই নাটক দেখার। নির্দেশক : যান না কেন? কে ঠেকাচ্ছে আপনাদের? পুরুষ : চলো। এখানে আর এক সেকেন্ডও না। যতো সব মূর্খদের বাহাদুরি। (তারা সবেগে বেরিয়ে যায় মহিলা তার হাত ব্যাগ নেয় না।) নির্দেশক : এ্যাঁ, নিজেরা খুব বুদ্ধিজীবী! এজন্যই তো.. কাঞ্চু : এই আবু, দর্শক হলো খদ্দের আর খদ্দের হলো লক্ষ্মী। তুই ওদের চটালি। নির্দেশক : যেতে দে বয়েই গেলো। এমন অনেক আসবে। নিজ আসনে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ছেলে, মেয়ে ও মিউজিশিয়ানকে দেখতে পায় ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। মিউজিশিয়ান দ্রুত তার আসনে যেয়ে বসে। ছেলে : শুনুন ঘাবড়াবেন না, ট্র্যাজেডিই হবে। কাঞ্চু : না হলে তখন তুলকালাম বাঁধিয়ে দিস, নাটক বন্ধ করে দিস। নির্দেশক ক্ষুব্ধ মনে যেয়ে বসে পড়ে। ছেলেও মেয়েও তাদের আসনে যেয়ে বসে। মহিলা হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসে তার হাত ব্যাগ নেবার জন্য। ব্যাগটি নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে বেরিয়ে যায়। মেয়েও পাল্টা মুখ ঝামটা দেয়। ছেলে : (কিছুক্ষণ পরে) তাহলে? মেয়ে : তাহলে? ছেলে : চলো যাই। মেয়ে : কোথায়? ছেলে : সিনেমায়। মেয়ে : না। ছেলে : পার্টিতে। (চলবে)
×