ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী

দেখে আসুন বেজিং

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৪ নভেম্বর ২০১৬

দেখে আসুন বেজিং

এবার খোদ চীনের বেজিংয়ে ৫ দিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইউনেস্কো ক্লাবের কংগ্রেসে যোগ দেয়ার পাশাপাশি চীনের অর্জন, অভিজ্ঞতা, সফলতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। দেখেছি চীনের সরকার ও জনগণের মধ্যে উন্নয়নের চিন্তাধারা। চীনারা কোন কিছু নষ্ট বা ভাঙতে বিশ্বাস করে না, তাদের নতুন নতুন তৈরি বা নির্মাণে আগ্রহ দেখে আমি নিজেই অভিভূত। বেজিং শহরটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তার পরও কর্র্তৃপক্ষ সকাল-বিকেল পর্যন্ত লোকজন রেখে শহরটির সৌন্দর্য বর্ধনে চেষ্টা চালায়। পাশাপাশি পানি দিয়ে রাস্তা ধোলাই করছে। শহরের কোথায়ও রাস্তার ওপর ডাস্টবিন বা ময়লা-আবর্জনার কোন স্তূপ দেখিনি। তবে বেজিং শহরটির রাস্তারঘাট এত বড় বড় দেখে প্রশ্ন রেখেছিলাম স্থানীয় জনগণের কাছে। তাদের কথা ভূমিকম্পসহ যে কোন বিপদে সড়ক ও যোগাযোগে গুরুত্বের কোন বিকল্প নেই। সে জন্য যত বড় রাস্তাঘাট তত দ্রুত উদ্ধার করার কাজ সহজ হবে বলে তারা মন্তব্য করেন। লাখ লাখ লোক প্রতিদিন মেট্রো সাবওয়ে দিয়ে যাতায়াত করে বলে বেজিং শহরে তেমন কোন যানজট নেই। তারপর বিশাল বিশাল রাস্তাঘাট চীনের রাজধানীকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে। বেজিং সিটিতে ১ কোটি ২৫ লাখ লোকের বসবাস থাকা সত্ত্বেও আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা সত্যিই প্রশংসনীয়। টাকার মান চীনের অনেক বেশি। আমাদের দেশে এক শ’ ডলারের বিপরীতে আট হাজার টাকা পাওয়া যায় আর চীনে এক শ’ ডলারের বিপরীতে মাত্র কম-বেশি ছয় শ’ টাকা পাওয়া যায়। জিনিসপত্রের দাম অত্যধিক। সর্বক্ষেত্রে চীনের অভিজ্ঞতা আমাদের দেশে কাজে লাগাতে পারলে নিশ্চয়ই একদিন আমরাও চীনের থেকে কোন অংশে কম হব না। তবে চীনা মহিলাদের কঠোর পরিশ্রম এবং কাজের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস দেখে আমি নিজেই হতবাক পুরুষের থেকে চীনা মহিলাদের সর্বক্ষেত্রে পারদর্শী মনে হলো। বিনোদনের জন্য বেজিং শহরের খোলা জায়গা বা মাঠে বিকেল-সন্ধ্যা ও রাতে ছেলে-মেয়ে, বুড়ো-বুড়ি সবাই নেচে-গেয়ে আনন্দ ও বিনোদনের মাধ্যমে যে ব্যায়াম করছে তা না দেখলে বোঝানো মুশকিল। বাসে-ট্রেনে সে দেশে বয়স্ক লোকদের কোন টিকেট লাগে না। বৃদ্ধ বা বয়স্ক লোকদের সে দেশের সরকারের দেখানো সম্মানে সত্যিই চীনারা খুশি। বেজিংয়ের অনেক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সামগ্রী দেখে আমি নিজেই আনন্দিত ও গর্ববোধ করেছি। চীনের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীর গ্রেট ওয়াল চমৎকার। যা না দেখে বেজিং ত্যাগ করা কোন পর্যটকের উচিত হবে না। বিশ্বে বেশ কয়েকটি ব্যস্ত রাজধানীর মধ্যে বেজিং অন্যতম। বিশাল এই রাজধানীতে যে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সবকিছু এ শহরে দেখতে পেলাম। আমাদের দেশের মতো কোথাও ভাঙ্গাচোড়া রাস্তাঘাট নেই। সে দেশের সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে জনসেবামূলক আচরণ সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা সর্বত্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টায় মগ্ন থাকে। নগরীতে কারও কোন কষ্ট না হয় সে দিকে দৃষ্টি দেয়াই তাদের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে বেজিং সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের মতামত। বেজিং শহরে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। সিটিতে অহরহ ট্যাক্সির কোন সঙ্কট নেই। তারপর স্বল্প পয়সায় বাসে যাতায়াত চমৎকার। মার্কেটিং করার অনেক জিনিসপত্রের দোকানপাট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থাকলেও দাম অনেক বেশি। তবে বেজিংয়ের সিল্ক স্ট্রিটের দোকানগুলোতে দামাদামি করে অনেক কম দামে জিনিসপত্র ক্রয় করা সহজ। নগরীতে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত মনোযোগী-যতœবান। বেজিংয়ের জাদুঘরে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানা ও দেখার সুযোগ করে দেয়।
×