ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদ;###;তৌফিক অপু

তিনি ছিলেন একজন ভাল মানুষও...

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৪ নভেম্বর ২০১৬

তিনি ছিলেন একজন ভাল মানুষও...

নতুন বর্ষ সংখ্যা তখন অন্যরকম দ্যুতি ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের লেখকের সম্ভারে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে নতুন পুরনো লেখকের মিশেল পাঠকদের অন্যরকম তৃপ্তি দিত। তবে কিছু কিছু লেখকের একটু বেশি উপস্থিতি অন্যান্য লেখকদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিত। তেমনি একজন লেখক (যিনি স্বনামে খ্যাত) বলে বসলেন, ‘ওদের লেখা কি একচেটিয়াই ছাপিয়ে যাবেন না আমরাও লেখার কিছু সুযোগ পাব।’ কথাটি একটু খোঁচা দেয়া হলেও মনে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করল। এরাও তাহলে নিয়মিত খেয়াল করেন নতুন বর্ষ সংখ্যাটি। সে সঙ্গে বাড়তি পাওনা হলো বিশেষ সংখ্যায় বড় মাপের লেখকদের লেখা দেয়ার আগ্রহ। বেশ রোমাঞ্চরই লাগছিল ব্যাপারটি। অনেকটা মৃদু হাসি মুখে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ষাটের দশকে সাড়া জাগানো ‘সন্ধানী’ পত্রিকার প্রকাশক গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদ। তাকে নিয়ে নতুন কোন পরিচয়ের পালক যুক্ত করার কিছু নেই। এক কথায় যদি বলা যায় তিনি আমাদের সাহিত্য জগতের একজন বন্ধু ও অভিভাবক। একটি প্রগতিশীল সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকা একটি দেশের সাহিত্য জগতকে কিভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে, সন্ধানী বুঝি তারই একটি প্রামাণ্য দলিল। বাংলাদেশের প্রতিথযশা এমন কোন কবি-সাহিত্যিক নেই যারা সন্ধানীতে লেখালেখি করতেন না। আপাদমস্তক সাহিত্য-সংস্কৃতিতে আচ্ছাদিত একজন মানুষ গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদ। স্মৃতিচারণ করছিলেন সদ্য চলে যাওয়া সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে নিয়ে। প্রসঙ্গে ফিরতেই তিনি বলেন, সৈয়দ শামসুল হককে নিয়ে অনেক কিছু বলার থাকলেও যে ঘটনাটি বলছিলাম সেটাই যদি ইতি টানি তাহলেই বোঝা যাবে উনি কতবড় মনের মানুষ ছিলেন। নতুন বর্ষ সংখ্যায় একজন বড় মাপের লেখক যখন লেখা দেবেন বলেও একদম শেষ সময়ে এসে জানালেন তিনি লেখাটি দিতে পারছেন না তখন অনেকটা মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা। এদিকে সবাইকে জানানো হয়ে গেছে কারা কারা লিখছেন, আর ক’দিন বাদেই সংখ্যা বের হবে এমন অবস্থায় একটা উপন্যাসের জায়গা কিভাবে পূরণ হবে এই চিন্তায় যেন ঘুম হারাম। কিছুতেই যখন উপায় বের হচ্ছিল না তখন একপর্যায়ে মনে হলো সংখ্যাটি এবারের মতো বন্ধ রাখাই সমীচীন। ঠিক এমনই এক বিমর্ষ সময়ে আমার কাঁধে হাত রেখে আস্বস্ত করলেন সৈয়দ শামসুল হক। তিনি জানালেন এই দুশ্চিন্তাটুকু তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে আমি যেন একটু নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাই। কত বড় মনের মানুষ ও দায়িত্ববান হলে এভাবে একজন মানুষ আরেকজনকে আস্বস্ত করতে পারে। সত্যিই আমাকে আর চিন্তা করতে হয়নি। কয়েকদিন পরিশ্রম করে চমৎকার এক উপন্যাস উপহার দেন তিনি। সেই স্মৃতি এখনও আমাকে ছুঁয়ে যায়। গুলিস্তানের কসবা রেস্টুরেন্ট ছিল আমাদের অন্যতম আড্ডার স্থল। ১৯৫৬ এর ২৩ জুন সন্ধানী পত্রিকা প্রথম বের করি। পত্রিকাটির শুরু থেকেই আমার সৈয়দ হকের সঙ্গে পরিচয়। সে সময় সন্ধানী ছাপতে প্রায়ই নাজিমুদ্দিন রোডে চিত্রালীর সম্পাদক পারভেজ ভাইয়ের বাসায় যেতাম। ভাল একটা সম্পর্ক ছিল তার সঙ্গে। একদিন তার বাসায় গেলে পারভেজ ভাই বলে বসলেন আজকে নাকি একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন। আমি তাকে খুব মানতাম। তাই কিছুক্ষণ বসে দেখলাম হাতে একটা পা-ুলিপি নিয়ে এক ভদ্রলোক সামনে এসে দাঁড়াল। পরিচয়পর্ব হতেই জানতে পারলাম তিনি সৈয়দ শামসুল হক। টুকটাক চেনাজানা হয়েছে তার মাত্র। আমিও একটু আধটু নাম শুনেছিলাম। কিন্তু সেভাবে হকের লেখা পড়ে ওঠা হয়নি। তাই জানার সুযোগ হয়নি কেমন মাত্রার লেখক সে। পারভেজ পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর অনুরোধ করলেন এই লেখাটা যেন সন্ধানীতে ছাপা হয়। সৈয়দ হকও বেশ আগ্রহ দেখিয়ে বললেন আমি আপনার পত্রিকার সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি অনেকটা সম্মতি জ্ঞাপন করেই ওখান থেকে উঠে আসি। বাড়ি ফিরে লেখাটি পরেই অন্যরকম এক ভাললাগা কাজ করল। সানন্দে ছাপিয়ে ফেললাম লেখাটা। বেশ ভাল একটা রেসপন্সও পেয়েছি। তখনই মনে হয়েছিল এই লেখক একদিন লেখক হয়েই বিদায় নেবেন। আমাদের মধ্যে সত্যিকার অর্থেই লেখক হতে পেরেছে কতজন? কিন্তু সৈয়দ শামসুল হকের সব্যসাচী উপাধিটা একেবারেই মানানসই একটা উপাধি। জানি না এমন লেখক আমাদের দেশে আর আসবেন কি না? তবে সৈয়দ হকের মতো আরও প্রাণবন্ত দু’একজন লেখক যদি আমাদের দেশে থাকত তাহলে সাহিত্যজগত কলেবরে বৃদ্ধি পেত। আমি তো মাঝে মধ্যেই তার লেখনীর তেজ দেখে অবাক হতাম। একটা মানুষ এত সেক্টরে কিভাবে সমান তালে লিখে যেতে পারে। সিনেমার জন্য কোন গান লিখল তো হিট হয়ে গেল। আবার কোন কবিতার আসরে নিজের লেখা কবিতা আবৃতি করে শোনানোর পর প্রশংসার ফুলঝুড়ি পড়ে যায় আসরে, কিংবা নতুন কোন উপন্যাস লিখছে তো মার মার কাট কাট। এখানেই যদি ক্ষান্ত হতো তাহলেও হতো, কিন্তু তা নয়, সমানে লিখে চলেছেন সিনেমার চিত্রনাট্য, মঞ্চ নাটকের জন্য গল্প তৈরি ইত্যাদি ইত্যাদি। কতটুকু প্রতিভাবান হলে একজন মানুষ সবগুলো ডালপালা সমান পুষ্টিগুণে ছড়িয়ে দিতে পারে। তবে একটা ব্যাপার আমি খেয়াল করেছি তার মধ্যে। সেটা হলো কোন ধরনের ভনিতায় সে অভ্যস্ত নয়। আমাদের দেশের বর্তমান সময়ের লেখক কবি কিংবা অভিনেতাদের এমন অবস্থা যে দু’একটা কাজ হিট হয়েছে তো কম্ম সাবাড়। ধারেকাছে ভেরাই কষ্ট। না জানি কত বড় সেলিব্রেটি, অনেকটা হাম্বড়া ভাব। সেদিক থেকে সৈয়দ হক অন্যরকম ছিলেন। এক একটি কাজ জনপ্রিয় হতে থাকে আর তার যেন দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। কিভাবে নিজের কাজের গুণগত মান আরও বৃদ্ধি করা যায়। প্রচুর পরিশ্রমী একজন মানুষ, কাজ জানা লোক এক কথায়, কিন্তু মুখের হাসি ম্লান হতে দেখিনি। এমন স্বপ্নচারী মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। বর্তমান সময়ে আমি পরিশ্রমী লেখক খুঁজে পাই না। যে কিনা তার লেখা গাঁথুনি শক্ত করতে দিন রাত উৎস খুঁজে বেড়ায়। সময়ের স্রোতে দিন বদলালেও সাহিত্যের উন্নতি সেভাবে হয়নি। অথচ অন্যান্য দেশে ঠিকই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধ তাদের সাহিত্যের পরিম-ল। সময়েরও একটা দাবি আছে, সে কারণেই এ সময়ে এসে হ্যারি পর্টার আজ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। নিজস্ব ঘরানার সঙ্গে সঙ্গে সময়ের চাহিদাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। তা না হলে পাঠক মুখ ঘুরিয়ে নেবে। আর আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোও যেন কেমন। শুধুই চাকচিক্যকে প্রাধান্য দিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণ করে থাকে। আমি তো মনে দীর্ঘদিন হলো সাহিত্য ভাবনা নিয়ে কোন অনুষ্ঠান টিভিতে দেখিনি। বড় একটা প্রচার মাধ্যম যদি এভাবে একটা সেক্টরকে প্রতিনিয়ত ইগনোর করে থাকে তাহলে সেটার প্রসার ঘটানো তো মুশকিলই বরং কোণঠাসা হওয়ার উপক্রম। এখন সাহিত্য অনেকটা দৈনিক পত্রিকা কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। তার পরও ধন্যবাদ পত্রিকাগুলো তো অন্তত এ ধারা অব্যাহত রেখেছে। রঙের স্রোতধারায় গা ভাসায়নি। সৈয়দ হক থাকতেও টিভি মিডিয়াতে দেখেছি দু’একটি অনুষ্ঠান হতে সাহিত্য নিয়ে। এখন মনে হচ্ছে সে হাল ধরার লোকটিও বুঝি টিকে নেই। তার অভাব প্রতিনিয়ত বোধ করছি। আমার দেখা মতে সৈয়দ হক এমন একজন লেখক যে সময়ের দাবি কে ধারণ করতে পারত। সেই ষাট-সত্তুর দশকে সন্ধানীতে তার লেখা ‘খেলারাম খেলে যা’ যেই না ছেপেছি ওমনি যেন ছিঁড়ে ফুড়ে যেতে লাগল। প্রচুর রেসপন্স পেতে থাকলাম। প্রকাশক হিসেবে আমাদেরও তো এক আত্মতৃপ্তি রয়েছে। সৈয়দ হক আমাকে সেই আত্মতৃপ্তি দিয়েছিল। আমাদের সার্বক্ষণিক আড্ডা হতো সাহিত্যকে কেন্দ্র করে। অথচ এখন সেই আড্ডার লেশ মাত্র চোখে পড়ে না। যাও বা দু’একটা দেখি, সেখানে শুধুই দলবাজি এবং চাটুকার কথা বার্তা। প্রকৃত সাহিত্য চর্চা আর নেই। আর সাহিত্যের সেবক সে তো এখন যেন আকাশ কুসুম কল্পনা। মাঝে মধ্যে যখন চিন্তা ভর করে তখন ভাবি যে প্ল্যাটফর্ম আমরা তৈরি করে দিয়েছিলাম সেটাকে সাজানোর মতো মানুষ কি সমাজে নেই। অসুস্থতা এবং বয়সের কারণে পুরনো অনেক কিছুই মনে করা বেশ কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হাটা চলাও সীমিত হয়ে গেছে। তারপরেও ইচ্ছে করে সাহিত্য নিয়ে আরেক দফা যুদ্ধ করতে। কিন্তু সময় তো সে হিসেবে সায় দিচ্ছে না। বার বার জানান দিচ্ছে জীবনের শেষ প্রহরে পা রেখেছি আমি। অবাক করা একটা বিষয় আমাকে নাড়া দেয় প্রতিনিয়ত। এই যে বই মেলায় প্রতিবছরই এত পরিমাণ বই বের হয় এসব লেখক কারা? তারা কি সাহিত্য জগতে নতুন মোড় নিচ্ছে না কি নিজের খেয়াল খুশিমতো বই বের করছে। পাঠক পড়ছে কি পড়ছে না সেসব বোধহয় তোয়াক্কা করছে না। তাহলে এই বইগুলো বের করার মানে কি? এত বছরের বই মেলায় কতগুলো বই আজ পর্যন্ত আমাদের সাহিত্যের নতুন শাখা সৃষ্টি করেছে? এসব দেখে মনে হয় সত্যিই বিচিত্র এক দেশ আমাদের। মাঝে মধ্যেই বলতে ইচ্ছে করে, বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই শুধুমাত্র সৈয়দ হককে বিশ্লেষণ করলেই জানা যাবে সাহিত্যে সময়ের দাবি কাকে বলে। কিভাবে একজন লেখার প্রতিনিয়ত নিজেকে ভেঙ্গে নতুন ডাইমেনশনে লেখার রূপদান করে। অনেক বিখ্যাত লেখকদের দেখেছি তারা একটি নির্দিষ্ট ফরমেটে আটকে যান। কিন্তু সৈয়দ হককে আমি সেদিক থেকে এগিয়ে রাখতে চাই। তার লেখা কোন গান শুনলে মনে হয় এই তো সেদিনের কোন ছেলেপেলে হয়ত লিখেছে, আবার উপন্যাস, গল্প পড়লে মনে হয় অনেক রাশভারি কোন ব্যক্তির লেখা। কিন্তু প্রচ্ছদের উপরে নাম দেখলে ঘোর কাটে, আরে এ তো সৈয়দ শামসুল হকের লেখা। প্রতিনিয়ত নিজের লেখা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপনে পটু ছিল সৈয়দ হক। এটাই তার অন্যতম কারিশমা। এমন একজন লেখক এদেশে থাকতেও আমরা কেন জানি কিছুই নিতে পারিনি তার কাছ থেকে। হয়ত এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। যেখানে সাহিত্যে পাঠকশ্রেণী বুদ হয়ে থাকার কথা সেখানে আমাদের সাহিত্য সমাবেশে লোক ডেকে ডেকে আনতে হয়। আগেও বলেছি লেখনী তো অবশ্যই, সেই সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ভাল মনের মানুষ হওয়া। সৈয়দ হক প্রাণখোলা মানুষ ছিলেন। আড্ডা জমাতেন বেশ। যেখানেই বসে আড্ডা দিতেন সেখানেই যেন ভিড় জমে যেত। বাড়তে থাকত ভক্তদের সংখ্যা। এটাও কিন্তু কম প্রাপ্তি নয়। দেশে বিদেশে যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই আমাদের সাহিত্যের মুখ উজ্জ্বল করে এসেছেন। তার প্রস্থানে আমার বার বার মনে হয়েছে সাহিত্য সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করার মানুষ মনে হয় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ ভাবনার অন্যতাম কারণ হচ্ছে সাহিত্য চর্চা নিয়ে সেভাবে কাউকে আর এগিয়ে আসতে দেখিনি। কবি শামসুর রাহমান চলে যাওয়ার পর আমার বারবারই মনে হয়েছে সৈয়দ হক তো আছে। কিন্তু সে ও যে এভাবে চলে যাবে তা ভাবিনি কখনও। অপূরণীয় ক্ষতিই বুঝি হয়ে গেল। আবার এও ভাবি মানুষ তো মরণশীল, চিরকাল বেঁচে থাকবে না। তবে কেন এ প্রত্যাশা, কেন এতটা হাহাকার। সে যা দিয়ে গেছে তাই বা কম কি সে? কিন্তু না, যা ভেবেছিলাম ব্যাপারগুলো সেভাবেই ঘটাছে। কাউকে আর পাদ প্রদীপে আসতে দেখছি না। আর এ কারণেই হয়ত মনে হয়েছিল আরও কিছুদিন থেকে যাওয়ার দরকার ছিল সৈয়দ হকের। বরেণ্য কবি শামসুর রাহমান অনেকটা মৃদুভাষী ছিলেন। প্রচ- শ্রদ্ধা করতাম তাকে। তিনি কিভাবে যে অনেক কঠিন কথা সহজ করে বলতেন তা নিয়ে আজও ভাবি। সাবলীল ভাষায় লিখে যেতেন ঠিকই কিন্তু ভাবার্ত থাকত অনেক গভীরে। সাহিত্যের মজাটাই এখানে। সময় পেলেই কবির বাসায় গিয়ে এ নিয়ে আড্ডায় মেতে বসতাম কিংবা ধরে নিয়ে আসতাম আমার এখানে। সে সবের অনেক কিছুরই ছায়া আমি দেখেছি সৈয়দ হকেও মধ্যেও। পাঠকের মন জয় করতে বুঝি কঠিন ভাষা আয়ত্ত করার প্রয়োজন নেই। সাবলীল ভাষাই যেন যথেষ্ট। আর এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই দুই বরেণ্য কবি। সত্যিই তাদের সান্নিধ্যে সাহিত্যের রসবোধ আস্বাদন করার সুযোগ মিলেছে। জানি না এই রসবোধই আমাকে কুঁড়ে খাচ্ছে কি না। কারণ কিছুদিন আগ পর্যন্তুও পড়ার চর্চাটা অব্যাহত ছিল কিন্তু কোনভাবেই লেখনীর ভেতরে ঢুকতে পারিনি। বারাবার বরেণ্য দুই কবির রসবোধ খোঁজার চেষ্টা করেছি বর্তমান সময়ে, কিন্তু পাইনি। জানি না সেই রসবোধ খোঁজাটা এ সময়ে আমার অন্যায় হচ্ছে কি না। তারপরেও একটা ভাললাগা তো কাজ করবে? সেটাও করেনি প্রবলভাবে। হ্যাঁ দু’একজন যে নেই ভাল লেখে তা নয়। কিন্তু ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে না বলে আমি তাদের পাঠক হয়ে উঠতে পারিনি। তবে হতাশাবাদী নই আমি। প্রতিনিয়ত বিশ্বাস করে যাচ্ছি এমন দিন হয়ত থাকবে না। সাহিত্যে নতুন ভোর আসবেই। আবার পত্র পল্লব শোভিত হবে নতুন নতুন লেখার গাঁথুনি তে। ফুলে ফুলে মুখরিত হয়ে উঠবে চারদিক। ভিড় জমবে সাহিত্য আড্ডায়। আবারও আসবে কবি শামসুর রাহমান কিংবা সৈয়দ শামসুল হকে মতো সব্যসাচী লেখক।
×