ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় পরিবর্তন দেখছেন হোয়াটমোর

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৪ নভেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় পরিবর্তন দেখছেন হোয়াটমোর

মোঃ মামুন রশীদ ॥ তার হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জিতেছিল। ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২২৬ রানে জয় তুলে নিয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটের নবীন সদস্য বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের সিরিজও জিতে অবিস্মরণীয় সাফল্য পেয়েছিল। ওই সময়টাতে জাতীয় দলের গর্বিত কোচ ছিলেন ডেভ হোয়াটমোর। কিন্তু এরপর আর কোন টেস্ট বিজয় এনে দিতে পারেননি দলকে। ২০০৭ সালে ভারতের বিরুদ্ধে হোম টেস্ট সিরিজে একটি ম্যাচ ড্র করতে পেরেছিল শুধু। এরপরই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই হোয়াটমোর এবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়টাকে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। তিনি মনে করেন আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আর সাফল্যের ধারা ধরে রাখার জন্য অর্জিত দক্ষতা ধরে রাখা জরুরী বলেও মনে করেন হোয়াটমোর। গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে রানার্সআপ বরিশাল বুলসের কোচ হিসেবে এবার দায়িত্ব নিয়ে পূর্বের ফলাফলটা ধরে রাখতে চান তিনি। দলের অনুশীলন শেষে এসব কথা বলেন হোয়াটমোর। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মে মাসের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত শ্রীলঙ্কান হোয়াটমোর। এ সময় হোয়াটমোরের প্রশিক্ষণে দারুণ গোছানো একটি দলে পরিণত হতে শুরু করে বাংলাদেশ দল। ওই সময় থেকেই মূলত ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের দক্ষতাটা ছড়াতে শুরু করে বাংলাদেশের। কারণ দলের ২০০৫ সালে প্রথম টেস্ট বিজয়, একই বছর বিশ্বের সেরা ওয়ানডে দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম জয়, ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের সুপার এইটে ওঠার মতো ঈর্ষণীয় সাফল্য আসে হোয়াটমোরের অধীনে। ২০০৭ বিশ্বকাপ শেষেই পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া হোয়াটমোর সে বছর ঘরের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে। ওই সিরিজে ভারতের বিরুদ্ধে একটি টেস্ট ড্রও করে বাংলাদেশ। কিন্তু সিরিজ শেষেই দায়িত্ব ছেড়ে যান। দীর্ঘ বিরতির পর পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে জিম্বাবুইয়ের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার বাংলাদেশে ফিরেছেন নতুন দায়িত্ব নিয়ে। এবার বিপিএলে গত আসরের রানার্সআপ বরিশাল বুলসের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজে নেমেছেন। সবসময়ই বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট দেখেছেন। এ বিষয়ে হোয়াটমোর বলেন, ‘আমি অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আগাগোড়া অনেক পরিবর্তন এসেছে। ক্রিকেট বোর্ড কঠোর পরিশ্রম করেছে এ জয়টাকে আনতে। নাহলে এমনটা ঘটতো না। খুব ভাল কোচিং স্টাফ, সাপোর্ট স্টাফ, ভাল খেলোয়াড় এবং সবচেয়ে জরুরী বিষয় দক্ষতাটা বেশ ইতিবাচকভাবেই বেড়েছে। এটা ততোক্ষণ বজায় থাকবে যতদিন এ বিষয়গুলো ধরে রাখা যাবে।’ হোয়াটমোরের অধীনে যে দলটি টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্যময় এক পথে এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল সেই দলটি এবার ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তির বিরুদ্ধে জয় তুলে নিয়েছে। এ বিষয়ে হোয়াটমোর বলেন, ‘আমি যেটা পারিনি, সেই টেস্ট জয়টা (বড় দলের বিরুদ্ধে) বাংলাদেশ পেয়েছে। আমি মনে করি এটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। আমরা জানি হোম কন্ডিশনে সফরকারী প্রতিপক্ষের জন্য ভাল খেলা বেশ কঠিন। অভিনন্দন বাংলাদেশকে।’ কিন্তু এ ধারাটা বজায় রাখতে পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে এমনটাই জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক এ কোচ। তবে এখন তিনি বিপিএলের দল বরিশাল বুলসের দায়িত্বে। দল নিয়ে এ কোচ বলেন, ‘আমরা যদি পারি ভালভাবেই শুরু করতে চাই। আমরা শনিবার চিটাগং ভাইকিন্সের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করব। গত বছর যে দলটি খেলেছে তারচেয়ে অবশ্যই এবার দলের গঠনটা ভিন্নতর। তবে আমরা টুর্নামেন্টটা উপভোগ করতে চাই। নিজেদের সেরাটা দিয়ে এগোতে চাই আমরা। দেখি ফলাফলটা কেমন হয়। কিন্তু আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়েই কঠিন প্রচেষ্টা চালাব। হা চাপ, ভাল নৈপুণ্য দেখানোর চাপ দলের ওপর! আমরা ভাল ফলাফল পেয়েছিলাম গত বছর। এ বছরও অবশ্যই আমরা সেরকম কিছুই করার চিন্তায় আছি। কিন্তু সেটার আগে অনেক ভাল করতে হবে। কিন্তু আপনি জানেন সবগুলো ম্যাচ জেতা যাবে না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু আমরা যতটা সম্ভব প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলার চেষ্টায় থাকব।’ দলের পরামর্শক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের দুই সাবেক নির্বাচক আতহার আলী খান ও ফারুক আহমেদ। তিনি মনে করেন দলের কৌশলগত দিকগুলো দেখার জন্য ভাল সহায়ক হবেন এ দু’জন।
×