ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা মেডিক্যালে তরুণী ধর্ষণ

আটক আনসার সদস্য আতিকুল রিমান্ডে, অন্যরা পলাতক

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ নভেম্বর ২০১৬

আটক আনসার সদস্য আতিকুল রিমান্ডে, অন্যরা পলাতক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক তরুণী ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতারকৃত আনসার সদস্য আতিকুল ইসলামকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। আতিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তরুণী ধর্ষণের সঙ্গে আতিকুলের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আতিকুল এ মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে পারে। এক আসামি গ্রেফতারের পর আসামি হিসেবে থাকা অন্য পাঁচ আনসার সদস্য পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আর তাতে পুলিশকে সহযোগিতা করছে আনসার ও ভিডিপি কর্তৃপক্ষ। আনসার কর্তৃপক্ষও বিষয়টি তদন্ত করছে। পুলিশের সঙ্গে আনসার কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আরও দশ আনসার সদস্যকে সরিয়ে নিয়েছে আনসার কর্তৃপক্ষ। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত করছেন পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ। তিনি বুধবার রাতে গ্রেফতারকৃত মামলার এজাহারনামীয় আসামি আতিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করেন। আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান আদালতে রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির ইয়াছির আহসান চৌধুরী আসামিকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতে রিমান্ডের আবেদনে মামলার অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, গত ২৭ অক্টোবর রাতে কয়েক আনসার সদস্য তরুণীটিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগের তৃতীয় তলায় ক্যান্সার ডিপার্টমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে ছয় আনসার সদস্য মিলে তরুণীকে ধর্ষণ করে। এরপর ২৯ অক্টোবর কামাল নামের এক ব্যক্তি মেয়েটিকে গাইনি বিভাগে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা ৩০ অক্টোবর মেয়েটিকে ওসিসিতে স্থানান্তর করেন। ধর্ষণে জড়িত অপর ৫ আনসার সদস্য হচ্ছেÑ সহকারী প্লাটুন কমান্ডার একরামুল, সদস্য আমিনুল, মীর সিরাজ, মিনহাজ ও বাবুল মিয়া। গত বুধবার অভিযুক্তদের বরখাস্ত করে আনসার কর্তৃপক্ষ। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আতিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুল বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে বহুবার। শেষ পর্যন্ত আতিকুল নিজেও ধর্ষণের সঙ্গে যে জড়িত, তা অনেকটাই শিকার করেছে। এছাড়া সার্বিক পর্যালোচনায়ও ধর্ষণের সঙ্গে আতিকুলের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ ব্যাপারে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জনকণ্ঠকে জানান, অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আতিকুল অন্য আসামিদের সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে। আতিকুল আদালতে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীও দিতে পারে। তদন্তকারী সংস্থা বলছে, প্রথমেই বিষয়টি আনসার কর্তৃপক্ষ জানতেন। আনসার কর্তৃপক্ষ তাদের সদস্যদের ক্লোজ করার পর তাদের হেফাজতে রাখতে পারতেন। এরপর মামলা হলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে পারতেন। মামলা না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শেষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এক্ষেত্রে আনসারের সংশ্লিষ্ট ওই দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি অনেকটা না বুঝেই তাদের ক্লোজ করার পর আর তাদের খবর রাখেননি। ফলে অভিযুক্ত আনসার সদস্যরা পালানোর সুযোগ পেয়েছে। এজন্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশকে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে। মামলার তদন্তও স্বাভাবিক কারণেই দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সব আসামি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ঘটনার সার্বিক বিষয় জানা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া ফরেনসিক রিপোর্টের জন্যও তারা অপেক্ষা করছেন। রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ ব্যাপারে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজ হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক খাজা আব্দুল গফুর জানান, ঘটনাটি তদন্ত করতে তাদের তরফ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় ঢামেক হাসপাতালের পুরনো আনসার সদস্যের সরিয়ে নতুন সদস্যদের আনা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি। ঢাকা জেলার আনসার কমান্ড্যান্ট সাইফুল্লাহ রাফেল বলেছেন, তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে আনসারের ছয় সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরে ১০ জনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আরও কিছু সদস্য হাসপাতাল থেকে বদলি করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঘটনাটি আনসার সদর দফতর থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর ওই তরুণীকে হাসপাতালের বাইরে রাস্তায় অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন কামাল নামের একজন। তিনিই পরে ওই তরুণীকে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করিয়ে দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ওই তরুণীকে ওসিসির (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) সংরক্ষিত শয্যায় ভর্তি করেন। ওসিসির কো-অর্ডিনেটর ডাঃ বিলকিস বেগম জনকণ্ঠকে জানান, মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন। ওই তরুণীর কাছে পাওয়া ডায়েরিতে থাকা মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে তরুণীর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। বুধবার বিকেলে তরুণীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে বুধবারই মেয়েটিকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই চিকিৎসক আরও জানান, প্রাথমিক পর্যালোচনায় মেয়েটির সঙ্গে একাধিক ব্যক্তির যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আলামত মিলেছে। মেয়েটি হাসপাতালের আনসার সদস্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন বলে তাদের কাছে দাবি করেছেন। যদিও বিষয়টি সর্ম্পকে এখনই শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে মেয়েটির শরীর থেকে প্রয়োজনীয় ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ নমুনার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। বুধবার রাতে মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে সহকারী প্লাটুন কমান্ডার একরামুল, সদস্য আমিনুল, আতিকুল, মীর সিরাজ, মিনহাজ ও বাবুল মিয়াকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মেয়েটি রাজধানীর তেজগাঁও থানা চত্বরে অবস্থিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নেই চিকিৎসা ও আইনী সহায়তাসহ যাবতীয় সহযোগিতা পাচ্ছেন।
×