ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাই সীমান্তপথে আনা এসব অস্ত্র এরাই হলি আর্টিজানে সরবরাহ করেছিল

অস্ত্র সরবরাহকারী চার নব্য জেএমবি জঙ্গী আটক, রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ নভেম্বর ২০১৬

অস্ত্র সরবরাহকারী চার নব্য জেএমবি জঙ্গী আটক, রিমান্ডে

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহকারী চার নব্য জেএমবির সদস্যকে আটক করে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। হলি আর্টিজানসহ নব্য জেএমবির সারাদেশের জঙ্গী হামলা ও টার্গেট কিলিংয়ের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহকারী গ্রুপের সদস্য গ্রেফতার হওয়া এই চারজন নব্য জেএমবির জঙ্গী। গ্রেফতার হওয়া চার নব্য জেএমবির সদস্য হচ্ছে- আবু তাহের (৩৭), মিজানুর রহমান (৩৪), সেলিম মিয়া (৪৫) ও তৌফিকুল ইসলাম ওরফে ডাঃ তৌফিক (৩২)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হ্যান্ডমেড গ্রেনেড তৈরির মূল উপকরণ ৭৮৭টি ডেটোনেটর ও একটি ৯ এমএম বিদেশী পিস্তল ও বিস্ফোরক চোরাচালানী সামগ্রী। নব্য জেএমবির এসব জঙ্গী টার্গেট কিলিংয়ে ব্যবহৃত গ্রেনেডের ডেটোনেটর, জেল ও অস্ত্র ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসত। আত্মগোপনে থাকা জেএমবির বর্তমান নেতৃত্বের নির্দেশ ও পরামর্শ মোতাবেক গ্রেফতারকৃত নব্য জেএমবির জঙ্গীরা ঢাকায় নতুন করে বড় ধরনের কোন নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ডেটোনেটর ও অস্ত্র ঢাকায় নিয়ে আসে বলে ধারণা করছে তদন্তকারী পুলিশ ও গোয়েন্দারা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ডেটোনেটর ও অস্ত্রগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেনেড, ডেটোনেটর, অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠাত সেখানে গ্রেফতার হওয়া ত্রিশালের প্রিজনভ্যান থেকে তিন জেএমবির সদস্যকে ছিনতাইয়ের হোতা আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে জামাই ফারুকের নেতৃত্বাধীন জেএমবির গ্রুপটি। বাংলাদেশে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ আসার পর গ্রহণ করত নিহত হওয়ার আগে তামিম আহমেদ চৌধুরী ও পলাতক নুরুল ইসলাম মারজান। তবে বর্তমানে নব্য জেএমবির সেসব নেতৃত্ব আত্মগোপনে থেকে বর্তমান নেতৃত্বের নির্দেশ ও পরামর্শ মোতাবেক গ্রেফতারকৃত নব্য জেএমবির জঙ্গীরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। রাজধানী ঢাকায় ও আশপাশে নতুন করে বড় ধরনের কোন নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদের চোরাচালান নিয়ে আসা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুধবার রাতে মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘নব্য জেএমবি’র এই চার সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে তারা হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহকারী। তদন্তকারীদের কাছে আগেই খবর ছিল নব্য জেএমবির অস্ত্র সরবরাহকারী এই গ্রুপটিই ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির বাংলাদেশের তিন জন ও ভারতের তিনজনসহ মোট ছয় জঙ্গী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে কলকাতার পুলিশ। কলকাতায় গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গুলশান হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার জন্য অস্ত্র তৈরি করা হয় পশ্চিমবঙ্গের মালদহে। ভারতের বিহারের মুঙ্গের থেকে আনা অস্ত্র তৈরির কারিগররা মালদায় একটি আস্তানায় বসে অস্ত্র বানায়। চার জেএমবি সদস্য তিন দিনের রিমান্ডে ॥ বুধবার রাত নয়টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালাম রোড এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে নব্য জেএমবির চার সদস্যÑ মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, মোঃ আবু তাহের, মোঃ সেলিম মিয়া ও তৌফিকুল ইসলাম ওরফে ডাঃ তৌফিককে। নব্য জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। বৃহস্পতিবার এই চার জেএমবি সদস্যকে আদালতে পাঠিয়ে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। চাঁপাই সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র এসেছে ॥ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, গ্রেফতাররা সকলেই জেএমবির সক্রিয় সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ভারতীয় সীমান্তে অস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নব্য জেএমবি কি আবারও তৎপর ॥ তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নব্য জেএমবির গ্রেফতারকৃত চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে তিনি জানান। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা দেশব্যাপী চালানো সাম্প্রতিক নব্য জেএমবির হত্যাকা-গুলোতে ব্যবহৃত গ্রেনেডের ডেটোনেটর, জেল ও অস্ত্র ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসত। থমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহকারীরা শনাক্ত ॥ পুলিশের জঙ্গীবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, গুলশানের হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলায় যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোও ভারতের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। জঙ্গী হামলা চালাতে বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। এর মধ্যে হুন্ডির মাধ্যমে এসেছে অন্তত ১৪ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, টাকার পাশাপাশি অস্ত্রও সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু প্রস্তুতকারক দেশের নাম এখানে লেখা নেই। তবে এটি ভারতের ভেতর দিয়ে এসেছে। যেভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আসার তথ্য পাওয়া যায় ॥ তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর জামাই ফারুকসহ জেএমবির ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ)। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অসম রাজ্য থেকে বাংলাদেশের তিন ও ভারতের তিন জেএমবি জঙ্গীকে গ্রেফতার করেন তারা। ভারতে গ্রেফতার হওয়া ছয় জেএমবি হচ্ছেÑ আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে জামাই ফারুক ওরফে এনাম ওরফে কালো ভাই, মাওলানা ইউসুফ ওরফে বক্কর ওরফে আবু খেতাব, জাহিদুল শেখ ওরফে জাফর ওরফে জবিরুল, মোঃ রফিকুল ওরফে মোঃ রুবেল ওরফে পিচ্চি, শহিদুল ইসলাম ওরফে সুরয়ে ওরফে শামীম এবং আবুল কালাম ওরফে করিম।
×