নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৩ নবেম্বর ॥ সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি চাল দরিদ্ররা না পেলেও এই চাল উঠছে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, তাদের স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঘরে। হতদরিদ্রদের প্রাপ্য চাল যারা তুলছেন তাদের অনেকেরই রয়েছে পাকা বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য। তারপরও তারা নিজেদের নামে বা স্বজনদের নামে কার্ড করে প্রতি মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল উত্তোলন করছেন। পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ শুরু হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ডের মোট ৩০১ জন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজির চাল উত্তোলন করছেন। মথুরাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আনকুটিয়ার ইয়াছিন আলী নিজে (কার্ড নং-৫০) এবং তার অপর দুই ভাই আবু বক্কার (কার্ড নং-১১) ও নবীর হোসেন (কার্ড নং-৪৪) এর নামে কার্ড করিয়েছেন। ইউপি মেম্বারের বাইরে পেশায় একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তালিকায় নিজের পেশা লিখেছেন ‘কৃষি’। তালিকায় নিজের নামটাও ভুল লিখিয়েছেন তিনি। সেখানে তার নাম লেখা আছে ‘ইনাছিন আলী’। এর কারণ জানতে চাইলে মেম্বার ইয়াছিন আলী জানান, ‘লেখার সময় ভুল হয়ে গেছে’। নিজের নামে কার্ড কেন করেছেন জানতে চাইলে ইউপি মেম্বার ইয়াছিন আলী জানালেন ৭২টি কার্ডের মধ্যে তিনি ভাগে পেয়েছেন মাত্র ২৭টি কার্ড। বাকি কার্ডগুলো ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা রমজান মহররম আলীসহ অন্যরা ভাগ করে নেয়। নিজের নামে চাল তুলে গরিব আত্মীয়দের দিয়ে দেন বলে জানালেও পরে ইউপি সদস্য মেম্বার ইয়াছিন জানান ‘আমার ১২ মাস চাল কিনে খেতে হয়। ১০ টাকায় চাল পাওয়ায় কিছু টাকা সেভ হয়, তাই এই কার্ড করেছি।’ মথুরাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বাহাদুরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এই গ্রামের বাবলু মিয়ার ছেলে আনব আলী (কার্ড নং-৮৫), আলী মোল্লার ছেলে দুলাল হোসেন, আনছার আলীর ছেলে শাখাওয়াত হোসেন (কার্ড নং-১১৯)সহ অনেকেই ব্যবসাসহ অন্যান্য পেশায় স্বচ্ছল জীবন যাপন করলেও তারা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল তুলছেন। এই ওয়ার্ডের মেম্বার আবুবকর সিদ্দিকের মেয়ে শাপলা মনি (কার্ড নং-৯৩), ভাতিজি নুরুননাহার (কার্ড নং-৯২), ভাতিজা সুজনসহ (কার্ড নং-৮৮) ঘনিষ্ঠ অনেকের নামে কার্ড হলেও তালিকায় নাম উঠেনি প্রায় ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মন্নাস আলী, ষাটোর্ধ গিয়াসউদ্দিন, মুকুল হোসেন, ফরহাদ হোসেনসহ অনেক প্রকৃত হতদরিদ্রের। মথুরাপুর ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের তালিকা প্রস্তুত কমিটির সভাপতি ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা চিত্রা রাণী সাহা জানিয়েছেন, এ তালিকা চেয়ারম্যান-মেম্বার সাহেবরা করেছেন। তালিকায় অনিয়মের পাশাপাশি হতদরিদ্রদের চাল বিতরণে ওজনে কারচুপির অভিযোগে ইতোমধ্যে ফৈলজানা ইউনিয়নের আব্দুস সালাম নামের একজনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের জানান, নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক উপজেলা খাদ্য অফিসে একটি ‘অভিযোগ বাক্স’ থাকার নির্দেশ রয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রাণী বালো জানান, এ কর্মসূচীর শুরুর দিকে জেলা প্রশাসনকে বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার মূলত এ তালিকা প্রস্তুত করেছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: