ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘আগুর’ ধান কাটা শেষের পথে, এরপরেই নবান্নের রোপা আমন

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৪ নভেম্বর ২০১৬

‘আগুর’ ধান কাটা শেষের পথে, এরপরেই নবান্নের রোপা আমন

সমুদ্র হক ॥ এখন সারা বছর কোন না কোন জাতের ধান ফলে। কৃষক নিজেদের সুবিধামতো সময়ে সব ধরনের আবাদ করে। এই সময়টায় কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান মাড়াই কাটাই শেষের পথে। কয়েকদিন পর অগ্রহায়ণেই শুরু হবে নবান্নের রোপা আমন মাড়াই কাটাই। চলবে অগ্রহায়ণের অর্ধেকটা সময় ধরে। তারপর রবি ফসলের দিকে যাবে কৃষক। যারা আলুর আবাদ করবে তারাই আগাম আমন কাটা শুরু করেছে। আগাম জাতের আমনকে উত্তরাঞ্চলে বলা হয় আগুর জাত। বগুড়ার নন্দীগ্রামের কৃষক জানালেন আগুর আমন কেটেই আলুর জমি তৈরি করে আলু বীজ লাগালে দ্রুত ফলন মেলে। উল্লেখ্য, বগুড়া আলু আবাদ প্রধান এলাকা। হালে তা ছড়িয়ে পড়েছে জয়পুরহাট, নাটোর, রংপুর রাজশাহীতেও। বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চল নওগাঁ রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র এলাকা, চলনবিল পাড়ের শুকনো ভূমির এলাকায় আগাম জাতের আমন ভাল ফলে। মাঠের কৃষকের কথা, এবারও ‘আগুর’ (আগাম আমন) ভাল ফলেছে। এই জাতের ধান উৎপাদনের জন্য এবার আবহাওয়া ছিল সহনশীল। বালাইনাশক কাজ করেছে। ধানের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে যে পোকা সেই বাদামী ফড়িংয়ের আক্রমণ রোধ করা গেছে। প্রাকৃতিক পদ্ধতিই কাজ করেছে। প্রতি বিঘায় আগুর ফলন মিলছে গড়ে ২০ মণ করে। বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। এই পরিমাণ ধান পেয়ে কৃষক খুশি। কৃষি বিভাগ সূত্রের খবর; এবার প্রতিটি এলাকায় বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ব্রি) উদ্ভাবিত খরা সহনশীল ধানের চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে এ জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল। উফশী বিআর-২৮, বিআর-৩৯, বিআর-৪৯, বিআর-৫১, বিআর-৫২, বিআর-৫৬, বিআর-৫৭ ও বিআর-৬২ জাত মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে। যে এলাকায় যে জাত ভাল ফলে কৃষক তাই বেছে নিয়েছে। বর্তমানে মাঠের কৃষক এতটাই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে যে কোন জাত কখন রোপণ করতে হয় তা ভালভাবেই জানে। সোনাতলা উপজেলার রানীরপাড়ার কৃষক আবুল জানান, বগুড়ার এই পূর্বাংশে আগুর তেমন ফলে না, তবে রোপা আমনের যে জাতগুলো এসেছে তাতে আগের চেয়ে অনেক বেশি ফলন দেয়। এ এলাকায় রোপা আমন মাড়াই কাটাই শুরু হতে পারে অগ্রহায়ণের প্রথমেই। একটা সময় বোরোর চেয়ে আমনের উৎপাদন ছিল কম। ব্রির নতুন উফশী জাত উদ্ভাবনে সেই অবস্থা আর নেই। যে কোন উফশীর উৎপাদন সাধারণের চেয়ে বেশি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো একটা সময় উত্তরাঞ্চলে হাইব্রিড ধানের প্রচলন হয়েছিল। এ ধানের বীজ সব সময় কিনতে হয়। ধান তোলার পর রাখা যায় না। আর দেশীয় জাতের ধান মাড়াই কাটাইয়ের পর কিছু অংশ বীজের জন্য রাখা যায়। এই অবস্থায় দেশের ধান গবেষকগণ সকল মৌসুমে আবাদের জন্য নানা জাতের উফশী ধান উদ্ভাবন করেছেন। এখন কৃষক দেশের উফশী জাতের ধানের আবাদ করে। বগুড়া অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ধানের সিজনের কোন আনুষ্ঠানিকতা আর নেই। অগ্রহায়ণের রোপা আমনের ধানের চালে নবান্ন হয়। নবান্নের ঐতিহ্যের এই আনুষ্ঠানিকতা আছে। অগ্রহায়ণ আসতে কিছুটা সময় বাকি। ফসলের মাঠ এখন সোনালী। এর মধ্যেই আগুর জাত কেটে নতুন ধান ওঠার শুভ সূচনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবারও টার্গেটের অতিরিক্ত ফলন মিলবে। কৃষি এখন সারা বছর। এরপরই রবি ফসলের দিকে যাবে কৃষক।
×