ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ আলী

দুই নেত্রী? একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৪ নভেম্বর ২০১৬

দুই নেত্রী? একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

(৩ নবেম্বরের পর) বন্যাদুর্গত এলাকাসমূহে তাঁর সারাদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন, আর প্রতিটি এজেন্ডা আইটেম বিস্তারিত আলোচনা করলেন, সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের কাজের হিসাব নিলেন এবং উপস্থিত সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিলেন। কোন ক্লান্তি নেই, কোন বিরক্তিবোধ নেই। দায়িত্ববোধের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সভা শেষে আমরা সবাই ভাবলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার অবশ্যই বিশ্রাম নিতে যাবেন। কিন্তু না, আমরা অবাক হয়ে দেখলাম তিনি তাঁর অফিস কক্ষের দিকে যাচ্ছেন। তাঁর পিএস বললেন তিনি সারাদিনের ফাইলগুলো নিষ্পত্তি করে তারপর বিশ্রাম নিতে যাবেন। একেই বলে দায়িত্ববোধ। আমি লক্ষ্য করেছি, শেখ হাসিনার কাছে সবকিছুর ওপর দেশের এবং দেশের মানুষের কল্যাণ চিন্তা, বিপদে আপদে সব সময় তিনি তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। ১৯৯৭ কি ৯৮ সালে তাঁর স্পেনে একটি সরকারী ভ্রমণে যাওয়ার কথা। যাওয়ার আগের দিন চাঁদপুর অঞ্চলে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। কেবিনেট সেক্রেটারির সঙ্গে আলাপ করে, শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর বিদেশ ভ্রমণ কর্মসূচী বাতিল করেন যাতে তিনি দেশের অভ্যন্তরে দুর্যোগকবলিত মানুষের পাশে থাকতে পারেন। শেখ হাসিনা প্রতিটি বিষয়ে ত্বরিত সিদ্ধান্ত দিতেন। কিছুই বিলম্বিত হতো না। আমি একবার একটা ধঢ়ঢ়ড়রহঃসবহঃ চাই। যেদিন বিকেলে অনুরোধটা জানাই পরদিন সকালে অফিসে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানিয়ে দেয়া হয় আজ বিকেলে আমাকে সময় দেয়া হয়েছে। সরকার পরিচালনা ও প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ এবং রহহড়াধঃরড়হ হলো যে, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেই পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় ারংরঃ করে এবং মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সকল তথ্য যেমন : জনবল, উন্নয়ন কর্মসূচী, সমস্যাবলী, ভবিষ্যত পরিকল্পনা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও আলোচনা করতেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতেন। এই প্রক্রিয়াটি শেখ হাসিনার জন্য প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে এবং পরবর্তীতে যথোপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যথেষ্ট সহায়ক হয় বলে আমার ধারণা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই শেখ হাসিনাকে এ ধরনের চৎড়ধপঃরাব বা উদ্যোগী কার্যক্রম গ্রহণ করতে দেখা যায় যা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর সাফল্যের একটি বড় উপাদান। তাঁর আত্মবিশ্বাস : শেখ হাসিনার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর গভীর আত্মবিশ্বাস। বিশ্বব্যাংক যখন একটা ফালতু অজুহাত দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিল, শেখ হাসিনা একটুও দমে যাননি, একটুও সাহস হারাননি। প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজস্ব অর্থায়নেই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন। এই প্রথম বারের মতো এত বৃহৎ একটি প্রকল্প কোনরূপ বৈদেশিক সহায়তা ছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব সম্পদের ওপর নির্ভর করে বাস্তবায়ন করার চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করলেন। তাঁর সাহস ও দৃঢ়তা : দুটি ঘটনায় আমরা শেখ হাসিনার অদম্য সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় পাই। ডক্টর ইউনূসকে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরানো হয় তখন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাঁকে ফোন করে ডক্টর ইউনূসের পক্ষে তদ্বির করেন। শেখ হাসিনা তাঁর সিদ্ধান্তে তিনি অটল থাকলেন। হিলারি ক্লিনটনের টেলিফোন তাঁকে সামান্যও প্রভাবান্বিত করতে পারেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তাঁর সাহস ও দৃঢ়তার আরেকটি দৃষ্টান্ত। এই নির্বাচনটি স্থগিত করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরের থেকে কি পরিমাণ চাপ তাঁর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল তা আমরা সবাই জানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দৌড়ঝাঁপ, নির্বাচন বন্ধের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা, দল ও প্রতিষ্ঠানের relentless pressure শেখ হাসিনাকে দুর্বল করতে পারেনি। তিনি যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছেন এবং দেশকে আরেকটি শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট থেকে রক্ষা করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ এবং কোন কোন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি মওকুফ করার জন্য তার ওপর পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী মহলের পক্ষ থেকে যে অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে সে সব কিছুই তার সাহস ও সঙ্কল্পকে এতটুকু টলাতে পারেনি। শেখ হাসিনা গভীর আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও দক্ষতার সঙ্গে দেশের বড় বড় সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন ও সফল হয়েছেন। ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত নির্ধারণ বা ছিটমহল সমস্যা যা বিগত ৫০ বছরেও সমাধান হয়নি তা তিনি সন্তোষজনকভাবে নিষ্পত্তি করেছেন। অত্যন্ত সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা বিবাদকে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে নিয়ে গেছেন এবং আমাদের অনুকূলে সিদ্ধান্ত আদায় করেছেন। শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সংবেদনশীল নীতির কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের রক্তপাত বন্ধ হয়েছে ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিপূর্বে কেউ এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারেনি। শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেই দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের বন্ধ দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পূর্বে মোবাইল ফোনের মনোপলী একজনের হাতে ছিল। একটি মোবাইল সেট কিনতে হতো ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে। তিনি ব্যবসাটি উন্মুক্ত করে দিলেন। গ্রামীণ ফোনকে লাইসেন্স দিলেন। তাঁর এই নীতির ফলে মোবাইল ফোন সহজলভ্য হলো। ২০০০-২৫০০ টাকায় এখন মোবাইল ফোন ক্রয় করা যায়। চলবে... লেখক : সাবেক সচিব
×