ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা প্রশাসনের হাল

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৪ নভেম্বর ২০১৬

শিক্ষা প্রশাসনের হাল

দুর্বৃত্তায়ন যদি প্রশাসনকে গ্রাস করে, তবে স্বাভাবিকতা পথ হারায়। তাদের দাপট এবং তৎপরতা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে অনেকটা বাধ্য। এসবের ছাপ পড়ে প্রশাসনের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অবৈধ সিন্ডিকেট গড়ে ওঠা সহজ হয়ে পড়ে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে। বছরের পর বছর একই বিভাগে কর্মরত থাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে মৌরসী পাট্টা। কোন নিয়মনীতি আর প্রযোজ্য হয় না তখন। এমন পরিস্থিতি বিদ্যমান শিক্ষা প্রশাসনে। যেখানে অবৈধ সিন্ডিকেট, দুর্বৃত্তায়ন, ক্ষমতার দাপট, দুর্নীতির বিষবাহু ছড়ানো। যে কারণে বড় ধরনের পদোন্নতি হলেও পদায়নে অনিয়ম এবং বিশেষ একটি গ্রুপের একচ্ছত্র দাপটকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়েছে অস্থিরতা। বিএনপি-জামায়াত অনুসারীরা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এমনভাবে আসীন যে, এদের হুকুম ছাড়া প্রশাসনের বৃক্ষের পাতাও নড়ে না বুঝি। এই অবস্থা আজ নতুন করে হয়েছে, তা নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত শাসনকালে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে কার্যত নতুন করে ব্যাপক দুর্বৃত্তায়ন ঘটে। ক্ষমতা ভবিষ্যতেও পাকাপোক্তভাবে রক্ষা করার মানসিকতা থেকে প্রশাসনকে দলীয়করণ তথা জামায়াতীকরণ করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা ত্যাগের আগে প্রশাসনকে তাদের বশংবদ দিয়ে তিনটি স্তর তৈরি করেছিল। শেষ স্তরটি এখনও প্রশাসনে কর্মরত এবং পূর্ববর্তী অনিয়ম, দুর্বৃত্তায়নকে অবাধে চর্চা ও প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখতে নানা কলাকৌশল অবলম্বন করে আসছে। এদের এই কৌশলের কাছে বর্তমান সরকার যেন বাঁধা পড়ে আছে। যে কারণে দেখা যায়, অন্তত শিক্ষা প্রশাসনের উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল ও মুক্তমনা শিক্ষকরা বছরের পর বছর মফস্বলে চাকরি করছেন। এদের পদোন্নতি হলেও পদায়নে বিঘœ ঘটছে। কারণ, বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা ঢাকাতেই বহাল তবিয়তে থেকে ছড়ি ঘোরান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীদের বিরুদ্ধে। পদোন্নতি হলেও ঘুরে ফিরে তারা বছরের পর বছর ঢাকায় লোভনীয় পদগুলোতেই বহাল রয়েছেন। বদলি না হওয়ায় শিক্ষা বোর্ড থেকে অধিদফতরের প্রতিটি স্তরে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিন্ডিকেট। এসব কাজে মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তির অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহায়তা করছে- এমন অভিযোগও রয়েছে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডাররা মূলত কলেজ শিক্ষক। তাদের প্রশাসনে কাজ করার চেয়ে শ্রেণীকক্ষে পাঠদানেই বেশি মনোযোগী হওয়ার কথা। সরকারী কলেজগুলোতে এমনিতেই শিক্ষক সঙ্কট তীব্র। এর পরও ডেপুটেশনে যাদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেয়া হয়, নিয়মানুযায়ী তিন বছর পর বদলি হওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও বলেছেন এদের বদলি করা উচিত। স্থায়ী কমিটি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যেককে প্রয়োজনে এক বোর্ড থেকে অন্য বোর্ডে বদলির সুপারিশ করেছিল। সে সব কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। একটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে চিহ্নিত সরকারবিরোধী একজনকে নিয়োগ দেয়ায় স্থায়ী কমিটি ক্ষোভ জানিয়েছে। প্রশাসনেও এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। এ বছর শিক্ষা ক্যাডারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় পদোন্নতি হয়েছে। বিশেষ একটি গ্রুপের পছন্দমতো এদের পদায়ন হওয়ার কারণে সিনিয়রদের অনেক পদই জুনিয়ররা দখল করে রেখেছে। শিক্ষা প্রশাসনে এখনও অদৃশ্য হাতে চলছে বাণিজ্য বদলি। সব মিলিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে চলছে অরাজকতা। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষা ক্ষেত্রেও। অবিলম্বে এসব বন্ধে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সংসদীয় কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করার অর্থই হচ্ছে জামায়াত-বিএনপির অনুসারীদের পৃষ্ঠপোষকতাদান। শিক্ষা প্রশাসনকে দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্ত করা না গেলে বিপর্যয় অবধারিত। শিক্ষিত সমাজ ও দেশবাসী এই পরিস্থিতির অবসান কামনা করে।
×