ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনাবাসীর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ঢাকায় এই তরুণ কৃতী ক্রিকেটার

এমন স্মরণীয় দিন জীবনে কল্পনাও করিনি ॥ মিরাজ

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৩ নভেম্বর ২০১৬

এমন স্মরণীয় দিন জীবনে কল্পনাও করিনি ॥ মিরাজ

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনার সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ইংল্যান্ড বধের মহানায়ক মেহদী হাসান মিরাজ ঢাকায় ফিরে গেছেন। দু’দিনের অনির্ধারিত ছুটিতে সোমবার রাতে তিনি খুলনার খালিশপুরে তার বাবার ভাড়া করা বাড়িতে আসেন। বুধবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে তিনি খুলনা ছেড়ে গেছেন। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোচ আল মাহমুদ মিরাজের ক্রিকেট জীবনের শুরুর কথা বর্ণনা করেন এবং জেলা প্রশাসনের কাছে মিরাজের পরিবারের জন্য একখ- জমি প্রদানের দাবি জানান। মিরাজের বাবা জালাল হোসেন জানান, বুধবার ভোর সাড়ে ৫টায় মিরাজ ঢাকার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়। তিনিও সঙ্গে ছিলেন। এরপর বাসে করে যশোর পৌঁছে সোয়া ৮টার প্রথম ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরে যান মিরাজ। মিরাজের এখন লক্ষ্য বিপিএল খেলা। রাজশাহী কিংসের হয়ে মিরাজ মাঠে নামবেন। মিরাজের বাবা আরও বলেন, ‘নিজের পরিবারের জন্য তিনি তেমন কিছু করতে পারেননি। ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার জন্য কোন অবদানও রাখতে পারিনি। কোচ ও শুভাকাক্সক্ষীদের সহযোগিতায় এবং নিজ দক্ষতায় মিরাজ আজকের অবস্থানে এসেছে। দেশের জন্য ভাল কিছু করলে আমি আরও বেশি খুশি হব। সকলে ওর জন্য দোয়া করবেন’। দুইদিনের অবসরে খুলনায় এসে ব্যস্ত সময় পার করেন মিরাজ। ক্রিকেটভক্ত, শুভাকাক্সক্ষী, সমর্থকসহ বিভিন্ন স্তরের হাজারো মানুষের শুভেচ্ছা, ভালবাসা, সংবর্ধনা, সেলফি ও মিষ্টিমুখ পর্বে সময় কেটে যায়। ঘরে মায়ের সজতনে রান্না খাবার খাওয়ারও ঠিক সময় মেলেনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনা সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিরাজকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন মিরাজের বাবা জালাল হোসেন, এনডিসি আতিকুল ইসলাম, মিরাজের কোচ আল মাহমুদ, কর্মসংস্থান ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক জিএম রুহুল আমিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এডিসি (সাধারণ) মনিরুজ্জামান, এডিসি (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম, এডিসি (এল.এ) সুলতান আলম, এডিসি (শিক্ষা) গিয়াসউদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদাউস ওয়াহিদ ও মিরাজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিপুল আইচ। অনুষ্ঠানে কোচ আল মাহমুদ মিরাজের ক্রিকেট জীবনের শুরুর বর্ণনা করেন। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে মিরাজের পরিবারের জন্য একটি বাড়ি প্রদানের দাবি জানান। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, মিরাজ খুলনার সন্তান হওয়ায় আমরা গর্বিত। সে কেবল খুলনার গর্ব নয়, সারা বাংলাদেশের গর্ব। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যারা অবদান রাখছেন তাদের অধিকাংশই খুলনার সন্তান। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘আমি সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক থাকাকালীন সৌম্য সরকার ও মোস্তাফিজের উত্থান হয়। আর খুলনায় আসার পর মিরাজের উত্থান। এজন্য আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।’ বুধবার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, ‘মিরাজদের জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে।’ অনুষ্ঠানে মিরাজ তার বক্তব্যে বলেন, এমন সংবর্ধনায় আমি সত্যিই আনন্দিত, অভিভূত। এমন দিন আমার জীবনে আসবে তা কল্পনা করিনি। তিনি বলেন, ক্রিকেটের জন্য অনেক পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। পরিবারের বাধা থাকার পরও কঠোর পরিশ্রমের ফলে আমি যে ভাল খেলছি তা সারা বাংলাদেশের অর্জন। তিনি বলেন, ইংল্যান্ড বধের পেছনে শুধু তার একার অবদানই নয়, সাকিব, তামিমসহ দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দেরও বড় অবদান রয়েছে। মিরাজ সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। পরে জেলা প্রশাসক সম্মাননা ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন সেনসেশন মিরাজ অভিষেক টেস্টে চট্টগ্রামে সাত উইকেট নিয়েছিলেন। ঢাকা টেস্টে নেন আরও ১২ উইকেট। দুই টেস্ট মিলিয়ে মোট শিকার ১৯। যা বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। দুই টেস্টের সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে মিরাজ ভেঙেছেন ১২৯ বছরের পুরনো রেকর্ড।
×