ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ভোগ নগরবাসীর

প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহাল দাবিতে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ নভেম্বর ২০১৬

প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহাল দাবিতে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহালের দাবিতে বুধবার ঢাকায় দোকানপাট বন্ধ রেখে সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘট পালন করেছে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম। ব্যবসায়ীদের ডাকা ধর্মঘটে দোকান ও বিপণিবিতান বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আগামী ২০ নবেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে বড় কর্মসূচীতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এদিকে, ধর্মঘট চলাকালীন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সব মার্কেট ও দোকান বন্ধ দেখা গেছে। জরুরী প্রয়োজনে দোকানে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মানুষকে। মালিবাগের বাসিন্দা মাহমুদ হাসান জনকণ্ঠকে জানান, সকালে জরুরী কিছু কেনাকাটা করতে গিয়ে পুরান ঢাকার চকবাজার মার্কেট তিনি বন্ধ পেয়েছেন। তাই কেনাকাটা না করেই তাকে ফিরে আসতে হয়েছে। পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলোয় সব মার্কেট ও দোকান বন্ধ দেখা গেছে। এর মধ্যে সিদ্দিক বাজার, নাজিরা বাজার, আলু বাজার, নর্থ সাউথ রোড, নবাবপুর রোড, বংশাল, ইংলিশ রোড, সদরঘাট, চকবাজার, নয়াবাজার, পাটুয়াটুলী ও ইসলামপুরের মার্কেট বন্ধ। পুরান ঢাকায় পণ্য ও মার্কেটভিত্তিক ব্যবসায়িক সংগঠন ধর্মঘটের সমর্থনে দোকানের সামনে ব্যানার ঝুঁলিয়ে রাখে। এলাকায় তারা মাইকিংও করছে এবং ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়ে মিছিল বের করেছে। ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের নেতারা জানান, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখেন দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে কি না। ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মকভাবে এই কর্মবিরতি পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। আবু মোতালেব আরও বলেন, পুরো ঢাকা শহরে এ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সামনে গত রবিবার এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ কর্মসূচী দিয়েছিল ঐক্য ফোরাম। নতুন ভ্যাট বা মূসক আইনে প্যাকেজ মূসক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা, মূসকের পরিমাণ কমানো, লেনদেন সীমা তুলে নেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন মূসক আইনের বাস্তবায়ন এক বছর পিছিয়ে দিলেও সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূসকের পরিমাণ ঢাকায় ১৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৮ হাজার টাকা করেন। পাশাপাশি লেনদেন সীমা ৮০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেন। এসব নিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা আপত্তি করছেন। বর্তমানে দোকান মালিকরা প্যাকেজ ভ্যাট বা বিক্রির ওপর বছরে নির্দিষ্ট অঙ্কের ভ্যাট রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরকে দিয়ে থাকেন। তবে ২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’-এ তা পরিবর্তন করে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের নিয়ম করা হয়। এ বছরের জুলাই থেকে নতুন পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায়ের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে অর্থমন্ত্রী তা এক বছর পিছিয়ে দেন। তবে প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা এখনও প্যাকেজ ভ্যাট বহালের দাবি জানিয়ে আসছেন। সেই সঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগও তাদের রয়েছে। এদিকে, ভ্যাট কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধ এবং প্যাকেজ ভ্যাট পূর্বের ন্যায় পুনর্বহালের দাবিতে আবারও ধর্মঘট, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট এ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপম্যান্ট ডিলার্স এ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন। বুধবার সকালে তোপখানা রোডে বিএমএ ভবনের সামনে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সহযোগী এই সংগঠনটি মানবন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে হয়রানির শিকার হবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এতে করে বড় ধরনের ক্ষতি গুণতে হবে তাদের। এ সময় প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ বলেন, আমরা যদি ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেই তাহলে এর প্রভাব পড়বে সাধারণ জনগণের ওপর। সেক্ষেত্রে সরকার প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ালে আমাদের কোন আপত্তি নেই। দাবি মেনে না নিলে পরবর্তীতে বড় ধরনের কর্মসূচী দেয়ার হুমকি দেন বক্তারা। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শামসুল হুদা, নির্বাহী সদস্য মোঃ আমিরুল ইসলামসহ অন্যরা। এছাড়াও একই সময়ে গুলশান, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেট বন্ধ করে মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের নেতাকর্মীরা। এছাড়া তোপখানা রোড, কাকরাইল ইত্যাদি এলাকারও বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে।
×