ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

ফিরিয়ে দাও অরণ্য থেকে হালদা

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৩ নভেম্বর ২০১৬

ফিরিয়ে দাও অরণ্য থেকে হালদা

জনপ্রিয় অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র শিল্পেও তার অবদান অনস্বীকার্য। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণেও তার সুখ্যাতি রয়েছে। আশির দশকের শেষদিকে মাত্র বাইশ বছর বয়সে ‘ফিরিয়ে দাও অরণ্য’ নামের চার পর্বের ধারাবাহিক টিভি নাটকে একজন মাদকাসক্ত যুবকের ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন তরুণ অভিনেতা তৌকীর আহমেদ। আশির দশকে বেশ কিছু জনপ্রিয় চরিত্রে তিনি অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং পরিচিতি লাভ করেন। সম্প্রতি তৌকীর ‘হালদা’ নামের নতুন একটি ছবি নির্মাণ করছেন। এছাড়া তার পরিচালিত সর্বশেষ ছবি ‘অজ্ঞাতনামা’ দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি ৮৯তম অস্কার আসরের জন্য ছবিটি মনোনীত হয়েছে। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। দক্ষ নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথম চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’ দিয়েই তিনি দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর একে একে ‘রূপকথার গল্প’ ও ‘দারু“চিনি দ্বীপ’ নির্মাণ করে তৌকীর আহমেদ দারুণ প্রশংসিত হন। সর্বশেষ তার পরিচালিত ছবি ‘অজ্ঞাতনামা’ গত ১৯ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে। এরই মধ্যে বোদ্ধাদের কাছে ছবিটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। শুধু দেশেই নয়, সম্প্রতি অজ্ঞাতনামা ভিন দেশের দুটি উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। কসোভোর চলচ্চিত্র উৎসব ‘দ্য গডেস অন দ্য থ্রোন’- এ সেরা পরিচালক ও সেরা চিত্রনাট্যকার এবং ওয়াশিংটন ডিসির সাউথ এশিয়ান ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেছেন তৌকীর আহমেদ। বিদেশী উৎসবে পুরস্কার প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তৌকীর আহমেদ বলেন, অজ্ঞাতনামা ছবির মাধ্যমে তিনি বাঙালীর সংস্কৃতিও সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এটি বিদেশী দর্শকদের ভাল লেগেছে বলে তিনি আনন্দিত। এটি তার পরবর্তী ছবি নির্মাণের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তৌকীর আহমেদ জানান, ২০১৫ সালে অজ্ঞাতনামা বইটি একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। এটি পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। এরপরই এটি চলচ্চিত্র হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এটি তার পরিচালিত চতুর্থ চলচ্চিত্র। মানব পাচারের কাহিনী নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি দেয়া শ্রমিক ও তাদের পরিবারের করুণ কাহিনী এতে তুলে ধরা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা ছবির রেশ না কাটতেই তৌকীর আহমেদ শুরু করেছেন তার নতুন ছবি ‘হালদা’র শূটিং। এটি তার পঞ্চম ছবি। বেশ কিছুদিন ধরে ছবিটির দৃশ্য ধারনের কাজ চলছে। বিশ্বের অন্যতম মৎস প্রজনন স্থান হালদা নদীর তীরের মানুষের যাপিত জীবন নিয়ে এ ছবির পটভূমি গড়ে উঠেছে। কারণ হালদাই বিশ্বের অন্যতম নদী যেখান থেকে মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়। এ ছবির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। এ ছবির প্রধান চরিত্রে রূপদান করবেন জনপ্রিয় তিন অভিনয়শিল্পী জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম ও তিশা। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ছোটপর্দার এ তিন তারকাকে এক সঙ্গে দেখা যাবে। জাহিদ-মোশাররফ-তিশা ছাড়াও এ ছবিতে আরও অভিনয় করছেন ফজলুর রহমান বাবু, রুনা খান ও দিলারা জামান। তৌকীর আহমেদ জানান, তিনি এখন হালদা ছবির দৃশ্য ধারণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই হালদা পাড়ের মানুষের জীবন, তাদের জীবনের প্রতিকূলতা, হাসি-কান্না, বেদনা এবং বিপন্ন হালদার অবস্থা নিয়েই এই চলচ্চিত্র। তবে তিনি মনে করছেন দৃশ্য ধারণের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যায় সম্মুখীন হতে পারেন। কারণ নদীর চিত্রায়ণ অনেক কঠিন। এছাড়া নৌকার চিত্রায়ণ খুব সময় সাপেক্ষও বটে। তবে এ বিষয়ে তার পূর্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার প্রথম ছবি ‘জয়যাত্রা’ পুরোটাই ছিল নৌকার ওপর। এবার দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে আবার একটি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তিনি। তবে ছবির কলাকুশলীদের সহযোগিতায় কঠিন কাজটি সহজসাধ্য করবেন বলে আশা করছেন। হালদা ছবিটিও ‘অজ্ঞাতনাম’র মতো দুটি সংস্করণে তৈরি করবেন বলে বলেন তৌকীর আহমেদ। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর জন্য যে সব ছবি পাঠানো হয় তার সবই সাধারণত ৯০-১০০ মিনিট ব্যাপ্তির হয়ে থাকে। কিন্তু এ দেশে সিনেমা হলে এত স্বল্পসময় ব্যাপ্তির ছবি প্রদর্শন করা হয় না। তাই আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্য আরও একটি সংস্করণ তৈরি করবেন। গল্পের ভিন্নতার কারণে তৌকীর পরিচালিত ছবিগুলো দর্শক সাদরে গ্রহণ করছেন। ছবির গল্প তৈরিতে কোন বিষয়টি প্রাধান্য দেন এমন প্রশ্নের জবাবে তৌকীর জানান, তিনি চলচ্চিত্রকে সমাজের দর্পণ মনে করেন। তাই ছবির গল্পে মানুষের কথা থাকবে, দেশের কথা থাকবে। যে গল্প মানুষ ও দেশের কথা বলে তার কাছে সেটি আদর্শ চলচ্চিত্র। তাই তিনি ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশ-সমাজ ও মানুষের চিন্তা ভাবনাকে গুরুত্ব দেন। দেশীয় চলচ্চিত্রের মান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৌকীর জানান, দেশীয় চলচ্চিত্র ভালর দিকে যাচ্ছে। তবে ব্যাণিজ্যিক ছবির মতো এখনও ভিন্ন ধারার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে না। আর কখনও প্রদর্শিত হলেও দর্শক ছবিটি বুঝে ওঠার আগেই সেটা হল থেকে নামিয়ে ফেলা হয়। দেশের পরিবেশকরা আগেই ধরে নেন, ভিন্নধারার ছবি ব্যবসা করে না। কিন্তু ছবিগুলো ঠিকই দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। পরিবেশকদের ভিন্ন ধারার ছবির প্রতি এগিয়ে আসতে হবে। দর্শক শুধু নাচ গান সমৃদ্ধ ছবি নয়, সাধারণ মানুষের জীবন ধারার ছবিও দেখতে চায়। সেটি দেখার সুযোগ করে দিতে হবে। তার বিশ্বাস, যে ছবিতে মানুষের ও জীবনের গল্প আছে, সেই ছবি ব্যবসা করবেই।
×