ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আঙ্কারাকে আবাদির হুঁশিয়ারি, মসুলে ইরাকী বাহিনীর প্রবেশ, ছয় লাখের বেশি শিশু আটকা পড়েছে

ইরাক সীমান্তে তুর্কী সৈন্য মোতায়েন

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৩ নভেম্বর ২০১৬

ইরাক সীমান্তে তুর্কী সৈন্য মোতায়েন

ইরাকী সীমান্তে তুরস্ক মঙ্গলবার কামান ও ট্যাংক মোতায়েনের পর আঙ্কারার যুদ্ধের উস্কানির বিরুদ্ধে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরাক আগ্রাসন তুরস্কের ধ্বংস ডেকে আনবে। তিনি যুদ্ধ চান না। তবে তুরস্ক জোর দিয়ে বলেছে, তারা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কাছ থেকে মসুল নগরী পুনরুদ্ধারে একটি ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু বাগদাদ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আইএস নিয়ন্ত্রিত শহরের কাছে মোতায়েন করা তুর্কী সৈন্য প্রত্যাহার করতে আঙ্কারার প্রতি বার বার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ইরাকী বাহিনী মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো মসুলের উপকণ্ঠে প্রবেশ করেছে এবং এক শীর্ষ কমান্ডার শহরটিতে আইএসের কাছ থেকে ‘সত্যিকারের স্বাধীনতা’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। খবর এএফপির। আইএসের কাছ থেকে মসুল পুনঃদখল করতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সমর্থন নিয়ে ইরাকী বাহিনী দুই সপ্তাহের মাত্র কিছু সময় আগে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে। এ জন্য তারা দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নেয়। ইরাকী বাহিনী বিভিন্ন দিক দিয়ে আইএসের ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হয়। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আবাদি বলেছেন, ইরাক আগ্রাসন তুরস্কের ধ্বংস ডেকে আনবে। আমরা তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না এবং আমরা তুরস্কের সঙ্গে সরাসরি বিরোধিতাও চাই না। কিন্তু যদি বিরোধিতা শুরু হয়, তাহলে তার জন্য আমরা প্রস্তুত। তখন তুরস্ককে আমরা আমাদের শত্রু বলে বিবেচনা করব এবং শত্রু হিসেবেই তাদের মোকাবেলা করব। তুর্কী সামরিক সূত্র জানিয়েছে, ইরাকী সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে তারা মঙ্গলবার ট্যাংক ও কামান মোতায়েন করেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইরাক সীমান্তের কাছে সিলোপি শহরের উদ্দেশে ৩০ যানের একটি বহর আঙ্কারা ত্যাগ করেছে। তুরস্কের অভ্যন্তরে কুর্দী বিদ্রোহী ও ইরাকে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কথা উল্লেখ করে তুর্কী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিরকি ইসিক বলেছেন, ওই অঞ্চলের পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আঙ্কাকার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ট্যাংক ও কামান মোতায়েন করা হয়েছে। যাই ঘটুক না কেন তুরস্ক তার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাগদাদ ও আঙ্কারার মধ্যকার দীর্ঘ বিরোধের সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণ হলো, ইরাক বার বার তুর্কী সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আসছে। অপরদিকে শীর্ষ তুর্কী কর্মকর্তাদের আক্রমণাত্মক ও বিদ্রƒপাত্মক মন্তব্য অব্যাহত রয়েছে। এদিকে মসুল অভিযানের জয়েন্ট সেন্ট্রাল কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মসুল শহরের বাম তীরের জুদাইদাত আল-মুফতি এলাকায় প্রবেশ করেছে সৈন্যরা। মসুল শহরকে তাইগ্রিস নদী দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। শহরের পূর্ব ভাগ বাম তীর নামে পরিচিত এবং জুদাইদাত আল-মুফতি শহরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এলিট ইরাকী বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ গাজ্জালি গ্রাম এবং শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ইরাকের রাষ্ট্রীয় টিভি ইরাকিয়ার স্থানীয় শাখার একটি ভবন দখল করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কাউন্টার টেররিজম সার্ভিসের (সিটিএস) সদস্যরা ওই এলাকায় ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে এবং পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্টে গত দুইদিন ধরে ব্যাপক যুদ্ধ হচ্ছে। গাজ্জালি থেকে সিটিএসের কামান্ডার জেনারেল তালেব শেগাতি আল-কেনানি ইরাকিয়া টিভিকে বলেছেন, মসুল শহরের ‘সত্যিকারের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শুরু হয়েছে। সিটিএসের এক লে. কর্নেল বলেন, এই এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আমরা সেনা ইউনিটের সঙ্গে কাজ করছি এবং মসুলের দিকে একত্রে এগিয়ে যাচ্ছি। আইএসের তীব্র প্রতিরোধ মোকাবেলা করে এগুতে হচ্ছে সরকারী বাহিনীকে। আইএস জঙ্গীরা রকেটচালিত গ্রেনেড, মর্টার, ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ও আত্মঘাতী গাড়ি বোমা ব্যবহার করছে। ইরাকের ১৬তম ডিভিশনের সেনারা মসুলের উত্তরে বহু গ্রাম দখল করেছে, অপরদিকে সরকারপন্থী আধাসামরিক বাহিনী বলেছে, তারা দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক গ্রাম পুনর্দখল করেছে। মসুলে আটকা পড়া বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ছয় লাখেরও বেশি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। তারা ইরাকী বাহিনীর প্রতি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ করিডর তৈরির আহ্বান জানিছে। সংস্থাটি বলেছে, শিশুদের রক্ষায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং ছয় লাখের বেশি শিশুসহ আটকে পড়া ১৫ লাখ বেসামরিক নাগরিকদের শহর ত্যাগের জন্য নিরাপদ রুট প্রয়োজন।
×