ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর মেলা

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ৩ নভেম্বর ২০১৬

আয়কর মেলা

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে সাত দিনব্যাপী আয়কর মেলা শুরু হয়েছে ১ নবেম্বর থেকে। এর বাইরেও সব জেলা শহরে ৪ দিন এবং ২৯টি উপজেলায় দু’দিনব্যাপী মেলা হবে। ৫৭টি উপজেলায় একদিন করে অনুষ্ঠিত হবে ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রামে আয়োজন করার পর থেকে ক্রমশই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আগে কর প্রদান সম্পর্কে মানুষের মধ্যে একটি ভীতি ও অনীহা কাজ করলেও ক্রমে তা দূরীভূত হচ্ছে। এর একটা কারণ হতে পারে যে, করদান পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত সহজীকরণসহ একই ছাদের নিচ থেকে সবরকম সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা। আয়কর মেলায় করদাতা ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিসের অধীনে আয়কর বিবরণীর ফরমসহ কর পরিশোধের নিমিত্ত পাবেন ব্যাংকের বুথও। নতুন ও পুরনো করদাতারা ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ (ই-টিআইএন) নম্বর নেয়াসহ এর পুনর্নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন। সীমিত পরিসরে অনলাইনেও কর প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত করমেলা জনপ্রিয়তার নিরিখে বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এবার আয়কর মেলার সেøাগান নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’। সত্য বটে, যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভিত্তি গঠিত হয়ে থাকে আয়কর প্রদানের ওপর। সরকার তো সাধারণত নিজে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা পরিচালনা করে না। সরকারী এবং যাবতীয় উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহ করতে হয় জনগণের অর্থে। সেক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব আয়ে ঘাটতি থাকলে সরকারকে নির্ভর করতে হয় বিদেশী ঋণ ও অনুদানের ওপর। তবে আশার কথা এই যে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা কমেছে অনেকাংশে। তাই বলে আত্মপ্রসাদের অবকাশ নেই। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং আয়কর প্রদানে সক্ষম জনগোষ্ঠীকে করের আওতায় আনতে এনবিআরকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র কয়েক লাখ আয়করদাতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না কিছুতেই। এনবিআর প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০০ করদাতার তালিকা প্রকাশ করেছে ২০১৫-১৬ করবর্ষে দেয়া করের ভিত্তিতে। এতে দেখা যায়, ১৮ লাখ করদাতার মধ্যে শীর্ষ করদাতা হচ্ছে একটি জর্দা প্রস্তুতকারী কোম্পানি। তালিকার দ্বিতীয় থেকে সপ্তম স্থানে রয়েছে একই পরিবারের কয়েকজন। অথচ দেশে বিপুল বিত্ত-বৈভব, ধন-সম্পদসহ শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার সংখ্যা কম নয়। বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিসহ চামড়া ও জুতা ব্যবসায়ীরাও আছেন। সিগারেট, জর্দা, গুল-তামাক জাতীয় পণ্য প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণে মৃত্যু ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানা সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়। তামাকজাত পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কহারও কম নয়। এরপরও দেখা যায় এ থেকে আহরিত করের পরিমাণ বাড়ছে ক্রমশ। উল্লেখ্য, জর্দা প্রস্তুতকারী কোম্পানিটি গত কয়েক বছর ধরেই রয়েছে শীর্ষ তালিকায়। সেক্ষেত্রে অন্যরা কী করছে, তা অনুসন্ধান করে দেখতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এনবিআর ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ নীতি যদি সত্যিই অনুসরণ করে থাকে, তবে কর ফাঁকিবাজদের ধরাও জরুরী ও অপরিহার্য। তা না হলে আগামীতে জাতীয় রাজস্ব আয় বাড়বে না এবং স্বনির্ভর অর্থনৈতিক উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এই অবস্থার অবসানকল্পে এনবিআরকে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ মুক্ত হতে হবে। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত করতে হবে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা। সর্বোপরি যথাসময় কর ও ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে নাগরিকদেরও হতে হবে যতœবান ও দায়িত্বশীল।
×