ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিষেধাজ্ঞার অবসান আজ রাতে

ইলিশ উৎপাদন এবার সাড়ে ৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ নভেম্বর ২০১৬

ইলিশ উৎপাদন এবার সাড়ে ৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আজ (বুধবার) রাত ১২টার পর উঠে যাচ্ছে সাগরে ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। গত ১২ অক্টোবর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। এই ২২ দিনে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক নজরদারির কারণে এবার এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ফাঁকফোকরে কয়েকটি স্থানে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরার ঘটনা ঘটেছে। তবে তা মা ইলিশ রক্ষার ক্ষেত্রে নেতিবাচক কোন প্রভাব পড়বে না। এর ফলে এবার দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে মৎস্য অধিদফতর। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁদপুর স্টেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আনিসুর রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, তার নেতৃত্বে একটি দল সাগর এলাকায় এখনও গবেষণায় রত আছেন। তিনি জানান, নদী মোহনায় মিঠা পানিতে ডিম ছেড়ে সাগরে যাওয়ার পথে অসংখ্য মা মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ে যায় বিধায় এবার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বিগত সময়ের চেয়ে সাতদিন বাড়িয়ে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে আশা করা হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মা ইলিশ রক্ষা পেয়েছে। আগামীতেও এসব মা ইলিশ দলে দলে ডিম ছাড়ার জন্য নতুনভাবে আসবে। এদিকে, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টিকে টার্গেটে রেখে ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত ফিশিং বোট ও মাঝিমাল্লাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সাগরে যাওয়ার জন্য জাল মেরামত থেকে শুরু করে বরফ সংরক্ষণের পাশাপাশি ফিশিং বোটেও প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ সারিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন শুধু যাত্রার অপেক্ষা। চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট এলাকা, সীতাকু-, সন্দ্বীপ, কক্সবাজার থেকে শুরু করে চাঁদপুর, হাতিয়া, বরগুনা, পটুয়াখালী, হয়ে খুলনা অঞ্চল পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকা জুড়ে ইলিশ আহরণে নিয়োজিত হাজার হাজার বোট এখন সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। উল্লেখ্য, এবারের মৌসুমে ব্যাপক পরিমাণে ইলিশ আহরিত হওয়ায় সর্বত্র আশার সঞ্চার হয়েছে। কারণ, ইতোপূর্বেকার মৌসুমগুলোতে ইলিশ আহরণের পরিমাণ কেবলই হ্রাস পেয়েছে। যা নিয়ে মৎস্য অধিদফতর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জেলেদের মাঝেও নেমে আসে হতাশা। সঙ্গত কারণে সরকার পক্ষে গেলবারের সময়ের সঙ্গে আরও সাতদিন যুক্ত করে ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। যা গত ১২ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। ইলিশ আহরণে নিয়োজিত মাঝিমাল্লাদের পাশাপাশি ট্রলারগুলোও সাগর থেকে ফিরে আসে। এ সময়ে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী আহরণের পাশাপাশি মজুদ, বেচাকেনা সবই বন্ধ ছিল। তবে বিক্ষিপ্ত পর্যায়ে চোরাপথে এর ব্যত্যয় যে হয়নি তা নয়। বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত অভিযানে ইলিশ জব্ধ করার ঘটনা ঘটেছে। কিছু জেলের সাজাও হয়েছে। ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে ইলিশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এবার সাগরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে এবং এর ফলে বাজারে মূল্যও কমেছে। সাধারণ মানুষ সহজে ইলিশের স্বাদ নিতে পেরেছেন। প্রসঙ্গত, মা ইলিশ রক্ষায় এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রথমে সরকার ১১ দিন আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু এরপরও মা ইলিশ নিধন হতে থাকায় তা বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়। কিন্তু এতেও দেখা যায় মা ইলিশ রক্ষা পাচ্ছে না। ফলে এবার ২২ দিন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সময় প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশ নিষিদ্ধের আইন কার্যকর থাকে। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময়কালীন যে সমস্ত জেলেরা বেকার সময় কাটাবে তাদের জন্য সরকার জেলে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি করে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু এ বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায়নি। সবচেয়ে বড় উদাহরণ চট্টগ্রামের সীতাকু-ে গত সোমবার চাল বিতরণের কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়েছে। অথচ আজ রাত ১২টার পর জেলেরা সাগরে পুনরায় ইলিশ আহরণে যাত্রার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। এ অবস্থায় মৎস্য অধিদফতর সূত্রে সংশ্লিষ্ট জেলেরা না থাকলেও লিস্ট অনুযায়ী তাদের পরিবারের সদস্যরা এ চাল পাবে। এদিকে, এবারের মৌসুমে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছে এ কারণে যে, দেশের বিভিন্ন নদনদীতে এবার ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। যা ইতোপূর্বেকার সময়ে ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছিল। উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশে যে সব স্থানে ইলিশ উৎপাদন হয় তার মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির গড় পরিমাণ ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। অপরদিকে ড. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, মাছ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যে ১১টি দেশে ইলিশ পাওয়া যায় সে সব দেশের ১০টিতেই এর উৎপাদন কমেছে। একমাত্র বাংলাদেশেই এসেছে সফলতা। বেড়েছে উৎপাদন। সঙ্গত কারণে, তাদের গবেষণা অনুযায়ী এবার ইলিশের উৎপাদন সাড়ে চার লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন। এছাড়া ইলিশের সার্বিক বিষয় নিয়ে বর্তমানে তারা সাগরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরও ফিরে আসার সময় হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ফিরে আসার পর ইলিশ নিয়ে নতুন তথ্য মিলবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
×