ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২ নভেম্বর ২০১৬

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাগারে আটক থেকেও প্রতিদিন রাজধানীর নিউমার্কেটে যাতায়াত করতেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তবে একা নয়, আরও বেশ কয়েক নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়েই কারাগারের মেন্টাল সেল থেকে বের হতেন তিনি। এ সময় সবার পরনে থাকত সুন্দর ও পরিপাটি পোশাক। বিষয়টি চিন্তার বটে! এমনই কথা জনসমুখে প্রকাশ করলেন অর্থমন্ত্রী। তবে বিষয়টি তিনিই খোলাসা করলেন। বললেন, নিউমার্কেটে যেতাম- তবে মনে মনে, বাস্তবে নয়। নিজেকে সান্ত¡না দিতে আর আটক অন্য রাজবন্দী নেতাকর্মীদের সাহস যোগাতে এসব কথা অন্য বন্দীদের শোনাতাম। যাতে তারা হতাশ না হন। সত্যিকারার্থে আমরা কারাগারের গেটে গিয়েই হাঁটাহাঁটি করে ফিরে আসতাম। মঙ্গলবার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ২২৮ বছর পর প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার জীবন নিয়ে দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। কারাভ্যন্তরে দেশে এই প্রথমবারের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জার্নি ও কারা অধিদফতরের সহায়তায় ১ থেকে ৫ নবেম্বর পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে ১৪৫টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। আজ থেকে সর্বসাধারণের জন্য এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য প্রতিজনকে ১শ’ টাকা মূল্যের টিকেট ফি পরিশোধ করতে হবে। প্রদর্শনীর অর্জিত অর্থ কারাগারের ভেতরে আটক নারীদের সঙ্গে আসা শিশুসন্তানদের জন্য খেলনা কেনার কাজে ব্যবহার করা হবে। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কারাগারে শহীদ জাতীয় নেতা এইচ এম কামরুজ্জানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন, স্থানীয় এমপি হাজী সেলিম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও প্রদর্শনীর কিউরেটর আব্দুল মোমেন, জার্নির চেয়ারম্যান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ড. ফজলুল হক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে কারা উপমহাপরিদর্শক ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সহযোগী সংগঠন জার্নির পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজি প্রিজন্সসহ অনুষ্ঠানে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অর্থমন্ত্রী ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার দায়ে আটক ৮ জন বন্ধুকে নিয়ে জেলে কাটানো ৪২ দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আসার পর আরও ৫শ’ ছাত্রকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান সরকার। তখন রাজবন্দীদের বিভিন্ন সুবিধা দিলেও সাধারণ বন্দীদের অনেক অত্যাচার করা হতো। এই কারাগারটি শুধু বঙ্গবন্ধুই নয় দেশ স্বাধীনের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল গ্রেফতার হয়ে সবাইকে কম বেশি আসতে হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, শুধু রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু মাত্র ২ বছরে ৭৭টি মামলায় জড়ানো হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নাজিমউদ্দীন রোডের কারাগারটির প্রতি যথেষ্ট স্মৃতি আছে। তাই আমরা চাই এ কারাগারের স্থানটিতে ইতিহাস ও ঐতিহ্য ঠিক রেখে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুশাসন অনুযায়ী বেশি পরিমাণ খোলা স্থান রেখে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হোক। এ স্থানটি হোক পুরান ঢাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত স্থান। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে তিনি কারা মহাপরিদর্শককে যুগোপযোগী বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। এছাড়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতারও আশ্বাস। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কারাগারের এ স্থানটিকে পুরান ঢাকার শ্রান্তি বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ এলাকার মানুষ যেন একদ- শান্তি পেতে পারে। আমরা এ লক্ষ্যে কারা অধিদফতরকে নিয়ে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে শহীদ সন্তান হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী চক্রটি মনে করেছিল যে দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু দেশবাসী স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা ভাবতে লাগল যে কোথায় যাচ্ছে দেশ? আমরা কি আবার পাকিস্তানে ফেরত যাব? এমন অবস্থা থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে দেশ গড়ায় হাত দিয়ে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে। ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান কারাগারে সন্ধ্যার পর যেখানে কোন মানুষ প্রবেশ নিষেধ, সেখানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কুখ্যাত খন্দকার মোশতাক বঙ্গভবন থেকে ফোন করে অস্ত্রসহ জেলের তালা খুলতে বাধ্য করেছিল। কারাভ্যন্তরেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় ৪ নেতাকে। যা বিশ্বে বিরল। কিউরেটর আব্দুল মোমেন বলেন, সুখের খবর এই যে, কারাগারে ৪ নেতাকে হত্যা করা হয় সেই একই কারাগারেই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তাই তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। যাতে জনগণ ইতিহাস জানতে পারে।
×