ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া এই তরুণের সঙ্গে বিপিএলে মাঠে নামতে উন্মুখ ড্যারেন সামি

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতকে পথ দেখিয়েছেন মিরাজ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ নভেম্বর ২০১৬

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতকে পথ দেখিয়েছেন মিরাজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আর দু’দিন পরই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০। এবার রাজশাহী কিংসের হয়ে মাঠে নামবেন তরুণ উদীয়মান মেহেদি হাসান মিরাজ। সেই দলটির পরিচিতি ও জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানটি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ চলার সময় হয়েছে। সে সময় মিরাজ বলেছিলেন, ‘জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছাটা পূরণ হলো না এবার। আশা করছি বিপিএলে ভাল খেললেই সেটা হবে।’ কিন্তু টেস্ট সিরিজেই সুযোগ পেয়ে গেলেন এবং সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ইতিহাসও গড়লেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ঐতিহাসিক জয়টা আসলো দুই ইনিংসেই এ ডানহাতি অফস্পিনার ৬ উইকেট করে শিকার করার কারণে। সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন। এরপর থেকে মিরাজ বন্দনা বিশ্ব মিডিয়ায়। চলতি মাসেই ভারত সফরে ৫ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও ৩ টি২০ খেলবে ইংল্যান্ড। ভারতীয় দল মনে করছে ইংলিশ বধের মন্ত্রটা কি হতে পারে সেটা মিরাজ জানিয়ে দিয়েছেন। তার পথ অনুসরণ করেই এবার ইল্যান্ডের মোকাবেলা করতে চায় ভারত। এবার রাজশাহী কিংসের নেতৃত্বে থাকবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি২০ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ড্যারেন সামি। তিনিও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়টা দেখেছেন। আশ্চর্য হয়েছেন মিরাজের বিস্ময়কর বোলিং দেখে। জানিয়েছেন মিরাজের সঙ্গে মাঠে নামার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি। টুইটারে লিখেছেন, ‘এই শিহরণ জাগানো প্রতিভার সঙ্গে মাঠে নামার জন্য আর অপেক্ষায় থাকতে পারছি না।’ ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো এবং সাবেক ক্রিকেটাররাও মিরাজে মুগ্ধ। মাইক আথারটন, নাসের হুসেনরা মিরাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ধারাভাষ্যকার হুসেন সরাসরি মাঠে থেকেই দেখেছেন এ তরুণকে। সিরিজে মিরাজের নৈপুণ্যকে ১০ এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৫ রেটিং দিয়েছেন তিনি। তিনি দাবি করেছেন বেন স্টোকস না থাকলে হোয়াইটওয়াশ হয়ে যেত ইংল্যান্ড। ব্রিটিশরা যখন পরাজয়ের বেদনায় নীল তখন ভারতীয়রা দারুণ উজ্জীবিত। কারণ কয়েকদিন পরেই এ্যালিস্টার কুকদের মোকাবেলা করবে তারা। এ বিষয়ে ভারতীয় এক গণমাধ্যম দাবি করেছে ইংল্যান্ড বধের পথটা দেখিয়ে দিয়েছেন মিরাজ। ১৯ বছর বয়সে নিয়েছেন এক সিরিজে ১৯ উইকেট। তাই ভারতীয় পত্রিকাটির দাবি মিরাজ বড় উপকার করে দিয়েছেন ভারতের। এবার মিরাজের দেয়া সূত্র মেনেই ইংলিশদের ভোগাবে ভারত! ৩২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ টেস্টের সিরিজ খেলতে যাচ্ছে ভারত। নিজেদের মাঠে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সূত্রটা বেশ ভালভাবেই জানা আছে তাদের। আর এবার মিরাজতো রাস্তাটা খোলাসাই করে দিয়েছেন। সেই পথ অনুসরণ করে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা ও অমিত মিশ্রদের ঘূর্ণি জাদুতেই ইংলিশদের পর্যুদস্ত করা সম্ভব হবে। তারা লিখেছে, ভারতের ভিডিও এ্যানালিস্টদের এখন পুরনো ভিডিও ঘাঁটার কোন প্রয়োজন নেই। মিরাজের বোলিং দেখলেই চলবে। তাহলেই তারা বুঝে যাবেন, কার বিপক্ষে বল ফেলতে হবে কোথায়, কেমন হবে সেই বল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ‘সফরকারী অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুককে হয়তো নাম মনে করতে বারবার কষ্ট করতে হচ্ছিল, মিরাজকে উল্লেখ করছিলেন ‘ওদের ওই বোলারটা’! কিন্তু এই ঘূর্ণিধাঁধায় পড়ার দুঃসহ স্মৃতি দ্রুত ভুলে যাওয়ার কোন সুযোগ কুকের নেই।’ তবে মিরাজ স্পেশালিস্ট কোন স্পিনার নয় সেটাও প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে। তিনি আগে ব্যাটসম্যান, তারপর বোলার। কিন্তু তারপরও সেই মিরাজের বোলিংয়ে কুপোকাত হয়েছে ইংল্যান্ডের দীর্ঘ ব্যাটিং লাইনআপ। তারা লিখেছে, ‘মিরাজের প্রধান অস্ত্র ছিল বিরামহীনভাবে নিখুঁত বোলিং করে যাওয়া। তার বোলিংয়ে খুব বেশি বৈচিত্র্য হয়তো নেই, ওর হয়তো আর্ম বলের মতো অস্ত্র নেই, কিন্তু এ ধরনের উইকেটে যেখানে প্রতিপক্ষ আত্মবিশ্বাসই হারিয়ে ফেলে উইকেটের ঘূর্ণি? দেখেই, সেখানে নিখুঁত বোলিং করে যাওয়াটাই যথেষ্ট। ওর মতো আনকোরা স্পিনার যদি এভাবে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিতে পারে, তাহলে এখনকার বিশ্বের সেরা স্পিনার অশ্বিন কিংবা রবীন্দ্র জাদেজাদের কি করার আছে, সেটা তো সহজেই অনুমেয়।’ কিন্তু মিরাজকে থেমে গেলে চলবে না। সবে শুরু। বিশ্ব ক্রিকেটে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকার জন্য এমনটা করে দেখাতে হবে অনেক। এ বিষয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘এখন নিশ্চয়ই ঘোরের মধ্যে কাটছে তার সময়। কিন্তু মিরাজ দুইমাস সময় পাবেন সবকিছু নতুন করে ভাবার। সামনে বাংলাদেশ দল যাবে নিউজিল্যান্ডে। প্রতিকূল উইকেট, তাকে নিয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ, দুর্বলতা, শক্তি আবিষ্কার করে ফেলা। সেটিও জয় করাই মিরাজের আসল চ্যালেঞ্জ।’
×