ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট

ইজারাদারের মর্জিমাফিক টোল

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১ নভেম্বর ২০১৬

ইজারাদারের মর্জিমাফিক টোল

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ইজারাদারের যেমন মর্জি তেমনই আদায় করা হচ্ছে টোল। যানবাহনের চালকদের জিম্মি করে ইজারাদারের নিয়োগকৃত টোল আদায়কারীর জুলুমবাজির প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয়। তাই মুখবুজে এসব অনিয়ম ও জুলুমবাজি সহ্য করে যাচ্ছেন যানবাহনের চালকরা। ফলে অতিরিক্ত টোল গুনতে হচ্ছে এ রুটের চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীদের। বরিশালের মুলাদী ও হিজলা উপজেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর মীরগঞ্জ ফেরির টোল নিয়ে এভাবেই অভিযোগ করেছে নিয়মিত এ রুটে চলাচলকারী অসংখ্য যানবাহন চালক। বরিশাল জেলা সদরসহ অন্যান্য জেলা ও রাজধানী থেকে সড়ক পথে মুলাদী ও হিজলা উপজেলায় যেতে হলে বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জের এ ফেরি পারাপার হতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, এখানে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৯/১০ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। সন্ধ্যায় এ ভাড়ার হার আরও বেড়ে যায়। ফেরির ওপর নির্ভরশীল যানবাহন চালকরা ইজারাদারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেও প্রতিকার হচ্ছে না। মিনি ট্রাকচালক রাসেল আকন অভিযোগ করেন, মীরগঞ্জ ফেরিতে যেতে এবং আসতে তার কাছ থেকে ভাড়া রাখা হয়েছে সাড়ে ১৬শ’ টাকা। ভাড়ার রশিদ চাইলে তাকে দেয়া হয়নি। রাসেল আক্ষেপ করে বলেন, ঢাকার মাওয়া ফেরি পার হয়েছেন ১৩’শ টাকা দিয়ে। সে তুলনায় এখানে পথ হবে ২০ ভাগের এক ভাগ। তার পরেও তাকে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়েছে। কাভার্ড ভ্যানের চালক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, এ ফেরিতে যাওয়া আসার জন্য তার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে সাড়ে ১৪’শ টাকা। তবে তার ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় সন্ধ্যার পর বাড়তি আরও ৫শ’ টাকা ও গাড়ি প্রতি এক শ’ টাকা করে বকশিশ দিতে হবে। বরিশালের রেন্ট-এ কারের চালক আসাদুজ্জামান কাবুল জানান, তারা সহজে ভাড়া নিয়ে মুলাদী ও হিজলায় যেতে চাননা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ফেরি ভাড়ার চার্টে মাইক্রোবাসের ভাড়া ৩৮ টাকা উল্লেখ থাকলেও তাদের কাছ থেকে আট শ’ টাকা করে আদায় করা হয়। সূত্রমতে, এ ফেরির জন্য বাস-ট্রাক ভাড়া ৯৫ টাকা, মিনিবাস ৪৮ টাকা আর মাইক্রোবাস ও পিকআপের বেলায় ৩৮ টাকা ভাড়া সরকারীভাবে নির্ধারণ করা রয়েছে। এরইমধ্যে গত ২১ অক্টোবর থেকে নতুন তালিকায় এ ফেরি পারাপারে ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয়েছে বড় ট্রাক ২শ’, মিনি ট্রাক ১শ’, বড় বাস ৯০, মাইক্রোবাস ৪০, কার ২৫ এবং মোটরসাইকেল ৫টাকা হারে। তবে এসব ভাড়া নির্ধারণ কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকলেও ইজারাদারের কাছে কানাকড়ি মূল্যও নেই। এ রুটে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা অভিযোগ করে, শুধু ফেরি ঘাটের ইজারাদারই নয়, এ ঘাটের ট্রলার চালকরাও যাত্রীদের জিম্মি করে নদী পারাপারের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে আসছেন। তাদের প্রতিবাদ করতে গেলেই যাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিক লাঞ্ছিত হতে হয়। ফলে তারা মুখ বুজে সব অনিয়ম ও জুলুম সহ্য করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, যানবাহন থেকে ফেরির টোল আদায়কারীদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ট্রলার যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে এ ঘাটে প্রতিনিয়ত বাগ্বিত-া লেগেই রয়েছে। মাঝেমধ্যে যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের সাথে ফেরির টোলআদায়কারী এবং ট্রলার শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এমনকি হামলার ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা সত্ত্বেও আজও কোন প্রতিকার মেলেনি। শারীরিক লাঞ্ছিতর অভিযোগ অস্বীকার করে মীরগঞ্জ ফেরির টোল আদায়কারী শহিদুল ইসলাম জানান, গাড়ি অনুযায়ী তারা আসা-যাওয়ার জন্য সর্বনিন্ম ৪’শ এবং সর্বোচ্চ ১৪’শ টাকা করে ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানান, ফেরির প্রতিটি ট্রিপে প্রায় ১৫’শ টাকার তেল খরচ হয়। সে অনুযায়ী প্রতি ট্রিপে খরচ অনুযায়ী যানবাহন পারাপার না হওয়ায় বাধ্য হয়েই তালিকার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে যানবাহনের চালকদের জরুরি প্রয়োজনে একটি গাড়ি নিয়েই ফেরি চালানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারা ফেরির খরচ হিসেবে অতিরিক্ত টাকা দিলেতো আর দোষের কিছু নয়। কারও কাছ থেকে জুলুম করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের জেলার সাধারণ সম্পাদক রণজিত দত্ত অভিযোগ করেন, শুধু মীরগঞ্জ ফেরি কিংবা ট্রলার ঘাটেই নয়, বরিশালের সব ঘাটেই ঠিকাদাররা যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তিনি আরও জানান, ইজারাদাররা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বা তাদের সহায়তা পাওয়ায় সরকারের নিয়মের কোন তোয়াক্কা করছে না। টোল আদায়ের অনিয়ম নিয়ে ভোক্তাদের স্বার্থে তিনি জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারকেরও অবহিত করেছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ শাহেদ বলেন, আমাদের প্রতিটি ফেরিঘাটে ভাড়ার তালিকা টানানো রয়েছে। এর বাইরে কোন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুনিদিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান বলেন, মীরগঞ্জসহ জেলার কয়েকটি ফেরি ও ট্রলার ঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে ইতোমধ্যে একাধিক অভিযোগ পেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মনিটরিং ব্যবস্থা আরও বাড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×