ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে পেট্রোবাংলা

শেভরনের তিনটি গ্যাস ক্ষেত্রই কিনতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১ নভেম্বর ২০১৬

শেভরনের তিনটি গ্যাস ক্ষেত্রই কিনতে চায় সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেভরনের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র কিনতে চায় সরকার। বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের এশিয়া ছাড়ার ঘোষণা আসার পর প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। সম্প্রতি শেভরনের এশিয়া অঞ্চলের সকল সম্পদ বিক্রির ঘোষণা আসে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শেভরনের সম্পদ মূল্যায়নের জন্য আরএসএ ক্যাপিটালের সঙ্গে সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ বৈঠক করেছে। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক শেভরনের সম্পদ মূল্যায়নের আরও কিছু কাজ পেতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সোমবার রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বাংলাদেশের এ আগ্রহের কথা জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তবে সরকার যদি মনে করে তবে শেভরনের গ্যাসক্ষেত্রগুলো কিনে নিতে পারে। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক রাতে জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের বেশিরভাগ গ্যাস পাওয়া যায় শেভরন পরিচালিত তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে। সঙ্গত কারণে আমরা এ সম্পদ ক্রয় করা যায় কি-না তা বিবেচনা করছি। তবে এখনও শেভরন আমাদের আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি, বিষয়টি আনুষ্ঠানিক নয়। যেহেতু সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাই পেট্রোবাংলা প্রাথমিক কাজটি করছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে জানান, আমরা আগ্রহী। তবে এখনও আমরা শেভরনকে বাংলাদেশর আগ্রহের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাইনি। আমরা আন্তর্জাতিক একটি কোম্পানিকে দিয়ে শেভরনের সম্পদ মূল্যায়ন করিয়ে আমাদের আগ্রহের কথা জানাব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে অনেকেই আসছেন যারা শেভরনের সম্পদ মূল্যায়ন করে দিতে চান। কিন্তু এখনও কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। পেট্রোবাংলাকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। শেভরনের ঢাকা অফিসের একটি সূত্র বলছে, শেভরনের সম্পদ বিক্রির আনুষ্ঠানিক খবর তাদের জানানো হয়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে শেভরনের যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের দেয়া বক্তব্য তারা পড়েছেন। সূত্র জানায়, শেভরন শুধু বাংলাদেশ নয়; ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সম্পদ বিক্রি করছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াতে শেভরন এলএনজি খাতে বিনিয়োগের পর কিছুটা আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে। শেভরনের হাতে দেশের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এগুলো হলোÑ বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার। এর মধ্যে বিবিয়ানাতে মজুদের পরিমাণ ৫ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ), জালালাবাদের মজুদ ১ দশমিক ১৮ টিসিএফ ও মৌলভীবাজার ক্ষেত্রের মজুদের পরিমাণ দশমিক ৪২ টিসিএফ বলে শেভরন দাবি করছে। এ গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সঙ্গে শেভরনের অবকাঠামো রয়েছে। দেশে প্রতিদিন মোট উত্তোলনের ৫০ ভাগই আসে এ তিন গ্যাসক্ষেত্র থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৮ আগস্ট জ্বালানি খাতের সবচেয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। ব্রিটিশ কোম্পানি শেল অয়েলের কাছ থেকে মাত্র ৯ লাখ পাউন্ডে কিনে নেয়া হয় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র। দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাসও এর মধ্যে রয়েছে। দেশে কম দামে গ্যাস পাওয়ার মূলমন্ত্র হিসেবে এ চুক্তিকে বিবেচনা করা হয়। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর সময় ছাড়া বাংলাদেশের অন্য সরকার বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাসক্ষেত্র ক্রয় করেনি। সব সরকারই দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো বহুজাতিক কোম্পানির হাতে ইজারা দিয়েছে। এখন শেভরন ক্রয় করে আবারও উদাহরণ সৃষ্টি করা যায়। যদিও এর ভিন্নমতও রয়েছে। শেভরনের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার রিজার্ভ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পেট্রোবাংলার। বিষয়টি নিয়ে এক সময় বিরোধে জড়ায় দু’পক্ষ। শেভরন যা দাবি করেছে পেট্রোবাংলা ওই পরিমাণ গ্যাস নেই বলে উল্লেখ করেছিল। পরে তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। এখানে সঠিকভাবে সম্পদের মূল্যায়ন না হলে ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করা হয়।
×