ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাসদের আলোচনা

আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিজয়ী না হলে মৌলবাদের উত্থান ঘটবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ নভেম্বর ২০১৬

আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিজয়ী না হলে মৌলবাদের উত্থান ঘটবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিজয়ী না হলে দেশে মৌলবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটবে। রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে গোটা দেশে। আক্রান্ত হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থেকে শুরু করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তমনের মানুষগুলো। অশান্ত হয়ে উঠবে গোটা দেশ। তাই যে কোন মূল্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সোমবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য জঙ্গী নির্মূল কর, জঙ্গী সঙ্গী বর্জন কর ও বিচার কর-দুর্নীতি ও বৈষম্যের অবসান কর-সুশাসন ও সমাজতন্ত্রের বাংলাদেশ গড়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যে দেশকে জঙ্গীমুক্ত করা হবে। এ বিষয়ে ইনু ভাই আমার চেয়ে অনেক ভাল বলেছেন। তিনি জঙ্গী বিরোধী বক্তব্যে আমার চেয়ে মাস্টার বলেও উল্লেখ করেন নাসিম। আলোচনা সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য জাসদের (ইনু) স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর জাসদের অভ্যুত্থান হয়েছিল। একদিনের জন্য সেদিন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত ঐক্য হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা জিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম, মোশতাকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম। এজন্য অবশ্য মাশুলও দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, নীতির বিরুদ্ধে থাকায় জাসদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু কখনও ষড়যন্ত্র করেনি। বরং আওয়ামী লীগের মধ্যেই ষড়যন্ত্র হয়েছিল তখন। তিনি বলেন, আগামীতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ১৪ দলকে বিজয়ী হতেই হবে। কারণ বিএনপি-জামায়াত যদি আবারও ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। দেশটা পাকিস্তান-আফগানিস্তান বানিয়ে ফেলবে তারা। এটা আমরা হতে দিতে পারি না। শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের কবর থাকবে না জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, জিয়া শেখ মুজিবের খুনের সঙ্গে জড়িত, কর্নেল তাহেরের খুনী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির আশ্রয়দাতা। তার দল বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে আমাদের বর্জন করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তারা নানা কায়দায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। যে কোন মূল্যে তাদের লক্ষ্যকে ঠেকাতে হবে। আজ যারা সাম্প্রদায়িক হামলা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে তারাও নিরাপদ নয়। একদিন সবাইকে মৌলবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি দেশে মৌলবাদী শক্তি উত্থানের কারিগর। জামায়াত ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ইনু বলেন, আগুন সন্ত্রাসী ও উগ্র মৌলবাদীরা এখন চিহ্নিত। তাদের সবাই মিলে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। বিপথগামীদের সঙ্গে দেশপ্রেমিকদের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। যেন বাংলাদেশে আর কোন অবস্থাতেই তারা কখনই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার প্রমুখ। এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া না গিয়ে ঠিক কাজ করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জেএসডি কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির উদ্যোগে দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন। বঙ্গবীর আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ওই সম্মেলনে গেলে তাকে কথাই বলতে দেয়া হতো না। এমনকি বসতেও দেয়া হতো না। তার জন্য কোন চেয়ারও রাখা হতো না। তিনি বলেন, ওই সম্মেলনে সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরী এবং স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলক আসম রবও গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কি সম্মান পেয়েছেন তা জাতি জানে। সেখানে তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, বিদেশীরা এ সরকারের অনেক প্রশংসা করেছেন ওই সম্মেলনে গিয়ে। অথচ দেশের কোন একটি রাজনৈতিক দল সেখানে তাদের শুভেচ্ছা জানাতে পারেনি। তিনি বলেন, বিদেশীদের মুখে এত প্রশংসা শুনতে যাবেন না। এটা বেশি ভাল না। ওই সম্মেলনটা আসলে সম্পূর্ণ ব্যর্থ একটা সম্মেলন। ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শেখ মুজিব গান্ধী হতে চেয়েছিলেন। দেশ চালানোর দায়িত্ব তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতেই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেই তার মত পাল্টে গেল। এর কারণ জাতি একদিন খুঁজে বের করবে। তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করে সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে তারা গণতন্ত্রের পথে হাঁটছেন না। দেশটা সঠিক পথে নেই। অনুষ্ঠানে বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান দলমত নির্বিশেষে সকলকে বিভিন্ন ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হবার আহ্বান জানান। তিনি পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দেশের অবস্থা এত ভাল হলে পত্র-পত্রিকায় গুম, হত্যা, রাহাজানি অপহরণের এমন ভয়াবহ পরিসংখ্যান কেন। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে রব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের জন্যই জেএসডির জন্ম হয়েছিল। তিনি বলেন, পাকিস্তানীরা মনে করতেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দেয়া যাবে না- এতে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাবে। এখন আওয়ামী লীগ মনে করছে, অন্য কোন দলকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না- এতে তাদের কি পরিণতি হবে তা ভবিষ্যতই নির্ধারণ করবে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্য নেতা এস এম আকরাম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সাইফুল হক, মফিজুল ইসলাম কামাল প্রমুখ।
×