ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১২৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত

কর দিতে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১ নভেম্বর ২০১৬

কর দিতে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সর্বোচ্চ করদাতা ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ১২৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড দেবে সরকার। এজন্য ‘জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা (সংশোধিত), ২০১০’ খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া গম ও ভুট্টার উন্নয়ন ও উৎপাদন সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মন্ত্রিসভা ‘বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬’ এবং ‘বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। সচিবালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ অনুমোদনের কথা বলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তুলতে অধিকসংখ্যক সর্বোচ্চ করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড প্রদানের লক্ষ্যে এ সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে সরকারের উন্নয়নের অগ্রগতি তুলে ধরলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসনকে আরও গতিশীল করতে হবে। সকলকে সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিং চালু করতে হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান ট্যাক্সদাতাদের কার্ড দেয়ার প্রসঙ্গ তুললে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, যারা ট্যাক্স দেন তাদের বেশি হয়রানি করা হয়। এতে অনেকে ট্যাক্সের আওতাভুক্ত হতে চান না। এছাড়া সর্বোচ্চ কর আদায়কারীকে পুরস্কৃত করার ঘোষণায় হয়রানি বেড়ে গেছে। কর দিতে গেলে নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এতে অনেকে এড়িয়ে যান। এটা না করে করদাতাদের বেশি সুযোগ-সুবিধা দিলে মানুষ বেশি করে কর দিতে উৎসাহী হবেন। পাশাপাশি করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ বক্তব্যে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। কর দিতে গিয়ে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। সূত্র জানায়, ট্যাক্স কার্ডধারীরা সিআইপি মর্যাদা পাবেন। তাঁরা ট্রেন ও বিমানের টিকেটে পাবেন বিশেষ সুবিধা। এছাড়া হাসপাতালের কেবিন অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তি ও কোম্পানির দরদাতাদের ট্যাক্স কার্ড প্রদানের জন্য জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা-২০১০-এর সংশোধনী অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে যে নীতিমালা করা হয়েছে তাতে বর্তমানে দুই ক্যাটাগরিতে ১০ ব্যক্তি ও ১০টি কোম্পানিকে ট্যাক্স কার্ড দেয়া যায়। নতুন সংশোধনীতে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১২৫ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ৬৪টি, কোম্পানি পর্যায়ে ৫০টি ও অন্যান্য পর্যায়ে ১১টি ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে। যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা হবেন, কমিটি তাদের বাছাই করে ট্যাক্স কার্ডের জন্য নির্বাচন করবেন বলে জানান তিনি। বিশেষ শ্রেণীতে ২০ জন ॥ ব্যক্তি পর্যায়ে বিশেষ শ্রেণীতে ২০ ব্যক্তি ট্যাক্স কার্ড পাবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর মধ্যে সিনিয়র সিটিজেন ৫, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ৫, প্রতিবন্ধী ২, মহিলা করদাতা ৫, তরুণ (যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে) করদাতা ৩ রয়েছেন। আয়ের উৎস হিসেবে ১৩ ক্যাটাগরিতে ৪৪ জন ॥ ব্যক্তি শ্রেণীতে আয়ের উৎস হিসাবে ১৩ ক্যাটাগরিতে ৪৪ ব্যক্তি ট্যাক্স কার্ড পাবেন। এর মধ্যে ব্যবসায়ী ৫, বেতনভোগী ৫, ডাক্তার ৫, সাংবাদিক ৩, আইনজীবী ৩, প্রকৌশলী ৩, স্থপতি ২, এ্যাকাউনট্যান্ট ২, নতুন করদাতা ৭, খেলোয়াড় ২, অভিনেতা-অভিনেত্রী ২, শিল্পী ও গায়িকা ২, অন্যান্য ৩ জনকে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে। কোম্পানি পর্যায়ে ৫০টি ॥ তিনি বলেন, কোম্পানি করদাতা ট্যাক্স কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাংকিংয়ে ৪, অব্যাংকিংয়ে ৪, টেলিকমিউনিকেশনে ১, প্রকৌশলে ৩, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক ৩, জ্বালানি ৩, পাটে ৩, স্পিনিংয়ে ৫, ওষুধে ৪, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক ৪, রিয়েল এস্টেট ৩, তৈরি পোশাক ৭, চামড়াশিল্পে ২, অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪ জন করদাতা কার্ড পাবেন। অন্যান্য শ্রেণীতে ১১ জন ॥ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অন্যান্য করদাতা শ্রেণীতে ফার্ম ৪, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ১, ব্যক্তিসংঘ ২, অন্যান্য ৪ মিলে ১১ জনকে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা অর্থমন্ত্রীকে অথরাইজড করেছে। যদি প্রয়োজন মনে করে এনবিআর অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে এটা (ট্যাক্স কার্ডের সংখ্যা) বাড়াতে পারবে। ট্যাক্স কার্ডধারীরা অনেকগুলো সুবিধা পাবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবেন। বিমান, রেলপথ ও জলপথে সরকারী যানবাহনে টিকেটপ্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন। বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। স্টার হোটেলে বুকিংয়ে অগ্রাধিকার পাবেন। ট্যাক্স কার্ডধারীদের স্ত্রী বা স্বামী নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারী হাসপাতালে কেবিন সুবিধা পাবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গম ও ভুট্টার উন্নয়ন ও উৎপাদন সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। নতুন খসড়া আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ইনস্টিটিউট গম ও ভুট্টার উন্নয়ন ও উৎপাদন সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে এবং গবেষণা কর্মকা- পরিচালনা করবে। দেশে গম ও ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ গবেষণা ল্যাবরেটরি, খামার ও অবকাঠামো নির্মাণে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। পাশাপাশি ইনস্টিটিউট জার্ম প্রাণরস সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবে এবং গম ও ভুট্টা উৎপাদনে চাষীদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান ও এ ব্যাপারে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইনস্টিটিউট গম ও ভুট্টা উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে এবং এ বিষয়ে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অধিকার সংরক্ষণ করবে। ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠিত হবে এবং সরকার ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালককে নিয়োগ দেবে। বোর্ডের সদস্যরা হবেনÑ কৃষি ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একজন করে, ইনস্টিটিউট থেকে দুজন বিজ্ঞানী, সরকার নিয়োগকৃত দুজন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী, কৃষিকাজে সম্পৃক্ত এমন দুজন প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ কটন ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের একজন প্রতিনিধি। পাশাপাশি বোর্ডে বিসিএসআইআরের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি এবং কৃষকের একজন প্রতিনিধি এবং কৃষি গবেষণা কাজে জড়িত এমন একটি বেসরকারী সংস্থার একজন প্রতিনিধিও বোর্ডের সদস্য থাকবেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান ইনস্টিটিউটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বছরে বোর্ডের কমপক্ষে তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বোর্ডের মোট সদস্যদের মধ্যে ৫০ ভাগের উপস্থিতিতে কোরাম পূরণ হবে। মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গবেষণা কর্মকা- বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬’-এর খসড়াও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে। তিনি বলেন, খসড়াটি বিগত বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬ বাংলায় অনুদিত। এতে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে দেশের অন্যান্য স্থানে ইনস্টিটিউটের শাখা খোলার সুযোগ রাখা হয়েছে। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পাটের উন্নয়ন ও উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গবেষণা চালাতে দিকনির্দেশনা প্রণয়ন অনুমোদন করবে। তিনি বলেন, ইনস্টিটিউট জলবায়ুসহিষ্ণু নতুন জাত আবিষ্কার এবং চাষীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রযুক্তি প্রদানে কৃষি সেক্টরে আইসিটি প্রয়োগ করবে। ইনস্টিটিউট বিভিন্ন জাতের শস্যের ওপর প্রদর্শনী, নতুন শস্যের ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন ও প্রচারপত্র প্রকাশ করবে এবং গবেষকদের ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট গবেষণার সুযোগ দেবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের ডি-৮ চার্টারের অনুমোদনের একটি প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে। তিনি বলেন, রবিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়, কোচ এবং বিসিবির কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত হয়।
×