ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাফুফের পক্ষে সাফাই মামুনুল, এমিলিদের, সাম্প্রতিক সমালোচনার প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান জানাতে বর্তমান ফুটবলারের সংবাদ সম্মেলন

অবশেষে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন ফুটবলাররা

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

অবশেষে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন ফুটবলাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভুটান ব্যর্থতার পর সমালোচনায় জেরবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের দেশাত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দিনকয়েক আগে সাবেক জাতীয় ফুটবলাররা সংবাদ সম্মেলন করে ধুয়ে দেন বাফুফে ও ফুটবলারদের। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে তার পাল্টা জবাব দেন বর্তমান জাতীয় দল ও ক্লাবে খেলা ফুটবলাররা। ‘ফুটবল ধ্বংসের অপেচষ্টার প্রতিবাদে’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম মামুন, স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলি, বিপ্লব ভট্টাচার্য, আতিকুর রহমান মিশুসহ অনেকে। স্বীকার না করলেও সংবাদ সম্মেলনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাফুফের পক্ষে সাফাই গান মামুনুল, এমিলিরা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে ফুটবলাররা বলেন, ভুটানের কাছে পরাজিত হয়ে আমরা সবাই খুবই লজ্জিত। আমাদের ব্যর্থতার কারণেই আমরা পারিনি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কোনভাবেই দায়ী নয়। আমরা বাংলাদেশের হয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এজন্য আমরা দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ফুটবলাররা আরও বলেন, ইদানীং আমরা দেখছি, আমাদের সিনিয়র স্বনামধন্য গুটিকয়েক খেলোয়াড় ও সংগঠক বাফুফের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে, বিশেষত সভাপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যাচার ও বিষোদগার করে আসছে, যা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের মিথ্যাচার ও বিষোদগারের কারণে বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ফুটবল বিমুখ হয়ে গেলে লীগের খেলা বন্ধসহ আমরা সকল ফুটবল খেলোয়াড় বেকার হয়ে যাব। বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। সিনিয়র খেলোয়াড় ও সংগঠকরা ফুটবলের উন্নয়নে আমাদের সুপরামর্শ বা উপদেশ দেননি। জাতীয় দলের ক্যাম্পেও কখনও আসেননি। অথচ তারাই এখন মিডিয়াতে বিভ্রান্তি ও বড় বড় বুলি ছড়াচ্ছেন, গঠনমূলক কিছু বলছেন না। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মামুনুল বলেন, ভুটানের কাছে হারের পর আমরা ঘুমাতে পারিনি। আমরা তো শুধু ভুটানের কাছেই হেরেছি। এই হারের জন্য এত এত সমালোচনা। অথচ লেবানন, হংকং, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জিতেছি। সেসব যেন সবাই ভুলে গেছে! এখন আমাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আক্রমণ করা হয়। মামুনুল বলেন, একসময় খেলার জন্য ২০০৮ সালে আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছে। কিন্তু এখন তো লীগ নিয়মিত হয়। সাবেকদের সমালোচনা করে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক বলেন, সাবেকরা যদি আমাদের এভাবে সমালোচনা করে তাহলে নতুন করে আর কেউ ফুটবল খেলতে আসবে না। তাহলে আমাদের ফুটবলের ভবিষ্যত কোথায়? মামুনুলরা কথা দেন, তারা আবারও ছন্দে ফিরে আসবেন। তিনি বলেন, অনেকে বেতন নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু লীগ বাদে বাকিটা সময় আমাদের সংসার কিভাবে চলে সে খবর তো কেউ রাখে না। মামুনুলদের কথাতে স্পষ্ট হয় তারা বাফুফের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন তারা। তখন ভোল পাল্টিয়ে মামুনুল বলেন, আমরা সাবেকদের দোষারোপ করছি না। সাবেকদের পাথর মারছি না। আমরা আমাদের কথা তুলে ধরছি। আমরা আজ বা আগামীকালের মধ্যে বাফুফে সভাপতির কাছে যাব। তার কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরব। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে খেলা গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যও সাফাই গান বাফুফের হয়ে। তিনি বলেন, একসময় খেলার জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছে। কিন্তু এখন লীগ নিয়মিত হয়। এক ভুটান পরাজয় দিয়ে সব বিবেচনা করা যায় না। বিপ্লব বলেন, ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ লীগ শেষ হবে। এরপর জেলা লীগে যেন খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ করে দেয়া হয়। তাতে করে স্থানীয় খেলোয়াড়রা তাদের দেখে উৎসাহিত হবে। কারও পক্ষ নিয়েছেনÑ এমন অভিযোগের জবাবে বিপ্লব বলেন, আমরা কারও পক্ষ নিয়ে এখানে আসিনি। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনেরও পক্ষ নিচ্ছি না। অনেক সমস্যা থাকলেও তিনি আশাবাদী সুরে বলেন, এখন থেকে পরিকল্পনা করলে বাংলাদেশের ফুটবল এগিয়ে যাবে। জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, পরাজয়ের এ দায়ভার স্বাভাবিক কারণেই খেলোখাড়দের ওপর বর্তায়। পরাজয় আমাদেরও ভাল লাগে না। লোকাল খেলাগুলো আমাদের ভালই হচ্ছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খারাপ করলে সবাই শুধু সেটাই দেখে। আমরা হেরেছি, আবার আমরাই ফিরে আসব। শুধু আমাদের প্রয়োজন সবার সমর্থন। সবাই কাদা ছোড়াছুড়ি করছে, এসব বাদ দিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আতিকুর রহমান মিশু বলেন, সবাই আলাদাভাবে কথা বলছে। সেটা না করে যারা কথা বলছেন তারা যদি ফেডারেশনের কর্মকর্তা ও আমাদের সঙ্গে একসাথে বসে পরামর্শ করেন, কি করলে ফুটবলের এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে সেটা মনে হয় ভাল হয়। মিশু বলেন, ক্লাবের ইযুথ টিম নেই, যে কারণে পাইপ লাইনে নতুন কোন খেলোয়াড়ও নেই। আমরাই এই কয়েকজন খেলোয়াড় গত ১০ বছর ধরে খেলে যাচ্ছি।
×