ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেশবপুরে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

কেশবপুরে টিআর-কাবিটা  প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ৩০ অক্টোবর ॥ কেশবপুরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওয়াতায় এলাকাভিত্তিক টিআর এবং কাবিটা প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়েও কোন কোন প্রকল্পের সব টাকা লুটপাট করা হয়েছে। সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে বাস্তবায়ন করানো এই প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা তাদের পকেটে গেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকার মসজিদ, মন্দির, রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিআর এবং কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে নগদ বরাদ্দ দেয়। তিন দিনব্যাপী সরেজমিন বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখার সময় ব্যাপক অনিয়ম দেখা যায়। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মাঠ ভরাটের কাজে টিআর প্রকল্পের বরাদ্দ হয় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। একটি সূত্র জানায়, মাত্র ২২ পিকআপ মাটি দেয়া হয়েছে। এক পিকআপ মাটির দাম এক হাজার টাকা। প্রকল্পের সভাপতি ভোগতি ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, তিনি মাটি ভরাটের কাজ করেননি। প্রকল্পের টাকা তুলে প্রতিমন্ত্রীর পিও মনোজ তরফদারের কাছে দিয়েছেন। একই তালিকায় কাবিটা প্রকল্পে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সাকার মেশিন ও স্পট লাইট স্থাপনের জন্য ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২শ’ ৯৯ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। স্পট লাইট স্থাপন করা হয়নি। প্রকল্পের সভাপতি ভোগতি গ্রামের মাহবুর রহমান জানিয়েছেন তিনিও সোলারের কাজ করেননি। টাকা তুলে পিও মনোজ তরফদারের কথামতো যারা সোলার প্যানেলের কাজ করে তাদের কাছে দিয়েছি। বারুইহাটি পূজাম-প সংস্কারের জন্য ৪০ হাজার টাকা টিআর বরাদ্দ এবং উত্তোলন করা হলেও সেখানে কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। প্রকল্পের সভাপতি শিবু দাস জানান, পূজার কারণে কাজ করা হয়নি। সাগরদাঁড়ি শেখপুরা সবুর ডাক্তারের দোকান হতে ঋষিপাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের কাজে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫শ’ টাকা কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দের টাকায় আধা কিলোমিটারের কম ইটের সোলিং করা হয়েছে মাত্র। শেখপুরা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর ছবুর জানান, বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেক কাজ করাও হয়নি। তবে প্রকল্পের সভাপতি মন্টু কুন্ড জানান, সঠিকভাবে কাজ করা হয়েছে। পাঁচবাকাবর্শী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ সংস্কারের জন্য টিআর প্রকল্পের ৪০ হাজার টাকা প্রদান করা হলেও মসজিদের কোন কাজ করা হয়নি। পাঁজিয়া মিকাইলের বাড়ি থেকে গোলামের বাড়ি পর্যন্ত ২শ’ হাত রাস্তা সংস্কারের জন্য টিআর প্রকল্পের ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এলাকার শিরিনা, সাজ্জাদ হোসেনসহ অনেকেই অভিযোগ করেছেন দু’এক ভ্যান সুরকি দিয়ে কাজ শেষ করেছে। পাঁজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল জানান, রাস্তায় কয়েক ভ্যান সুরকি দেয়া হয়েছিল। বৃষ্টিতে তা উঠে গেছে। প্রকল্প সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, কাজ করা হয়েছিল কিন্তু বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। সাতবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে মাঠ ভরাটের জন্য টিআর প্রকল্পের ১ লাখ ১১ হাজার ৭শ’ ৮৮ টাকা বরাদ্দের কাজ ঠিকমতো হয়নি। গৌরিঘোনা জিন্নাত মোল্যার বাড়ি থেকে মনিরুউদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত টিআর প্রকল্পের ৮৫ হাজার টাকায় ইটের সোলিং কাজে ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে ছবেদ আলী, বাবলু রহমান ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। প্রকল্প সভাপতি রেজাউল ইসলাম সব টাকার কাজ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। ভরত ভায়না অগ্রগামী যুব সংঘে সৌর বিদ্যুত স্থাপনে টিআর প্রকল্পের ২৯ হাজার ২শ’ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস আলীসহ অনেকেই বলেছেন ওই নামে সেখানে কোন ক্লাবের অস্তিত্বই নেই। গৌরিঘোন ইউনিয়নের কাশিমপুর ভদ্রাপল্লী নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় হতে ননী সরকারের বাঁশবাগান পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের কাজে কাবিটা প্রকল্পের ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫শ’ টাকা বরাদ্দ করা হলেও ওই রাস্তায় কোন কাজই করা হয়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, এই সড়কের ৯/১০ জায়গায় ইটের সোলিং উঠে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পের সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই টাকা দিয়ে অন্য একটি রাস্তার কাজ করা হয়েছে। সন্যাসগাছা কালাম সরদারের বাড়ি হতে সন্যাসগাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য কাবিটা প্রকল্পে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫শ’ টাকার কাজে অনিয়মের অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে প্রকল্পের সভাপতি আসাদ মোল্লা সব টাকার কাজ করা হয়েছে দাবি করে বলেন, ৬শ’ ৬০ ফুট ইটের সোলিং করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিপুল মালাকার জানান, সকল প্রকল্পের কাজ প্রকল্প সভাপতিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার নিয়ম। কেউ যদি কাজ না করে থাকে তাহলে তারা প্রতারণা করেছে। কিছু কিছু কাজে অনিয়ম থাকতে পারে স্বীকার করে তিনি বলেন, কোন কোন প্রকল্পের কাজ ৫০ ভাগ হয়েছে আবার কোন কোন প্রকল্পের কাজ ৮০ ভাগও হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওয়াতায় নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩২টি কাবিটা ও ১২২টি টিআর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গত বছরের ৬ জুন। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ১৫ জুলাই এর মধ্যে।
×