ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১০ বাড়ি ভেঙ্গে পড়ার শঙ্কা

পদ্মাপাড় সড়কে ধস

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

পদ্মাপাড় সড়কে ধস

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী মহানগরীর সেখেরচক বিহারীবাগান এলাকায় পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষা একটি সড়কে (ওয়াকওয়ে) ভয়াবহ ধস নেমেছে। হঠাৎ প্রায় দু’ শ’ মিটার সড়ক পাঁচ ফুটের মতো দেবে গেছে। এছাড়া সড়কের পাশের ফুটপাথও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) কর্মকর্তারা বলেন, পদ্মার পানি নেমে যাওয়ার কারণে ধস নেমেছে সড়ক-ফুটপাথে। তবে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার কারণে সড়কে ধস নামেনি। তাদের দাবি, সড়কের নিচে থাকা আবর্জনা পচে গিয়ে ধস নামতে পারে। রবিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দু’ শ’ মিটার সড়কে ধস নেমে মূল সড়ক থেকে প্রায় পাঁচ ফুট নিচু হয়ে দেবে গেছে। সড়কের পাশের টাইলস বসানো ফুটপাথ এবং মাটিতেও দেখা দিয়েছে ফাটল। ধসের কারণে কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে। দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে সড়কের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। সেখেরচকের বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, ধসের কারণে ২০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি বাড়ি যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার প্রায় দু’ শ’ মানুষ। কুদরত আলী নামে আরেক বাসিন্দা জানান, সপ্তাহখানেক আগে সড়কটিতে ফাটল দেখা দেয়। এরপর প্রতিদিন ফাটল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধসও নামে। শনিবার বিকেলে থেকে ধস নামার পরিমাণ বেড়ে যায়। সাজেদা বেগম নামের একজন বলেন, বাড়িগুলো কখন ভেঙ্গে পড়বে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। রাতে ঘুমের মধ্যেও তারা দুঃস্বপ্ন দেখছেন। বিহারীবাগানের একটু ভেতরে মনিরা বেগমের বাড়ি। তিনি বলেন, সড়কের ধার ছাড়া ভেতরের বাড়ির মধ্যেও দেখা দিয়েছে ফাটল। প্রতি মুহূর্তে যেভাবে সড়কে ফাটল দেখা দিচ্ছে, তাতে যে কোন সময় বাড়িগুলোও ভেঙ্গে পড়বে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ইদ্রিস আলীর বাড়ি। ইদ্রিস বলেন, ‘ভয়ে আমরা ওয়াসার পানি ব্যবহার করতে পারছি না। লাইন বন্ধ করে দিয়েছি। ব্যবহৃত পানি সড়কে মিশে যদি আরও ধস বাড়িয়ে দেয়- এই আশঙ্কায় পানি ব্যবহার করছি না। ইদ্রিসের ছেলে কাওসার আলী (২২) বলেন, গত বছর এই এলাকা থেকে পাড়ের ব্লক সরে গেছে। এরপর আর ব্লক বসানো হয়নি। এ বছর ফুটপাথ নির্মাণ করার সময় মূল সড়কে ফাটল ছিল। কিন্তু তা মেরামত না করেই পাশে ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে। ধস নামার পরও সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। এদিকে ধসের কারণে হেলে পড়েছে কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ ফাইজুল আলম বলেন, যে কোন মুহূর্তে খুঁটিগুলো ভেঙ্গে পড়তে পারে বাড়ির ওপর। বিষয়টি বিদ্যুত বিভাগকে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি কর্পোরেশনকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, সড়ক ধসের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনের কোন ত্রুটি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বন্যার পানি বা ব্লক সরে যাওয়ার জন্য যে ত্রুটি দেখা দিতে পারে তাও পাওয়া যায়নি। ওই এলাকার ব্লকগুলো ঠিকঠাক আছে। তবে তারা ধারণা করছেন, সড়কটির নিচে বর্জ্য পচে ধস নেমেছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, তিন বছর আগে ওই এলাকায় সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। তখন মাটিতে কোন সমস্যা ছিল না। রোলার দিয়ে ভালভাবে মাটি মজবুত করে তারপর সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নিচে আবর্জনা থাকলেও সড়ক দেবে যাওয়ার কথা না। ওই এলাকায় মাটির ইরোসনের কারণে সড়কটি দেবে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
×