ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইএসের নৃশংসতার ভয়ে ইরাকীরা পালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

আইএসের নৃশংসতার ভয়ে ইরাকীরা পালাচ্ছে

ইরাকী শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের সর্বশেষ ঘাঁটি মসুল থেকে তাদের উচ্ছেদের জন্য প্রায় দু’সপ্তাহের এ অভিযানে শনিবার একটি নতুন ফ্রন্ট খুলেছে। ইরাকী সৈন্য ও কুর্দী যোদ্ধারা কয়েক ডজন গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়েছে। খবর এএফপি, আলজাজিরা ও ওয়েবসাইটের। দুই বছরের নির্মম আইএস শাসনের পর এ পর্যায়ে আহমেদ নামে এক ইরাকী আড়াল থেকে জঙ্গীদের গুলিবর্ষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় ইরাকের উত্তরাঞ্চলে তার গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শেষ পর্যন্ত। তাকে লক্ষ্য করে আইএস একবার চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছিল, তবে বেঁচে যায় সে। কিন্তু জীবন তার ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর এখনও। আহমেদ তার বয়স্ক মা-বাবাকে ফেলে গিয়ে আশ্রয় নেয় কুর্দী পেশমার্গা যোদ্ধাদের জন্য অস্থায়ীভাবে তার এক ক্ষুদ্র ঘাঁটিতে। আহমেদ বলেন, আইএস আমাদের গ্রাম দখলে নেয়ার পর কোন কর্মসংস্থান ছিল না। আমার বাবার হাতে কোন অর্থ ছিল না। তিনি ও আমার মা গাড়িটি রক্ষার জন্য থেকে গেলেন। কারণ নতুন আরেকটি গাড়ি কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। মসুল অধিকারের এ লড়াই অভিযানে কয়েক ডজন গ্রাম থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে দিয়েছে ইরাকী সৈন্য ও কুর্দী যোদ্ধারা। এ পরিস্থিতিতে আহমেদের মতো ঝুঁকি নিতে অনুপ্রাণিত হয়েছে ইরাকীরা। বিশ্বে সবচেয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ও সহিংস আইএস সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছে, তাদের স্বঘোষিত খিলাফত রাষ্ট্র থেকে যে কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে। তাদের এ হুমকি সত্ত্বেও এ ঝুঁকি নিচ্ছে ইরাকীরা। আহমেদ একটি প্লাস্টিক প্লেটের পাশে বসেছিলেন। বাড়িতে থাকা আত্মীয়স্বজনদের কথা ভেবে ধীরভাবে কথা বলছিলেন। তাকে নিঃশেষিত ও বিস্মিত মনে হয়েছে। আহমেদ বলেন, আইএস দু’বছর আগে যখন এখানে আসে আমরা ভেবেছিলাম, তারা অবস্থান করবে মাত্র কয়েক সপ্তাহ। কারণ ইরাকী সেনাবাহিনী তাদের তাড়াবে। আইএস মসুল দখলের পর আবু জারবুহ গ্রামের মতো অন্যান্য গ্রাম দখল করে নেয়। আহমেদের মা-বাবা জঙ্গীদের আতঙ্কের মধ্যে এখনও বাস করছেন আবু জারবুহ গ্রামে। আইএসের এই জঙ্গীরা গ্রামগুলোতে দাড়ির সাইজ থেকে শুরু করে সিগারেট ও এ্যালকোহল পর্যন্ত জীবনের সর্বস্তরে নিয়ন্ত্রণ করছে। সব পরিবার তাদের নিজেদের বাড়িতে জিম্মি হয়ে আছে দু’বছর যাবত। এমনকি নিজস্ব এলাকায় হাঁটাহাঁটি করতে ভয় পাচ্ছে তারা; পাছে ক্রোধের শিকার হতে হয় তাদের। আহমেদ বলেন, আমরা কিছু খাদ্য ও সরবরাহ পাওয়ার জন্য মাসে একবার বাড়ি থেকে মসুল গেছি। আইএস স্কুলগুলোতে যে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে তা শোনার পর পড়াশোনা ছেড়ে দেয় আহমেদ। মানুষকে কী করে শিরñেদ ও গুলি করে হত্যা করতে হয় বস্তুত তাই শেখাচ্ছেন তারা। তাদের দখলকৃত একটি গ্রামে আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা সম্পর্কে তিনি কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, সেখানে ঘন ধোঁয়ার কু-লি উড়তে দেখা যায়। কুর্দী যোদ্ধারা বলেছে, ওই এলাকা থেকে দুই শিশু তখন দৌড়ে ঘাঁটির দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু সুন্নি জঙ্গীরা শিশু দুটিকে গুলি করে হত্যা করে। জিহাদীরা ঘাঁটি লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলাও চালায়। কুর্দী যোদ্ধারা বলেছে, আইএস জঙ্গীরা দূরবর্তী স্থানে বিভিন্ন ভবনে অবস্থান নিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। জাতিসংঘ সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছে, মসুল অভিযানে আইএস হাজার হাজার লোককে জিম্মি করার চেষ্টা করতে পারে এবং মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে তাদের। আহমেদ বলেছেন, আমি কখনও ভাবতে পারিনি আইএস থেকে পালাতে সক্ষম হব।
×