ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

’১০ সালের আগের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রধান বিচারপতির

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

’১০ সালের আগের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রধান বিচারপতির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উচ্চ আদালতে বিচারাধীন পুরনো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। একই সঙ্গে ২০১০ সাল থেকে পূর্বের বিভিন্ন বছরের মামলা তালিকা করে তা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে পাঠানো হচ্ছে। এসব মামলার অনেকগুলো ২০-২৫ বছর ধরে হাইকোর্টের বিভিন্ন শাখায় পড়ে আছে। সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোঃ সাব্বির ফয়েজ জানান, হাইকোর্টে ২০১০ সালের আগের সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তারই আলোকে ২০১০ সালের পূর্বের সব মামলা পর্যায়ক্রমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওইসব মামলা নিষ্পত্তিতে এখতিয়ারাধীন আদালতে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বলেন, বিচার প্রার্থীদের হয়রানি লাঘব, মামলা জট নিরসন এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা প্রতিষ্ঠায় এ উদ্যোগ ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তিনি জানান, বিভিন্ন কারণে হাইকোর্ট বিভাগের পুরনো মামলাগুলো শুনানির উদ্যোগ নেয় না কেউ। অনেক সময় বাদী-বিবাদীরাও মামলা পরিচালনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাই ২০১০ সালের আগের পুরনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। উল্লেখ্য, জনসংখ্যার পাশাপাশি মামলাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় নিষ্পত্তি কম হচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিন নতুন করে জটে যুক্ত হচ্ছে মামলা। এর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। সূত্রমতে ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল ২ লাখ ৬২ হাজার ৩৪৫ মামলা। পরের বছর ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৩ হাজার ৯০১টি। ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৭১টিতে। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৯৯ হাজার, দেওয়ানি ৮০ হাজার ২৮৮টি। ২০০৮ সালে হাইকোর্টে দায়ের হয় ৫২ হাজার ৫৯০টি মামলা। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৬ হাজার ৭২৮টি এবং ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ৪৫ হাজার ৮৬২টি। ২০০৯ সালে নতুন মামলা জমা হয় ৫২ হাজার ৪৮৮টি। এর মধ্যে দেওয়ানি ৭ হাজার ৩২টি, রিট ও ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ৪৫ হাজার ৪৫৬টি। এদিকে মামলা জট নিরসনে আইন কমিশনের কিছু সুপারিশ রয়েছে। কমিশনের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, অপ্রতুল বিচারক : দেশের নিম্ন আদালতের বিচারাধীন ২৬ লাখ মামলাসহ নতুন দায়েরকৃত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে আরও তিন হাজার নতুন বিচারক নিয়োগ করা প্রয়োজন। এজলাসের অভাব : অনেক জেলাতেই একটি এজলাসে দুই বা ততোধিক বিচারক বিচার কাজ পরিচালনা করে থাকেন। তাই দেশের আদালত সমূহে পর্যাপ্ত সংখ্যক এজলাস স্থাপন করা আবশ্যক। প্রশিক্ষণ : প্রাথমিক অবস্থায় বিচারকগণের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, সার্ভে সেটেলমেন্ট ট্রেনিংসহ যাবতীয় সকল ট্রেনিং এবং ব্যাপক ইনসার্ভিস ট্রেনিংসহ অন্তত দেড় বছর প্রশিক্ষণ দেয়ার পূর্বে আদালতে সরাসরি বিচারিক কার্যক্রমে নিয়োজিত করা ঠিক নয়। কিন্তু বর্তমানে অতি অল্প মেয়াদে সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়েই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সহকারী জজ আদালতে বিচারকগণ বিচার কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন। সাক্ষীর অনুপস্থিতি : সাক্ষ্য গ্রহণে বিলম্ব মামলার দীর্ঘসূত্রতার একটি প্রধান কারণ। ফৌজদারি মামলায় পুলিশকে দ্রুত সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। স্পর্শকাতর মামলা প্রমাণে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ক্রমাগত শুনানি : সি,আর,ও এর ১২৫-১২৬ এবং সিআর আর ও এর ৩৩-৩৪ বিধিতে সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও একটি মোকদ্দমায় ক্রমাগত সাক্ষ্য গ্রহণ না করে দিনের পর দিন শুনানি মুলতবি করে শুনানি প্রলম্বিতকরণ রোধকল্পে সি,আর,ও এবং সি আর আর ও এর বিধির বিধান অনুসারে মামলা ক্রমাগত শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।
×