ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধ ॥ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ৩৮ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধ ॥ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ৩৮ ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ মুদ্রা পাচার ও জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা দেখানোর জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকগুলোর প্রত্যেকটি শাখাকে পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দেশে কার্যরত ৩৮ বাণিজ্যিক ব্যাংক। অক্টোবরের মধ্যে এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও এখনও ১৮ ব্যাংক অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠায়নি। প্রতিবেদনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন, রেমিটেন্স ও আমদানি-রফতানির সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি (কেওয়াইসি) সংগ্রহ করে এ্যাকাউন্ট খোলা, কোন গ্রাহকের কেওয়াইসি পূর্ণাঙ্গ না থাকলে তা সংগ্রহ ও সংরক্ষণসহ সার্বিক বিষয়ে তথ্য জমা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। জানা গেছে, এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে বিক্ষিপ্তভাবে জঙ্গী হামলা হচ্ছে। এসব ঘটনার পর পাকড়াও হয়েছে অনেক জঙ্গী। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক জঙ্গী হামলার পর আবারও সামনে এসেছে ‘জঙ্গী অর্থায়ন’র বিষয়টি। একই সঙ্গে প্রতিবারেই ঘুরে ফিরে আলোচনায় এসেছে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন। জঙ্গীদের যারা অর্থ ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে নাশকতায় অর্থ যোগানদাতাদের সন্ধানে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাই মাসে দুই দফায় দেশের কার্যরত ৫৬ তলসিলি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বিভিন্ন সার্র্কুলার ও গাইডলাইন যথাযথভাবে অনুসরণে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলোর প্রত্যেকটি শাখাকে পর্যবেক্ষণ করে তার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধে ব্যর্থ ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় বৈঠকে বলা হয়, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে থাকে। এর একটি অংশ আবার জঙ্গী বা সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে। কোন লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে বিদ্যমান আইনে তাৎক্ষণিকভাবে বিএফআইইউকে তথ্য দেয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক ব্যাংক তা মানছে না। যে কারণে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পরিদর্শনে সন্দেহজনক লেনদেনের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখা কার্যালয়কে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফআইইউ মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ জনকণ্ঠকে বলেন, বিএফআইইউ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে। গত জুলাই মাসের বৈঠকে সন্ত্রাস ও জঙ্গী কর্মকা-ে অর্থায়ন বন্ধের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংক পর্যালোচনা প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। বিএফআইইউ থেকে প্রদত্ত নির্দেশনা ও গাইডলাইনগুলো ব্যাংক কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে কোন ব্যাংক ব্যর্থ হলে সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকগুলোর প্রত্যেকটি শাখাকে পর্যবেক্ষণ করে তার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দেশের কার্যরত ৩৮ বাণিজ্যিক ব্যাংক। তবে এখনও ১৮ ব্যাংক অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠায়নি। একাধিক ব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়টি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্র্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সন্দেহজনক লেনদেন বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকেও এ অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। আমরা মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে অধিক সতর্ক থাকতে বলেছি। এছাড়া প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলো শাখা পর্যায় থেকে রেমিটেন্স, আমদানি-রফতানির সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি (কেওয়াইসি) সংগ্রহ করে এ্যাকাউন্ট খোলা, কোন গ্রাহকের কেওয়াইসি পূর্ণাঙ্গ না থাকলে তা সংগ্রহ ও সংরক্ষণসহ সার্বিক বিষয়ে তথ্য জমা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি বেসরকারী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
×