ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার প্রতি আহ্বান চামলিং, নীতিশ বিমান বসুদের

তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে দিল্লীকে চাপ দিন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে দিল্লীকে চাপ দিন

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে ভারতের রাজনীতিবিদরাই ধীরে ধীরে সরব হচ্ছেন। তিস্তা চুক্তি ও ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ওপরও এখন অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে। অতীতে ভারতের পরিবেশবিদরা বিভিন্ন সময়ে পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানের জন্য সরব হলেও এখন রাজনীতিবিদরাই বিষয়টি আলোচনায় সামনে নিয়ে আসছেন। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, খোদ বিজেপি সহসভাপতি ও সাংসদ বিনয় প্রভাকর, পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য বিমান বসুরা সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে সরব হয়েছেন। তারা চাইছেন, যেভাবেই হোক দুই দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তিসহ পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এমনকি সিপিএম নেতা বিমান বসু পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে দিল্লীকে চাপ দেয়ার জন্য ঢাকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পরে দুই দেশই তিস্তা চুক্তিসহ সীমান্তের অভিন্ন ৫৪ নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জীর আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি আটকে রয়েছে। মমতার অভিযোগ আগে সিকিমকে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সিকিমের কারণেই পশ্চিমবঙ্গ পানি পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং এ বিষয়ে অনেকদিন নীরব ছিলেন। এখন তিনিও দুই দেশের পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমে তার অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, গোটা পৃথিবী আজ সহযোগিতার ডানায় ভর দিয়ে কোথায় এগিয়ে চলেছে, আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দিন দিন ভাল হচ্ছে। দুটো দেশ ক্রমেই কাছাকাছি আসছে। নির্ভরশীল হচ্ছে। তিস্তা বাংলাদেশের কাছে একটা স্পর্শকাতর বিষয়। এর মীমাংসা হয়ে গেলে এই সম্পর্ক আরও ভাল হবে। তাতে দুই দেশেরই লাভ। দুই দেশ নতুন উদ্যমে আরও এগোতে পারবে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, তিস্তা চুক্তি না হলে দুই দেশেরই ক্ষতি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতবিরোধী যেসব শক্তি রয়েছে, তারা উৎসাহ পাবে। পশ্চিমের মতো পূর্ব প্রান্তেও অস্থিরতা নিয়ে ভারতের চলা মুশকিল। বাংলাদেশের অগ্রগতিও থমকে যাবে। ক্ষতি হবে দুই দেশেরই। সূত্র জানায়, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী ২৩-২৭ অক্টোবর দিল্লীতে ছিলেন। সে সময় তিনি দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুতমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন, তিস্তা চুক্তি সমর্থন করতে তার কোন অসুবিধা নেই। এদিকে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে ঢাকায় এসেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সবাদী) পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু। তিনি ঢাকায় এসে প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতের সঙ্গে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে দিল্লীকে জোরালো কেন চাপ দিচ্ছে না ঢাকা। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে উষ্ণ। দু’দেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার উচিত তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনে দিল্লীকে চাপ দেয়া এবং দ্রুত এসব চুক্তি করে ফেলা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উদ্দেশ্য করে বিমান বসু বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে রাজনীতি না করে এ চুক্তিতে মত দেয়া উচিত। বাম আমলে জ্যোতি বসু গঙ্গার পানির ভাগ করার জন্য তো বিরোধিতা না করে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনবিঘা চুক্তি সমর্থন করেছিলেন। আর তিনি (মমতা ব্যানার্জী) এত অনুরোধেও কেন যে এ চুক্তিতে সায় দিচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়। বিমান বসু বলেন, দু’দেশের মানুষে মানুষে সম্পর্কের কারণেই তিস্তাসহ দু’দেশের সাধারণ নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হবে। জমি নিয়ে বিতর্কের যখন নিষ্পত্তি হয়েছে, তখন আমি নিশ্চিত পানির বিষয়েরও সমাধান হবে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সহসভাপতি সাংসদ বিনয় প্রভাকরও দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন সমস্যা সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চান। তবে বাংলাদেশকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সে কারণে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। আশা করি দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন ৫৪ নদীর পানি বণ্টন বিষয়ও সমাধান হয়ে যাবে। এদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার দুই দেশের পানি বণ্টন সমস্যার জন্য ফারাক্কা বাঁধকে দায়ী করেছেন। তিনি ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, আগে যেসব পলি নদীর প্রবাহে ভেসে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ত, এখন ফারাক্কার কারণে সেটাই নদীর বুকে জমা হয়ে বন্যা ডেকে আনছে। তাই আমি ১০ বছর ধরে বলে আসছি, এই পলি ব্যবস্থাপনা না করলে বিহার কিছুতেই বন্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে না। বিহারে প্রতিবছরের বন্যার জন্য তাঁর সরকার প্রধানত ফারাক্কা ব্যারাজকেই দায়ী করেছে। বিহারের পঞ্চমবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বলেছেন, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোন পয়সা চাই না, চাই কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের সংস্থাগুলো এসে দেখুক কিভাবে এই পলি সরানো যায়। এর একটা রাস্তা হতে পারে ফারাক্কা বাঁধটাই হটিয়ে দেয়া। আর আপনাদের কাছে বিকল্প কোন প্রস্তাব থাকলে সেটাও অনুসরণ করে দেখা যেতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে আপত্তি তোলায় বিষয়টি আটকে যায়। তারপর থেকেই তিস্তা চুক্তি ঝুলে গেছে।
×