ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার বর্ডার গার্ড ক্যাম্পে হামলাকারীদের প্রশ্রয় দেয়া হবে না ॥ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

মিয়ানমার বর্ডার গার্ড ক্যাম্পে হামলাকারীদের প্রশ্রয় দেয়া  হবে না ॥ বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বর্ডার গার্ড অব পুলিশ (বিজিপি) ফাঁড়িতে সহিংস হামলাকারীদের কোনভাবেই প্রশ্রয় দেবে না বাংলাদেশ। তবে সীমান্তের মংডু এলাকার নির্দোষ ব্যক্তিদের প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগ রয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের সুচি সরকারের সঙ্গে আরও সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরতে ঢাকায় এসেছেন সেদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান। রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি তিনি তুলে ধরেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বলা হয়, মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বর্ডার গার্ড অব পুলিশ (বিজিপি) ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িতদের কোনভাবেই প্রশ্রয় দেবে না বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সীমান্ত এলাকায় সেদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যদের জড়ো করা হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বৈঠক সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সীমান্তে হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত দুইটি বৈঠক স্থগিত করে দেশটি। এছাড়া আগামী ৯-১০ নবেম্বর ঢাকায় দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকও স্থগিত করেছিল দেশটি। তবে পরবর্তীতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তারা অংশগ্রহণ করবে। সে অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে এই বৈঠকের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া মিয়ানমারের সুচি সরকারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়। গত ১০ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্তে বিজিপির ওপর হামলা চালায় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। সে ঘটনায় দোষীরা যেন কোনভাবেই পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া সীমান্তে কঠোর নজরদারিও বাড়ানো হয়। মিয়ানমারে সংঘটিত ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) এরই মধ্যে রাখাইন প্রদেশের দুই মুসলিমকে আটক করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরও করে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, মিয়ানমারকে সহায়তা করতে সম্প্রতি আরাকান আর্মিসহ দেশটির অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অপারেশন চালিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়াও গত বছর আরাকান আর্মিদের কাছ থেকে মিয়ানমারের দুই সামরিক সদস্যকে উদ্ধার করেও ফেরত দিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করে, এ অঞ্চলে সহযোগিতা বৃদ্ধি একটি আইনী কাঠামোর মধ্যে হলে সবচেয়ে বেশি ভাল হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গত দুই বছর ধরে জোর দিচ্ছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের মংডু শহরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয়রা। সে হামলায় কয়েকজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় জনগণ হতাহত হয়েছে। এদিকে সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রেফতার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার বিশেষজ্ঞরা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বৌদ্ধ এবং সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। দেশটির সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সংঘাত শুরুর পর থেকে স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে যাতায়াত সীমিত করে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সীমান্তে সংঘাত নিয়ে তদন্তের জন্য এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।
×