ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটিই কি আওয়ামী লীগের চমক!

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটিই কি আওয়ামী  লীগের চমক!

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগ মহাজোটের নেতৃত্ব নিয়ে টানা দু’দফায় সরকারে আসীন। সরকার পরিচালনায় দলের শীর্ষ নেত্রী ও নীতিনির্ধারক মহল কঠোর মনোভাব। সম্প্রতি দলটির দু’দিনব্যাপী সম্মেলন হয়েছে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে। প্রায় অর্ধলক্ষ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের সমন্বয়ে এ সম্মেলন দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষী মহলে সৃষ্টি করেছে আশা জাগানিয়া। সবশেষে নতুন কমিটি হলো চমক দিয়ে। দলটি এহেন সফলতার নেপথ্যে সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক পারদর্শিতা কাজ করেছে বলে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। পর পর দু’দফায় নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। দলের কা-ারি হিসেবে কাজ করছেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। এবার নিয়ে তিনি আটবারের মতো সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। দু’দফায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে এবার এ পদে নতুন এসেছেন অভিজ্ঞ ও পুরনো নেতা মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অপরদিকে, কমিটি গঠনে সভাপতি শেখ হাসিনা যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তার ফলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী পদে আসীনদের বড় একটি অংশ কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। কার্য নির্বাহীর সদস্য পদে ২৮ জনের মধ্যে ১৮ জনই নতুন। নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটির পাশাপাশি ৩৮ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ, ১১ সদস্যের সংসদীয় বোর্ড ও ১৯ সদস্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনের ৪৮ ঘণ্টা পর নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্পাদক ম-লীর ২৭ সদস্যের মধ্যে ২২ জনের নামের তালিকা ঘোষণা করেন। তবে সভাপতিম-লীর ৩ ও সম্পাদকম-লীর ৪টি পদে এখনও নাম ঘোষণা বাকি। নব গঠিত কমিটির চিত্র অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর পদে থেকে দলের কোন পদে স্থান পেতে ব্যর্থ যারা হয়েছেন তারা সবাই পরিচিত মুখ। কারও কারও জনপ্রিয়তারও কমতি নেই। এরপরও নতুনদের জায়গা করে দিতে দলের এবারের এই কমিটি হয়েছে বলে জানা গেছে। নতুনদের বড় একটি অংশ এবারের কমিটিতে স্থান পেতে সক্ষম হয়েছেন। এটা দলের অভ্যন্তরে সৃষ্টি করেছে আশা জাগানিয়া। অপরদিকে, সরকার পরিচালনায় এ দলের কঠোর মনোভাবের ফলে ইতোমধ্যে যেসব ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চমক সৃষ্টি করেছে তন্মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার শুরু করা এবং বিচার শেষে ইতোমধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সফলতার ফিরিস্তির ব্যাপকতারও কমতি নেই। ইতোপূর্বে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলের বাঘা অনেক নেতা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় এসে ওইসব বাঘা নেতাদের অনেকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। পুরনোদের সঙ্গে নতুন কেউ কেউ মন্ত্রী পদে আসীন হন ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর। এদের কারও কারও কর্মকা- দল ও সরকারের ভাবমূর্তি বিরোধী হওয়ায় তাদের নতুন করে মন্ত্রিত্ব না দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলন শেষে নতুন যে কমিটি ঘোষণা হয়েছে এতেও দলীয় সভাপতির কঠোর মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে বলে দলীয় বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। আর এতে করেই সভাপতির আপন হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে এমন অনেকেই কমিটির কোন পদে স্থান পাননি। অপরদিকে, দলের জন্য ব্যাপক অবদান ও ত্যাগ সৃষ্টিকারীদের মূল্যায়ন করে তাদের উত্তরসূরিদের কাউকে কাউকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটাও একটা চমক হিসেবে দলীয় অভ্যন্তরে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সভাপতির পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিদায় ও ওবায়দুল কাদেরের অন্তর্ভুক্তি দুটোই চমক দিয়েছে নেতাকর্মী ও সমর্থক মহলে। কি কারণে আশরাফের বিদায় আর কি কারণে ওবায়দুল কাদেরের অন্তর্ভুক্তি তা চূড়ান্তভাবে সভাপতির চিন্তা-ভাবনারই ফসল। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে এই পর্যন্ত কোন রিএ্যাকশন দেখা যায়নি। যা ঘটেছে বিএনপির ক্ষেত্রে। বিএনপি গত প্রায় তিনমাস আগে ঢাউস একটি কমিটি করে যে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। এখানেই দলের সভাপতি ও শীর্ষ নেতাদের সফলতা। সম্মেলন শেষ হয়েছে কমিটিও ঘোষিত হয়েছে। গুঞ্জন চলছে মন্ত্রিপরিষদের রদ বদলের বিষয়টি নিয়েও। গুঞ্জন শুরু হয়েছে এক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন আরেক চমক দিতে পারেন। ইতোমধ্যেই সার্বিক বিষয় নিয়ে উৎসুক মহলে জল্পনা-কল্পনার ডালপালার বিস্তৃতি ঘটেছে। উল্লেখ্য, এবার দলটির দু’দিনব্যাপী যে জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন হয়েছে অতীতে এ ধরনের সুষ্ঠু ও আলোচিত সম্মেলন আর কখনও হয়নি। বাদ-প্রতিবাদ, চেয়ার মারামারি থেকে শুরু করে যেসব বিশৃঙ্খল ঘটনা অতীতে ঘটত এবার সে সবের কিছুই দেখা মেলেনি। সবই ঘটেছে দলীয় সভাপতির কঠোর মনোভাবের কারণে। দেশের ওয়ার্ড-মহল্লা পর্যায় পর্যন্ত যে দলটির দৃঢ় অবস্থান সে দলটিতে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরোধ এবং এর জের হিসেবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এ ধরনের কিছুই হয়নি এবারের সম্মেলনে। যা দলটির শুভাকাক্সক্ষী মহলে সর্বত্র সৃষ্টি করেছে আশা জাগানিয়া। সবচেয়ে বেশি চমক হয়েছে ৮১ সদস্যে কমিটি ঘোষণা দিয়ে। কমিটি গঠনে এমনও হয়েছে যা অনেকে এর আগে ধারণায়ও আনতে পারেননি। আর যাদের যে পদ দেয়া হয়েছে আর যাদের দেয়া হয়নি সকলকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষী মহলে রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি দল পরিচালনায়ও শেখ হাসিনার কর্মকা-কে বিস্ময়কর বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
×