ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘ইসি নিয়োগ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নয়’

আওয়ামী লীগ শক্তিশালী করতে আবর্জনা সাফ করা হবে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

আওয়ামী লীগ শক্তিশালী করতে আবর্জনা সাফ করা হবে ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। এই ইস্যুতে সংলাপের কোন প্রয়োজন নেই। দেশের প্রয়োজন হলে অবশ্যই সংলাপ হবে। রবিবার ‘সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরাম’ আয়োজিত এক সংলাপে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে প্রয়োজন হলে বিএনপিকে ডাকা হবে। তবে প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না। বিষয়টি সাংবিধানিক। অবশ্য আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দলের মধ্যে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের কথা বলেছেন নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সরকার ও দলকে পৃথক করার জোরালো প্রয়াস রয়েছে। মন্ত্রীদের অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। তারা দলের কাজ ভালভাবে করতে পারেন না। জঙ্গী সন্ত্রাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে এখনই আত্মতুষ্টিতে ভোগার মতো কিছু হয়নি। হঠাৎ নীরবতা বড় ধরনের ঝড়ের পূর্বাভাস। তারা তলে তলে আরও বড় হামলার পরিকল্পনা নিতে পারে। এটা মোকাবেলাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সরকার আলোচনায় বসবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, সংলাপ চাইব না তা হতে পারে না। তবে তারা (বিএনপি) যে ইস্যুতে চায় সে ইস্যুতে সংলাপ এখন কোন প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সংলাপের কথা বলবেন এবং সংলাপ করবেন। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী কী খালেদা জিয়াকে সংলাপের আহ্বান জানাননি, গণভবনে ডাকেননি? কোকো (আরাফাত রহমান কোকো) মারা যাওয়ার পর সহমর্মিতা জানানোর জন্য গেলেন, কিন্তু তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। সংলাপের দরজা তো সেখানেই বন্ধ হলো। তারপরও বলছি, দেশের প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই সংলাপ করবেন। তবে এই মুহূর্তে সংলাপের প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দলের মধ্যে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের কথা বলেছেন নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মতবিনিময়ে সাংবাদিকরা তার কাছে দলের দুর্বলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে, সমস্যা তো আছেই। এতবড় দল, এতবড় পরিবার। পরিবারের মধ্যে কিছু ছোটখাটো সমস্যা থাকে। বাস্তবতা অস্বীকার করে লাভ নেই। তিনি বলেন, আবার ক্ষমতায় এলে; কিছু ট্রাশেস ঢুকে গেছে, কিছু আবর্জনা, কিছু প্যারাসাইট এখানে-ওখানে নানান সমস্যা সৃষ্টি করে। এগুলোকে আমরা ঠিকঠাক করব। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সরকারী দলের উন্নয়নের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঘর যদি ডিসিপ্লিনড না হয় তাহলে বাইরে আমরা কি করে ডিসিপ্লিনড করব। আপন ঘরকে ডিসিপ্লিনড করতে হবে। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে পার্টিকে তার সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। সরকার শক্তিশালী, দল দুর্বল- এ অবস্থায় আমরা উন্নয়নের ফসল ঘরে তুলতে পারব না। এ লক্ষ্যেই এবারের জাতীয় সম্মেলন। গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন হয়, যেখানে শেখ হাসিনা পুনরায় দলের সভাপতি নির্বাচিত হন, সঙ্গে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পান ওবায়দুল কাদেরকে। দলে কোন শুদ্ধি অভিযানের পরিকল্পনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অলরেডি’ বলে দেয়া হয়েছে, অপকর্ম যারা করছে, যারা দলের সম্মানকে ক্ষুণœ করছে, তারা যদি সংশোধন না হয়, পরবর্তী নির্বাচনে তাদের নমিনেশনের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং ভালভাবেই আসবে। বিএনপি আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না। আগের ভুলের চোরাবালিতে অনন্তকাল তারা আটকে থাকবে না। বিএনপি অংশ না নিলে আগামী নির্বাচন তাদের ছাড়াই হবে কি না- জানতে চাইলে তার উত্তর, যদি কেউ না আসে তাহলে আমরা কী করব? নির্বাচন কশিমন পুনর্গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবেই হবে। বিএনপির মহাসচিবের এখানে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। আগামী ফেব্রুয়ারিতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশনের মেয়াদপূর্তির পর নতুন ইসির অধীনে ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। নতুন কমিশন নিয়োগে আগেরবারের মতো এবারও ‘সার্চ কমিটি’ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সার্চ কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নতুন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ভয়কে জয় করতে পারেনি। আন্দোলনেও পারেনি, নির্বাচনেও পারেনি। তারা একটা ভয়ের মধ্যে আছে। কিসের ভয়- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এতবড় একটা দল, ৫০০ লোকের মিছিলও করতে পারে না। তবে বিএনপির শক্তির কথা উল্লেখ করে তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন না বলেও জানান কাদের। এখনও আওয়ামী বিরোধী শক্তি বিএনপির ব্যানারেই শেল্টার নেয়, ওই ছায়াতেই তারা আশ্রয় নেয়। কাজেই ওরা খুব দুর্বল তা আমি মনে করি না। ভীতি সন্ত্রাসের মধ্যে রাসেল স্কয়ারে আমরা ২০ জন হলেও তো গেছি। আব্দুস সামাদ আজাদ আজকে নেই, প্রয়াত। পুলিশ এক কর্মীকে নিয়ে যাচ্ছে তিনি পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়লেন। বললেন ওকে (কর্মী) নিয়ে গেলে আমাকেও নিতে হবে। পুলিশ তাকে বলেছে, এটা উপরের নির্দেশ নিতে দেন। সামাদ আজাদ বলেছেন আমারও উপরের নির্দেশ, ওকে ছাড়া আমি যাব না। এ রকম নেতা কী বিএনপিতে আছে? বিএনপির মতো দলে এত সাহসের সঙ্কট। আব্দুস সামাদ আজাদের মতো একজনও কী এ রকম সাহস দেখাতে পারেন না? ২০১৩ সালে খালেদা জিয়াকে গণভবনে শেখ হাসিনার দাওয়াত দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজনে সংলাপ শেখ হাসিনা করবেন। কিন্তু এ মুহূর্তে সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। দেশে জঙ্গী হামলার আশঙ্কা এখনও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। আমরা যদি মনে করে টেররিস্টরা থেমে গেছে, পুলিশী অভিযানের ভয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে, এরকম ভাবাটা মোটেও সঠিক হবে না। তারা এখনও আরও বড় ধরনের হামলার হয়ত তলে তলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাজেই এটা একটা চ্যালেঞ্জ। নিরবতার মধ্যেই ঝড় আসে।
×