ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশাল সমাবেশে হবিগঞ্জকে বাল্য বিয়ে মুক্ত জেলা ঘোষনা

প্রকাশিত: ০১:২৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

বিশাল সমাবেশে হবিগঞ্জকে বাল্য বিয়ে মুক্ত জেলা ঘোষনা

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন,এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আর এই শ্লোগান নিয়েই ৭১’এ মুক্তিযুদ্ধে কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জিত হয়। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর এই পরিপূর্ণ সফল বিজয়ের শ্লোগানটিকে মনে ধারন করেই রবিবার দিনভর হবিগঞ্জের রাজপথ ও জেলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গন কাঁপিয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষের কন্ঠে উচ্চারিত হলো ‘আঠার’র আগে আর কন্যা সন্তানের বিয়ে নয়-আমরা করব বিশ্ব জয়’। ‘বখাটেদের উত্যক্তা প্রেম করব প্রত্যাখ্যান- করব প্রতিরোধ আর ভরব তাদের জেলে’। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার নারী পুরুষের মুহুমুহু এমন কন্ঠে রবিবার দিনভর মুখরিত এই হবিগঞ্জ শহর যেন রূপ নেয় এক অভূতপূর্ব গণজাগরনে। বাল্য বিয়ে মুক্ত হবিগঞ্জ জেলা ঘোষনা উপলক্ষে রবিবার সকালে হবিগঞ্জ শহরে বের করা হয় ওই শ্লোগান আর নানা উদ্বুদ্ধকরন তথ্য সম্বলিত ফেস্টুন হাতে এক বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা। পরে জেলা কালেক্টরেট মাঠ প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হয় এক জাকজমকপূর্ণ বিশাল সমাবেশ। এতে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র, জেলা পরিষদ প্রশাসক ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী, অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মালেক, সিভিল সার্জন ডাঃ দেবপদ রায়, আওয়ামীলীগ নেতা ও প্রাক্তন পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী প্রমুখ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে কবি তাহমিনা বেগম গিনি, কাজী আব্দুল জলিল, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আরা বেগম সহ আরও বক্তব্য রাখেন, ইমাম, কাজী, সাংবাদিক, উপজেলা-ইউপি চেয়ারম্যান এবং সমাজের নানাস্তরের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। এই অনুষ্ঠান থেকেই বিপুল করতালী ও শ্লোগানের মাধ্যমে হবিগঞ্জকে বাল্য বিয়ে মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষনা করেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকসহ সাধারন মানুষকে বাল্য বিয়ে করা থেকে বিরত এবং তা বন্ধে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান অতিথি। এদিকে হবিগঞ্জের নানা পেশার মানুষ তাদের অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, একটি জেলাকে বাল্য বিয়ে মুক্ত ঘোষনা দেয়া সম্ভব হয়েছে একমাত্র একজন মমতাময়ী নারীর মনের ইচ্ছে এবং আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের কারনেই। তিনি হলেন, এই জেলাকে বাল্য বিয়ে মুক্ত করার মূল উদ্যেক্তা হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম। সংশ্লিস্ট পদে থাকা প্রায় এক বছরের মাঝেই তার নিরন্তন প্রয়াসে জেলার ৮ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নকে বাল্য বিয়ের অভিশাপ মুক্ত হবার পর গোটা হবিগঞ্জকেই বাল্য বিয়ে মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষনার পথ সৃষ্টি করা ছিল একটি দুঃসাধ্য কাজ।
×