ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটে চার মাস ধরে নাব্যতা সঙ্কট

প্রকাশিত: ২০:৩২, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটে চার মাস ধরে নাব্যতা সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটে টানা প্রায় চার মাস ধরে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পদ্মা নদীর লৌহজং টানিং পয়েন্টে ডুবোচর এবং পানি কমে যাওয়ায় এসব সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এতে শিমুলিয়াঘাট এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে থাকে। দিনের বেলায় স্বল্প সংখ্যক যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করলেও অনেক সময় জোয়ারের জন্য ফেরি চলাচল অপেক্ষায় থাকতে হয়। চ্যানেলে ফেরি চলাচল করতে ৭ ফুট পানির গভীরতা দরকার। কিন্তু চ্যানেলে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। এতে করে ফেরি চলতে হয় খঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এতে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। আবার অনেক সময় চ্যানেল পথে যানবাহনসহ ফেরি ডুবোচরে আটকে পড়ছে। ফেরি স্বাভাবিক গতিতে না চলাতে ঘাট এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকছে। আজ রবিবার মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোশারফ হোসেন জানান, ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেশি। যাত্রীবাহী পরিবহণ আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হয়। শিমুলিয়াঘাটে এই রিপোর্ট লেখার সময় তিন শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। পদ্মায় অব্যাহতভাবে পানি কমতে থাকায় শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নাব্যতা সংকট যেন আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রতিটি ফেরি স্বল্প সংখ্যক যানবাহন নিয়ে পদ্মা পারি দিলেও মূলত পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার একেবারে থমকে গেছে। আর ফেরি যে পরিমান গাড়ী প্রতিদিন পার হচ্ছে তার থেকে বেশী গাড়ী ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় এসে যুক্ত হচ্ছে। এতে ঘাটে যানজটের পরিমান আরো বেড়ে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার মো. গিয়াস উদ্দিন পাটুয়ারী জানান, এখন পদ্মার পানি প্রতিদিনই একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। এতে নাব্যতা সংকটও দিন দিন বেড়ে চলেছে। পদ্মায় পানি স্বল্পতার কারণে ফেরিগুলো চলছে পদ্মার তলদেশ ঘেষে। তাই অল্প সংখ্যক গাড়ী নিয়ে প্রতিটি ফেরি ঘাট হতে ছেড়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন যে পরিমান গাড়ী পার হচ্ছে তার থেকে বেশী গাড়ী ঘাটে এসে যুক্ত হচ্ছে। যানজটের বেড়েই চলেছে। বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শাহ খালিদ নেওয়াজ জানান, ১৬টি ফেরি মধ্যে এখন ১২টি ফেরি চলাচল করছে। ৪টি ফেরি ইতিমধ্যে পদ্মার তলদেশ ঘেষে চলতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন ওয়ার্কশপ ও ডক ইয়ার্ডে আছে। প্রতিদিনই কোন না কোন ফেরির ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে ফেরির প্রপেলের বুশে বালু ঢুকে ক্ষয় হয়ে বিকল হয়ে পড়ছে ফেরি। এভাবে চলতে থাকলে ফেরি চলাচল মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাবে। তাই নৌ চ্যানেলে দ্রুতই ড্রেজিং করা প্রয়োজন। তিনি জানান, ট্রাক পারাপার এক রকম স্থবির হয়ে পড়েছে। ঘাটে প্রতিদিন বাড়ছে পণ্যবাহি ট্রাকের সংখ্যা। বিশেষ করে বাসা-বাড়ির ফার্নিসারসহ শিশু মহিলারা আটকে যাচ্ছে ঘাটে। প্রতিদিন যে পরিমান যানবাহন পার করা হচ্ছে তার মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহি পরিবহন, ছোট ছোট প্রাইভেট কার ও পচনশীন পণ্যবাহি ট্রাক। এদিকে মুন্সীগঞ্জের সম্মিলিত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ মিয়া জানান, লাগাতার এই পারাপার সঙ্কটে এখানকার ব্যবসা-বানিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পরেছে। কৃষকের উৎপাদিত অনেক ফসলও বাজারজাত ব্যাহত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির ম্যারিন অফিসার এতে এম শাহজাহান জানিয়েছে, পদ্মায় পানি কমছে প্রতিদিন। এতে নাব্যতা সংকট বেড়ে চলছে চ্যানেলের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন প্রকার গভীরতার পানি রয়েছে। সর্বনিন্ম ৬ ফুট থেকে সাড়ে ৭ ফুট পর্যন্ত পানি রয়েছে। ৬ ফুট পানির গভীরতায় ফেরি চলাটা অধিক ঝুকিপূর্ণ। তাই ফেরিগুলো কম লোড নিয়ে চলাচল করছে। বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. সুলতান আহমেদ খান জানিয়েছেন, পদ্মার পানি প্রতিদিন কমছে এ কতা সত্য। আসন্ন শুস্ক মৌসুম পর্যন্ত আরো ১০ ফুট পানি কমার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমরা থেমে নেই। বিআইডব্লিউটিএর ১০ টি ড্রেজার পদ্মার বিভিন্ন পযেন্টে ড্রেজিং করে চলেছে। আমাদের এ কাজ অব্যাহত থাকবে। যতদিন নাব্যতা সংকট থাকবে, ততদিন ড্রেজিংও চলবে।
×