ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আশা দেখাচ্ছে ইমরুলের ব্যাট

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

আশা দেখাচ্ছে ইমরুলের ব্যাট

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম ইনিংস। আর এই ইনিংসটায় দারুণ কিছু করাটা দলের জন্যও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সেই ইনিংসেই ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি হাঁকালেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। ২৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনশেষে তাই ১২৮ রানের বড় লিড নিয়ে স্বস্তিতেই ফিরতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ৫৯ রান নিয়ে এখনও ক্রিজে আছেন বাঁহাতি ইমরুল। তার এমন ইনিংসের কল্যাণেই বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১২৮ রানের লিড নিতে সক্ষম হয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে ইমরুল টেস্ট ক্রিকেটে চরম ব্যর্থতা কাটিয়ে সর্বশেষ ১০ টেস্টে দুর্দান্ত খেলেছেন। এই সময়ে পেয়েছেন চলমান টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস পর্যন্ত ৩ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফসেঞ্চুরি। বদলে যাওয়া ইমরুল এখন অনেক পরিণত সেটারই যেন প্রতিফলন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আজ ম্যাচের তৃতীয়দিনেও তাই এ ওপেনারের ব্যাটের দিকেই আস্থা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ দল। ২০০৮ সালে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ইমরুল। তবে যাত্রাটা সুখকর হয়নি প্রথমদিকে। ১২তম টেস্টে গিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস খেলতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ফিফটি হাঁকিয়ে ৭৫ রান করেন দ্বিতীয় ইনিংসে। এরপর আবারও ৮ ইনিংসে কোন হাফসেঞ্চুরি পর্যন্ত হাঁকাতে পারেননি। দল থেকে ছিটকে পড়েন। ২০১৪ সালে সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম টেস্টে প্রত্যাবর্তন ঘটে ইমরুলের। এবার দলে ফেরাটা তার জন্য ফলপ্রসূ হয়েছে। ফিরতি ম্যাচেই চট্টগ্রামে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১১৫ রানের একটি ইনিংস খেলেন। সেটি ছিল তার ১৬তম টেস্ট। তারপর থেকে বেশ রানের মধ্যেই আছেন ইমরুল। সে বছরই নবেম্বরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক হাঁকান জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে, আবারও চট্টগ্রামে। তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্মরণীয় এক ইনিংস খেলেছেন গত বছর এপ্রিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ৩৩২ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করার পর ৬২৮ রানের বিশাল রানের পাহাড় গড়েছিল পাকরা। কিন্তু বিরল এক কৃতিত্বই দেখান তামিম ইকবাল ও ইমরুল। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস উপহার দিয়ে তামিম ২০৬ রান করেন। আর ইমরুল ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে করেন ১৫০। এরচেয়ে বড় কথা টেস্ট ক্রিকেটের ইতহাসে কোন দলের দ্বিতীয় ইনিংসের উদ্বোধনী জুটিতে এত রান হয়নি। তাদের গড়া ৩১২ রানের জুটি দ্বিতীয় ইনিংসের প্রেক্ষিতে উদ্বোধনী জুটির বিশ্বরেকর্ড! সে কারণেই ৬ উইকেটে ৫৫৫ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে দারুণভাবে ম্যাচটি ড্র করে বাংলাদেশ। খুলনার সেই ইনিংসটাই ইমরুলকে টেস্ট ক্রিকেটে তামিমের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছে। অবশ্য গত বছর জুনে ভারতের বিরুদ্ধে ফতুল্লায় ৭২ রানের ইনিংস খেলার পর আবারও নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিলেন। টানা ৬ ইনিংস খেলে আর কোন অর্ধশতকেরও দেখা পাননি ইমরুল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ খেলছিলেন, ২১ ও ৪৩ রান করে আউট হয়ে যান। তবে চলমান মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে হতাশ করেন ১ রানে সাজঘরে ফিরে। সেই হতাশাকে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও বড় হতে দেননি। তামিমের সঙ্গে দারুণ শুরু করে ৬৫ রানের জুটি গড়েন। তামিম ফিরে যাওয়ার পর একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মুমিনুল হককেও (১) ফিরে যেতে দেখেছেন তিনি। চলতি সিরিজে আগের তিনটি ইনিংসে বেশ আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে শুরু করলেও এবার ইমরুল কিছুটা ধীরস্থিরভাবেই খেলেছেন। তবে পরের দিকে দ্রুত ব্যাট চালিয়েছেন। ৬৫ বলেই অর্ধশতক পেয়ে যান, এটি ক্যারিয়ারের সবেমাত্র চতুর্থ ফিফটি। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৮৬ রানের জুটি গড়ে দলকে শতাধিক রানের লিড এনে দিয়েছেন ইতোমধ্যে। দারুণ জমে ওঠা জুটিটা দ্বিতীয়দিনের শেষ বলে ভেঙ্গে গেছে মাহমুদুল্লাহর ধৈর্যচ্যুতির কারণে। তবে ৮১ বলে ৮ চারে ৫৯ রান নিয়ে এখনও অপরাজিত ইমরুল। আজ নতুন সঙ্গী নিয়ে নতুন করে চ্যালেঞ্জ শুরু হবে তার। ৬ ইনিংসে ব্যর্থতার পর আবার অর্ধশতক পাওয়া ইমরুল। ২০১৪ সালে টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ১০ টেস্টের ১৮তম ইনিংসে এই ৫৯ রানসহ করেছেন ৫১.৬৮ গড়ে ৩টি সেঞ্চুরি ও ৩টি অর্ধশতকসহ ৮২৭ রান। এই পরিসংখ্যানই বলছে দারুণ ফর্মে আছেন এ বাঁহাতি। কারণ ক্যারিয়ারের প্রথম ১৬ টেস্টের ৩২ ইনিংসে মাত্র ১টি ফিফটি হাঁকিয়ে ১৭.১৫ গড়ে ৫৪৯ রান করেছিলেন। অথচ চলতি টেস্টে দল যখন ২৪ রানে পিছিয়ে সেই সময় দায়িত্বশীল একটি সাবলীল ইনিংস খেলেছেন। শেষ মুহূর্তে সঙ্গী হারানো এবং আজ সকালের আর্দ্র পরিবেশে আরেকটি নতুন শুরুর চ্যালেঞ্জটা নেয়ার অপেক্ষা এখন।
×