ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১২৮ রানের লিড মুশফিকদের

বড় সংগ্রহের পথে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

বড় সংগ্রহের পথে বাংলাদেশ!

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে ‘পেঁয়াজে’র মতো। একটি খোলস ছিঁড়লে, আরেকটি খোলস বের হয়। এক সেশনের খেলা দেখে একরকম ভাবনা হয়। আরেক সেশনেই সেই ভাবনা পাল্টে যায়। শনিবার মিরপুর টেস্টে দ্বিতীয়দিনে যেমন হলো। সকালের সেশনটা কি সুন্দর রাঙ্গিয়ে তুলল বাংলাদেশ। মনে হলো প্রথম ইনিংস শেষে এগিয়ে থাকবে। পরের সেশনেই সেই রঙ্গ শেষ! উল্টো ইংলিশরাই রং মাখামাখিতে ব্যস্ত। দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষে ২৪ রানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। এরপর বিকেলের সেশনে আবার ম্যাচের রঙ্গ বদলালো। দিনের শেষ বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আউট না হলেতো দুর্দান্ত একটি দিনই কাটাতো বাংলাদেশ। এরপরও ইমরুল কায়েসের অপরাজিত ৫৯ রানে যে ১২৮ রানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, সেখানেই দিনটি বাংলাদেশের হয়ে রইল। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হতে ওয়ানডে মেজাজেই অনেকটা খেলতে থাকেন দুই ওপেনার তামিম ও ইমরুল। মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন তামিম। যেন তাড়াহুড়া লেগে গেছে। ১২ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৬৫ রান যোগ হয়ে যায়। এমন সময়ই আসে বিপত্তি। ৪৭ বলে ৪০ রান করা তামিম আউট হয়ে যান। অভিষেক টেস্টে প্রথম উইকেটও পেয়ে যান জাফর আনসারি। স্টোকস শুরু থেকেই ভয়ঙ্কর বোলার। তার বল খোঁচা দিতে যাওয়া মানেই মৃত্যু। মুমিনুল তাই করলেন। ১ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই স্টোকসের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলটি খোঁচা দিতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। এরপর ইমরুল ও মাহমুদুল্লাহ মিলে দিনটি শেষ করার পথেই হাঁটছিলেন। তৃতীয় উইকেটে দুইজন মিলে ৮৬ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। কি সুন্দর একটি বিকেলের দেখা মিলছিল। দিনের খেলা শেষ হতে বল বাকি মাত্র ১টি। এমন মুহূর্তে সুইপ করতে গিয়ে আনসারির বলে বোল্ড হয়ে গেলেন মাহমুদুল্লাহ (৪৭)। ব্যস, ৩ উইকেটের পতন ঘটে গেল বাংলাদেশের। ১৫২ রানে যেখানে স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটের পতন লেখা থাকত, সেটি হয়ে গেল ৩ উইকেট। তবুও ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ওকস ও রশিদের ৯৯ রানের জুটিটি ছাড়া পুরো দিনটিতেই বাংলাদেশের আধিপত্য ছিল। এখন আজকের দিনটিও নিজেদের করে নিতে পারলেই হয়। না হলে বিপদ আসতে পারে। বাংলাদেশের ইনিংস শুরুর বহু আগে দ্বিতীয়দিনের মধ্যাহ্ন বিরতির সময় মনে করা হয়েছিল, এগিয়ে থাকা দূরে থাক, বাংলাদেশ থেকে কম করে হলেও ৫০ রানে পিছিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই যে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে ইংলিশরা। স্কোরবোর্ডে প্রথমদিনের ৫০ রানের সঙ্গে আরও ১১৩ রান যোগ করতে পারে ইংল্যান্ড। আগেরদিন ৩ উইকেট হারানোতে সকালের সেশন শেষে মোটের ওপর ইংল্যান্ডের দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৬৩ রান। আর ২ উইকেট দ্রুত ফেলে দিতে পারলেতো বাংলাদেশই এগিয়ে থাকত। অন্তত ৫০ রানেতো এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা প্রবল ছিল। কিন্তু সব ভাবনা উল্টে গেল। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ইংল্যান্ডের ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ওকস ও রশিদ মিলে জুটি গড়া শুরু করেন। সেই জুটি কোনভাবেই যেন ভাঙ্গতে পারছিলেন না বাংলাদেশ বোলাররা। মিরাজ, সাকিব, তাইজুল, রাব্বি, শুভাগত, সাব্বিরÑ কেউই এ জুটিতে চিড় ধরাতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত নবম উইকেটে এ দুইজন মিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৯৯ রানের জুটিটি গড়েন। যে জুটি আবার ইংল্যান্ডকেও প্রথম ইনিংস শেষে এগিয়ে রাখে। ইংল্যান্ড যখন ২৩ রানে এগিয়ে যায়, এমন সময় মিরাজের বলে ক্যাচ আউট হন ওকস (৪৬)। ১ রান যোগ হতেই, ২৪৪ রানে ফিনকে সাজঘরে ফেরান তাইজুল। সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসও গুটিয়ে যায়। রশিদ শেষ পর্যন্ত ৪৪ রান করে অপরাজিতই থাকেন। কাউন্টি ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণীতে ক্রিস ওকসের ৯টি ও আদিল রশিদের ১০টি শতক রয়েছে। ইংল্যান্ডের শেষ পর্যন্ত ব্যাটসম্যান। লেজের ব্যাটসম্যানদের ওপরই ইংল্যান্ড দল নির্ভর করে। সেই প্রমাণও মিলল। দিনের শুরুতেই এমন বিপদে পড়ে তাই নিচের সারির ব্যাটসম্যান দিয়েই বাজিমাত করল ইংলিশরা। প্রথমদিন সকালে বাংলাদেশ দুর্দান্ত ব্যাটিং করে। ১৭১ রান পর্যন্ত ১ উইকেট ছিল। যেই তামিম আউট হন, পরে ৪৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ২২০ রান করতে পারে। দিনের শেষ ভাগটায় খেলতে নেমে ইংল্যান্ডও সুবিধা করতে পারেনি। ৪২ রান করতেই ৩ উইকেট হারায়। যখন ৫০ রান করে ইংলিশরা বৃষ্টিতে দিন শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে ১৭০ রানে পিছিয়ে থাকে। সেখান থেকে খেলতে নেমে আর ১৯ রান যোগ করতেই ২ উইকেট হারায় ইংলিশরা। মঈনকে মিরাজ ও স্টোকসকে তাইজুল সাজঘরে ফেরান। এরপর রুট ও বেয়ারস্টো মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেও কুলিয়ে উঠতে পারেননি। দেখতে দেখতে বেয়ারস্টো ও আনসারিকেও আউট করে দেন মিরাজ। মিরাজও ৫ উইকেট শিকার করেন। দেশের হয়ে প্রথম বোলার হয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই কোন না কোন ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করার রেকর্ড গড়ে ফেলেন। তবে তখনও বোঝা যায়নি, ইংল্যান্ড বিপদে পড়তে যাচ্ছে। কারণ রুট যে উইকেটে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৪৪ রান হতেই ৫৬ রান করা রুটকে সাজঘরে ফেরান তাইজুল। তখন মনে হয়, এবার বুঝি প্রথম ইনিংসে লিড নেবে বাংলাদেশ। কিন্তু ওকস ও রশিদ মিলেই সেই বিপদ কাটিয়ে তোলেন। এমনকি ইংল্যান্ডকে এগিয়েও দেন। এই এগিয়ে থাকাই শেষ পর্যন্ত না আবার আফসোসে পোড়ায় বাংলাদেশকে। এই ভাবনা হতে থাকে। কিন্তু এখন যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, সেটি সুবিধাজনক অবস্থানে। যদি আজ কোন উল্টা পাল্টা ব্যাটিং না হয়। তাহলে শুধু দ্বিতীয় দিনটিই নয়, তৃতীয় দিনটিও নিজেদের করে নিতে পারবে বাংলাদেশ। তা কি সম্ভব?
×