ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিপিবির একাদশ কংগ্রেসে বিদেশ থেকে আগত নেতাদের মন্তব্য

বিশ্বে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা ধর্মীয় মৌলবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

বিশ্বে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা ধর্মীয় মৌলবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান ও আগামী বিশ্বে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার প্রধান অন্তরায় হলো ধর্মীয় মৌলবাদ। সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ থেকে মৌলবাদের উত্থান; যা বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়াসহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদীরা মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে। প্রগতিশীল, ধর্মীয় নেতা ও সংস্কৃতি কর্মীদের বেছে বেছে হত্যা করছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হতে হবে। নইলে এক সময় গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী। চলমান এই সঙ্কট সমাধানে সমন্বিত বিরোধিতা বা প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরী বলে মনে করেন বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশের বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বলছেন, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে এক সময় মৌলবাদী শক্তির কাছে আমাদের পরাজিত হতে হবে। আইনের শাসন থাকবে না। কথিত ধর্মীয় আইনের নামে সবাইকে নির্যাতনের শিকার হতে হবে। তাই সময় থাকতে প্রগতিশীল ধারণার ভিত্তিতে সকল মানুষের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত। ৯০ ভাগ মানুষেরই অবস্থান মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে। তাই সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদকে ঠেকানো এখন সবারই কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ১১ তম কংগ্রেসের দ্বিতীয় দিনে ‘সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উদারনীতিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাবে। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ ১৩টি দেশের বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে ভারতের সিপিআইয়ের (এম) পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, সাম্রাজ্যবাদ-মৌলবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদ একইসূত্রে গাঁথা। মূলত পুঁজিবাদ থেকেই মৌলবাদের উত্থান হয়েছে। এখন দেশে দেশে আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। নানা কায়দায় নতুন করে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই পরিবর্তনের জন্য ভারসাম্য প্রয়োজন। না হলে মৌলবাদের উত্থান ঠেকানো কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন তিনি। গোটা বিশ্বের ৯০ ভাগ মানুষ এখন ‘সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উদারনীতিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের শিকার। প্রগতিশীল ধারণার ভিত্তিতে তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, নব্য উদারনীতিবাদ বিশ্বায়নের হাত ধরে ধর্মীয় মৌলবাদ মানুষকে দ্বিধাবিভক্ত করেছে। এজন্য সকলের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করেন এই বাম নেতা। সর্বভারতীয় ফরোয়ার্ড ব্লকের সম্পাদকম-লীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এখন মৌলবাদবিরোধী লড়াই চলছে। বাংলাদেশে মৌলবাদী গোষ্ঠী তৎপর। তারা একের পর এক মুক্তমনা, পুরোহিত, ধর্মযাজক, রাজনীতিক, বিদেশীদের হত্যা করছে। এ থেকেই বোঝা যায় এখানে তাদের শেকড় গাড়তে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের আর বাড়তে দেয়া যাবে না। এখনই ঠেকাতে হবে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) সম্পাদক রাজ্যসভা সদস্য ডি রাজা বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও মৌলবাদ ঠেকাতে পারে সম্মিলিত ঐক্য। এখন দেশে দেশে ঐক্য জরুরী বলেও মনে করেন তিনি। নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুরেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে বলেন, মৌলবাদী গোষ্ঠী যে এজেন্ডা নিয়ে নেমেছে তা শান্তিপ্রিয় মানুষ বিশ্বাস করে না। সমর্থনও দেয় না। তাই আমাদের সকলের উচিত এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া। সাম্রাজ্যবাদ ও উদারনীতিবাদকেও ঠেকাতে হবে। কারণ এই দুটি বিষয় মৌলবাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, সব বিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি জোটবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বিরোধীদের ব্যাপারে যুদ্ধ ও শান্তির জন্য আন্দোলন এগিয়ে নেয়া। এজন্য একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন বিশ্বব্যাপী গঠন করা যেতে পারে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান হায়দার আকবর খান রনোর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সিপিআইর (এমএল) সাধারণ সম্পাদক কে এন পিল্লাই রামচন্দ্র, শ্রীলঙ্কার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা প্রেমাদারা দিশানায়েকে, পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পীরজাদা আহমেদ বক্স, ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা অধ্যাপক জন ফস্টার, জার্মানির-মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট পার্টির নেতা থমাস বেইসেনক্যাম্প, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট ন্যুয়েন টুয়ান ফং, রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আলেকজান্ডার পোতাপভ, নেপালের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী চিত্রা বাহাদুর কেসি প্রমুখ।
×