ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৫১ দিন ছুটির পর আজ আবার শুরু হচ্ছে সুপ্রীমকোর্টের কার্যক্রম

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

৫১ দিন ছুটির পর আজ আবার শুরু হচ্ছে সুপ্রীমকোর্টের কার্যক্রম

বিকাশ দত্ত ॥ দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট সাপ্তাহিক ছুটি, ঈদ-উল-আযহা, দুর্গাপূজাসহ সরকার ঘোষিত ছুটি এবং কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শেষে আজ রবিবার খুলছে। দীর্ঘ ৫১ দিন পর আজ থেকে সুপ্রীমকোর্টে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের আগমনে আবারও মুখরিত হবে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গন। এদিকে সুপ্রীমকোর্ট বিভাগের ২৮টি বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তি সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পুনর্গঠিত বেঞ্চগুলোর বিচারকাজ শুরু হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে। এদিকে অবকাশ ছুটি শেষে আজ থেকেই সর্বোচ্চ আদালত হবে সরগরম। সবার দৃষ্টি থাকবে সুপ্রীমকোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ অন্যান্য আদালতের দিকে। আপীল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিষ্পত্তিতে এবারের পালা আওয়ামী লীগ থেকে বৃহিষ্কৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাকার কমান্ডার মোঃ মোবারক হোসেনের। এছাড়া নিম্ন আদালতে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার ঘটনায় মেয়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি ঐশী রহমান, ব্লগার রাজীব হায়দার, শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন ও রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল ও ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদ- কার্যকরে অনুমতির জন্য আবেদন) শুনানি করতে ঐশীসহ এ চারজনের পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এখন প্রধান বিচারপতির অনুমোদন পেলেই শুনানি শুরু হবে এসব চাঞ্চল্যকর মামলার। একই সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাও শেষের দিকে। এখন পর্যন্ত ২২৫ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, সাক্ষী শেষ পর্যায়ে । এখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য চলছে। অতিসত্বর বিচার শেষে রায় ঘোষণা করা হবে বলে আমি আশা করছি। গত ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটি, ঈদ-উল-আযহা, দুর্গাপূজাসহ সরকার ঘোষিত ছুটি এবং কোর্টের অবকাশের ফলে সর্বোচ্চ আদালতে নিয়ামিত বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে এ সময়ে জরুরী বিষয় নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগে অবকাশকালীন বেঞ্চ ছিল। অবকাশকালীন ছুটি শেষে আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ এ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রীমকোর্ট বারের সভাপতি-সম্পাদক ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সকলকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবকাশকালীন ছুটির পর প্রথম কার্যদিবস ৩০ অক্টোবর রবিবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত সুপ্রীমকোর্টের মূল ভবনের ভেতরে লনে এ সৌজন্য সাক্ষাত হবে। আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপীল নিষ্পত্তিতে পরবর্তী পালা আওয়ামী লীগ থেকে বৃহিষ্কৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাকার কমান্ডার মোঃ মোবারক হোসেনের। মোবারক হোসেন ছাড়াও আপীল বিভাগে আরও ১৭ জনের মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করেছে। আর মোঃ আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের আমৃত্যু কারাদ-ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপীল করা হয়েছে। মামলার ক্রমানুসারে এখন আপীল বিভাগে মোঃ মোবারক হোসেনের মামলাটি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ৮ জন এখনও আপীল করেননি, সহসাই তারা আপীল করবেন বলে জানা গেছে। এরা হলেনÑ সাখাওয়াত হোসেন, বিল্লাল হোসেন বিশ্বাস, ইব্রাহিম হোসেন, মুজিবুর রহমান, কাজী ওহিদুল ইসলাম, আজিজ সরদার, আজিজ সরদার (২) এবং আব্দুল খালেক ম-ল। এদিকে, রাজাকার কমান্ডার মোঃ মোবারক হোসেন ছাড়াও অন্য যেসব যুদ্ধাপরাধীর মামলা আপীলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে তারা হলেনÑ সৈয়দ মোঃ কায়সার, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস সুবহান, মোঃ আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার, মাহিদুর রহমান, মোঃ ফোরকান মল্লিক, শেখ সিরাজুল হক, খান আকরাম হোসেন, মোঃ ওবায়দুর রহমান তাহের, আতাউর রহমান ননী, সামসুদ্দিন আহম্মেদ, মহিবুর রহমান বড় মিয়া, মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ২৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আপীল নিষ্পত্তি শেষে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে ছয়জনের। অন্যদিকে আপীল বিভাগে সাতটি মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। সাতটি রায়ের মধ্যে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের খাজাঞ্চি মীর কাশেম আলীর আপীল নিষ্পত্তি শেষে তাদের দ- কার্যকর করা হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর দু’পক্ষের করা রিভিউ আবেদন এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। ডেথ রেফারেন্স মামলা ॥ বহুল আলোচিত সিলেটের শিশু রাজন ও খুলনার রাকিব হত্যা মামলার মৃত্যুদ- অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে এসে পৌঁছেছে। গত ৮ নবেম্বর দেশের বহুল আলোচিত সিলেটের শিশু রাজন হত্যা এবং খুলনার রাকিব হত্যা মামলার রায় হয়। দুই মামলার রায়ে আদালত ছয়জনের ফাঁসির দ-াদেশ দেয়। ঘটনার মাত্র চার ও তিন মাসের মাথায় এ ঘটনা দুটির বিচারের রায় হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নিম্ন আদালতে দ্রুততম রায়ের নজির। ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানির বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাবিব ফয়েজ জনকণ্ঠকে বলেছেন, পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে পারব। পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ঐশীর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে। সাধারণত মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে হাইকোর্টের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি বিচারিক আদালতে ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপীল করে থাকেন। সরকার যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করতে চায় তাহলে রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে থাকে। পিলখানা হত্যাকা- ॥ পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর), বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হত্যা মামলায় হাইকোর্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সব রেফারেন্স ও আপীলের ওপর এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হচ্ছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর ১৫২ বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় দেয় বিচারিক আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত ২৭৭ জনের মধ্যে ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গ্রেনেড হামলা মামলা শেষ পর্যায়ে ॥ গ্রেনেড হামালা মামলা প্রায় শেষের দিকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে সে সময়কার বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দানকালে এ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন শহীদ হন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, এ মামলায় ২২৫ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য চলছে। সাক্ষ্য শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমি আশা করছি অতিসত্বর বিচার শেষ হবে এবং মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
×