ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিসের ছবি তুলেই ফিরতে হয়েছে

জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ঠিকানা সংশোধন করায় স্মার্টকার্ড মেলেনি

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ঠিকানা সংশোধন করায় স্মার্টকার্ড মেলেনি

শাহীন রহমান ॥ ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির পর যারা বিভিন্ন সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ও বিভিন্ন তথ্য সংশোধন, ঠিকানা স্থানান্তর ও ভোটার এলাকায় পরিবর্তন করেছেন তাদের কেউই স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না। সংশোধনের কারণে এনআইডিতে তথ্যের অসঙ্গতি থাকায় শুধু ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি তুলেই ফিরে আসতে হয়েছে। অবশ্য স্মাটকার্ড বিতরণ কেন্দ্রের রেজিস্ট্রেশন খাতায় তাদের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখা হয়েছে। কার্ড বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নাম ঠিকানা সংশোধন, তথ্য ভুলের কারণে এবং তথ্য ভা-ারে প্রবেশ করতে না পারার কারণে যাদের কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি তাদের স্মার্টকার্ড পরবর্তীতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। গত ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রমনা থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কার্ড বিতরণের মাধ্যমে রাজধানীর চারটি ওয়ার্ডে প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে স্মাটকার্ড বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা কার্ড নিতে কেন্দ্রে গিয়েছিলেন এমন ৮ হাজারের বেশি নাগরিকের কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি মূলত নাম ঠিকানা সংশোধন করায় সার্ভারে তথ্যে অসঙ্গতি থাকার কারণে। তবে এর বাইরে বাকিরা সবাই স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পেরেছেন। জানা গেছে, প্রতিদিনের বিতরণকালে ২শ’ থেকে আড়াইশ নাগরিকের এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে তারা কেন্দ্রে এসেও স্মার্টকার্ড পাননি। রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মেহবুবা হেনা বলেন, উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শেষ দিনেও ১ হাজার ৫শ’ ভোটার স্মার্টকার্ড নিতে কেন্দ্রে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ২শ’ জনের কার্ড দেয়া সম্ভব হয়েছে। সার্ভারে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়ায় স্মার্টকার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি। জানা গেছে এদের বেশিরভাগ কোন না কোন সময় জাতীয় পরিচয়ত্রের ভুল সংশোধন করেছেন। রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কার্ড নিতে এসেছিলেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মনিরুল ইসলাম। কিন্তু নাম সংশোধনের কারণে তাকে কার্ড না নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর আগে তার কার্ডে নামের বানান সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু সংশোধনের কারণে এনআইডিতে অসঙ্গতি থাকায় তার কার্ড দেয়া হয়নি। শুধু ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নিয়ে একটি সিøপ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পরবর্তীতে তার কার্ড পৌঁছে দেয়া হবে। শুধু মনিরুল ইসলাম নন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা বিভিন্ন সময় নাম, ঠিকানা সংশোধন করেছেন তাদের প্রত্যেকের একই অবস্থা হয়েছে। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্রে স্মার্টকার্ড নিতে আসা এমন অনেক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাম-ঠিকানা সংশোধনের কারণে তারা কার্ড পাননি। এমন একজন শিহাব উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি আগে ছিলেন শাজাহানপুর থানার অধীনে ভোটার। কিন্তু ঠিকানা বদল করায় এখন তিনি রমনা থানার ভোটার হয়েছেন। কিন্তু ভোটার এলাকা বদলের কারণে তাকে কার্ড না নিয়েই ফিরে আসতে হয়েছে। তিনি জানান, কেন্দ্র থেকে আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছাপ রেখে দেয়া হয়েছে। কার্ড কবে দেয়া হবে তা পরে জানানো হবে বলে কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে। তবে রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুব হেনা বলেন, বিভিন্ন কারণে যাদের কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি তাদের নাম-ঠিকানা এমন কি মোবাইল নম্বরও রেখে দেয়া হয়েছে। স্মার্টকার্ড তৈরি হলে বা এনআইডিতে কোন অসঙ্গতি থাকলে তা দ্রুত সমাধান করেই স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া হবে। তিনি জানান, পরীক্ষামূলক পর্যায়ে তিনটি ওয়ার্ডের ৬৩ হাজারেরও বেশি নাগরিকের মধ্যে ৩২ হাজার ৫১৭ জন বিতরণ কেন্দ্রে এসে কার্ড নিয়েছেন। এর বাইরে আরও ৩ হাজার ৯২৯ জনকে নানা সমস্যার কারণে কার্ড দেয়া যায়নি। তিনি বাদ পড়াদের উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে কার্ড সংগ্রহের অনুরোধ জানান। উত্তরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, তারা একটি ওয়ার্ডের ৬৩ হাজারেরও বেশি ভোটারের মধ্যে ৩৩ হাজারেরও বেশি নাগরিককে কার্ড দিতে পেরেছেন। নানা জটিলতায় আরও চার হাজারের মতো নাগরিককে কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি। কার্ড প্রস্তুত করে তাদের জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন। আবার স্মার্টকার্ডে যাদের নাম-ঠিকানা ভুল এসেছে তাদের ক্ষেত্রেও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। স্মার্টকার্ডে ডিজিটের সংখ্যা ১০। কিন্তু মূল জাতীয় পরিচয়পত্রে ডিজিটের সংখ্যা কারও ক্ষেত্রে ১৩ আবার কারও ক্ষেত্রে ১৭ ডিজিটের। ফলে স্মার্টকার্ডে ভুল সংশোধন করতে গিয়েও জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে স্মার্টকার্ডের তথ্য এনআইডিতে আপডেট না করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ১০ ডিজিটের সংখ্যা দিয়ে এনআইডিতে থাকা ১৩ বা ১৭ ডিজিটের সংখ্যায় প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার যারা ব্যাংক এ্যাকাউন্টে স্মার্টকার্ডের তথ্য দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্যাংক থেকে জানানো হচ্ছে স্মার্টকার্ডের তথ্য দিয়ে এনআইডির তথ্য মেলানো যাচ্ছে না। অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কার্ডের ১০ ডিজিটের সংখ্যা দিয়ে এনআইডির তথ্য মেলানো যাচ্ছে না। তবে ইসির পক্ষ থেকে এটিকে সাময়িক সমস্যা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। তারা বলেন, মূলত টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত তার সমাধন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ইসির একজন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট বলেন, উন্নতমানের স্মার্টকার্ডে ১০ ডিজিটের নম্বরটি এখনও এনআইডি সার্ভারে আপডেট করা হয়নি। তবে কাজ শুরু হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া তিনি বলেন, যাদের স্মার্টকার্ডে ভুল রয়ে গেছে তারাও ইচ্ছে করলে ভুল সংশোধন করতে পারবেন। সার্ভারে স্মার্টকার্ডের তথ্য আপডেট হলে যে কেউ ১০ নম্বরের ডিজিট দিয়ে সার্ভাবে প্রবেশ করে ভুল সংশোধন করতে পারবেন। তবে যারা স্মার্টকার্ডে থাকা ভুল ত্রুটির জন্য আবেদন করছেন তারা শীঘ্রই ডুপ্লিকেট স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না। একজন কর্মকর্তা জানান, যারা স্মার্টকার্ড নিচ্ছেন, তারা তথ্য সংশোধন করতে গেলে দ্রুত ডুপ্লিকেট স্মার্টকার্ড পাবেন না। কবে নাগাদ পাবেন তাও বলা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অফিসে কেউ সংশোধনের আবেদন করলে তথ্য সংশোধন হবে ডাটাবেজে। প্রয়োজনে লেমিনেটেড সংশোধিত কার্ড নিতে হতে পারে। আবার যারা ২০১৪ সালে ভোটার হয়েছেন তারা সরাসরি স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন এখন। তাদের হাতে ১৩ ডিজিটের কিংবা ১৭ ডিজিটের লেমিনেটেড এনআইডি নেই। সেক্ষেত্রে ১০ ডিজিটের স্মার্টকার্ড সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলে তা যাচাইয়ে কারিগরি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। স্মার্টকার্ডে স্বামী বা স্ত্রীর নাম না থাকায় আপত্তি অনেকের ॥ লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যক্তির ঠিকানা, পিতামাতার পাশাপাশি স্বামীর নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু স্মার্টকার্ডে দৃশ্যমান অংশ থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আর এতে আপত্তি তুলেছেন অনেকে। তবে ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর জানুয়ারি মাসে যখন স্মার্টকার্ডের প্রাথমিক নমুনা অনুমোদন করা হয় তখনই ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর নাম না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তারা জানান কার্ডে থাকা মেমোরিতে ব্যক্তির সব তথ্যই থাকছে। রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্মার্টকার্ড নিতে এসে অনেক মহিলাই অভিযোগ করেন স্মার্টকার্ডে তাদের পিতামাতার নাম রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন হলেও স্বামীর নাম দেয়া হয়নি। এ নিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে অনেকের স্বামীর ব্যাংক এ্যাকাউন্টের নমিনির নাম হিসেবে স্ত্রীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আবার ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট করতে হলে বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক করা হয়েছে। কিন্তু স্মার্টকার্ডে স্বামীর নাম না থাকায় সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বামী বা স্ত্রীর নাম দৃশ্যমান অংশে না থাকলেও মেমোরিতে সব তথ্যই রয়েছে। যা অনলাইনে ব্যবহারের পর দৃশ্যমান হবে। ফলে স্বামীর নাম না থাকার সমস্যায় পড়বে না কেউ।
×