ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পৃষ্ঠপোষকতার অভাব

কয়েক বছরে ১০ লাখ পল্লী চিকিৎসকের ২ লাখই পেশা ছেড়েছেন

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

কয়েক বছরে ১০ লাখ পল্লী চিকিৎসকের ২ লাখই পেশা ছেড়েছেন

নিখিল মানখিন ॥ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক পল্লী চিকিৎসক নিজ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। গত কয়েক বছরে দশ লাখ পল্লী চিকিৎসকের মধ্যে প্রায় দুই লাখের বেশি চিকিৎসক অন্য পেশায় চলে গেছেন বলে পল্লী চিকিৎসক সমিতি জানিয়েছে। পল্লী চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণে সরকারী কোন মনিটরিং নেই। তাদের উন্নয়নে সরকারী পরিকল্পনাও নেই। অথচ দেশের প্রাথমিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন পল্লী চিকিৎসকরা। এমনটি মনে করছেন দেশের চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলছেন, দেশের হাজার হাজার পল্লী চিকিৎসকের জন্য কার্যকর সরকারী দিকনির্দেশনা নেই। দেশে চিকিৎসকের সঙ্কট রয়েছে। এমন অবস্থায় দেশের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাদানে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারদের পাশাপাশি পল্লী চিকিৎসকদের কাজে লাগানো যেতে পারে। সরকারী সহযোগিতা ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হলে পল্লী চিকিৎসকরা ভুল ও অবৈধ চিকিৎসাসেবায় সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। এই গ্রামাঞ্চলে এমবিবিএস পাস করা ডাক্তার নেই বললেই চলে, ফলে গ্রাম পর্যায়ের বিপুল জনগোষ্ঠীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য পল্লী চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হয়। পল্লী চিকিৎসক বা গ্রাম ডাক্তাররা গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বাড়ির দোরগোড়ায় অত্যাবশ্যকীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পল্লী চিকিৎসকদের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। গ্রামের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে পল্লী চিকিৎসকগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমেও পল্লী চিকিৎসকগণ স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান, পরিবার পরিকল্পনা, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, যক্ষ্মা রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা, অপুষ্টিজনিত রোগের চিকিৎসা, যৌনবাহিত রোগের চিকিৎসা, এইচআইভি/এইডস শনাক্তকরণ, সকল প্রকার সাধারণ রোগের চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে পল্লী চিকিৎসকগণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। আমাদের দেশে এমবিবিএস পাস করা ডাক্তারের যথেষ্ট অভাব রয়েছে, সেক্ষেত্রে বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থায় পল্লী চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তৃণমূল জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পল্লী চিকিৎসকগণ ভূমিকা রাখতে পারেন। পল্লী চিকিৎসকদের ন্যূনতম এসএসসি পাস ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো উচিত। এতে পল্লী চিকিৎসকদের মর্যাদা বাড়বে এবং মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে অনেক উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিগণও পল্লী চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাদেরও প্রয়োজনীয় এবং যথোপযুক্তমানের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পেশাগত দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক। চিকিৎসা পেশা অন্যান্য পেশার তুলনায় স্পর্শকাতর এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট বা অসুস্থতা তথা জীবন-মৃত্যুর সমস্যার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় ন্যূনতম শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়া এই পেশায় নিয়োজিত হওয়া উচিত না। এই বিষয়ে সরকার আগ্রহী ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে পল্লী চিকিৎসক তৈরির মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির খসড়া জাতীয় সংসদে অনুমোদিন হয়েছে। পাশাপাশি এ পর্যন্ত ১১ হাজার ২৬২টি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। সাড়ে ১৩ হাজার সিএইচসিপি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক পুরোপুরি চালু করা প্রয়োজন। কারণ দেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পল্লী চিকিৎসক ও কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা ব্যাপক।
×